সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র কাট্টলী সমুদ্র সৈকত by এমএ কাউসার

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পর কাট্টলী সমুদ্র সৈকত এখন বিনোদনের স্থান হিসেবে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট নিউমার্কেট এলাকা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। কিন্তু শহরের যানজটের কারণে পর্র্যটকরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যেতে অনেকটা বিড়ম্বনার শিকার হন। ফলে পর্যটকরা এখন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের চেয়ে কাট্টলী সমুদ্র সৈকতে অবসর সময় কাটানোর জন্য পছন্দের স্থান হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। কাট্টলী সমুদ্র সৈকত এক সময় তেমন কেউ না চিনলেও বর্তমানে প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। অপার সম্ভাবনাময় চট্টগ্রামের কাট্টলী সমুদ্র সৈকত এখন পর্যটকদের পছন্দের স্থান হিসেবে বহুল পরিচিত। পতেঙ্গা, বন্দর, হালিশহর, পাহাড়তলী ও আকবর শাহ থানাকেন্দ্রিক প্রায় ২০ কিলোমিটার এ সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় অংশ পতেঙ্গা থানা এলাকায়। তবে পতেঙ্গার অংশটুকু পরিপাটি হলেও অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে কাট্টলী সমুদ্র সৈকতের হালিশহর ও পাহাড়তলি থানার উপকূলীয় অংশটুকু। পাঁচ থানার প্রায় ২০ কিলোমিটার উপকূলীয় সীমান্ত এলাকায় পুলিশের নজরদারি তেমন একটা চোখে পড়ে না বলে নিরাপত্তাহীনতায় থাকে কাট্টলী সমুদ্র সৈকতে আগত পর্যটকরা। কাট্টলী সমুদ্র সৈকতে প্রতি বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহাসিক বারুণী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম হয়। এছাড়া সপ্তাহের প্রতিটি ছুটির দিনে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায় এ সমুদ্র সৈকতে। সমুদ্র সৈকতের প্রধান আকর্ষণ পড়ন্ত বিকালে সূর্যাস্ত দেখা। অথচ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারি না থাকায় এ পর্যটন কেন্দ্রে খুন, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। এসব কারণে আতংকের মধ্যে থাকে আগত পর্যটকরা। হালিশহর ও পাহাড়তলি থানা সূত্রে জানা যায়, কাট্টলী সমুদ্র সৈকত পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের মালামাল ছিনতাই, খুনসহ নানা অপরাধে হালিশহর ও পাহাড়তলি থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। পতেঙ্গা সৈকতে পর্যটকদের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না সাপ্তাহিক এবং সরকারি বন্ধের দিনগুলোতে। সন্ধ্যার পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে সৈকত এলাকা ছেড়ে এলেও ভিড় জমে কর্ণফুলী মোহনাকেন্দ্রিক নেভাল ভিআইপি সড়কে। একই সড়কে রয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বাটারফ্লাই পার্ক। একসঙ্গে অনেক বিনোদন স্পট থাকায় অতিরিক্ত যানজটের কারণে পর্যটকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হারালেও কাট্টলী সমুদ্র সৈকত এখনও প্রকৃতির সাজে সজ্জিত। কিন্তু সরকারি পদক্ষেপের অভাবে সমুদ্র উপকূলীয় এ এলাকাটি অবহেলিত হয়ে রয়েছে। সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কাট্টলী সমুদ্র সৈকত হতে পারে পর্যটন শিল্পের নতুন সংযোজন। এদিকে কাট্টলী ও হালিশহর ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, কাট্টলী সমুদ্র সৈকতের বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রায় ৩০০ একর সরকারি খাস জমি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা বিভিন্নভাবে অবৈধ দখলদারদের দখলে। সম্ভাবনার এ দ্বারটি পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা গেলে পর্যটকদের ভিড় যেমন বাড়বে তেমনি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যবসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর এতে একদিকে যেমন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে অপরদিকে এ সমুদ্র সৈকতের আশপাশের এলাকায় ঘটবে ব্যাপক উন্নয়ন। সরকারের কোষাগারে জমা পড়বে প্রচুর রাজস্ব। সমৃদ্ধ হবে দেশ। এ ব্যাপারে ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোরশেদ আকতার চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, কাট্টলী সমুদ্র সৈকতকে চট্টগ্রামের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় বিনোদন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা আমার দীর্ঘ দিনের ইচ্ছা। আশা করছি শিগগিরই কাট্টলী সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের আকর্ষণীয় বিনোদন স্পটগুলোর মধ্যে একটি হবে।

No comments

Powered by Blogger.