৫ই জুন পর্যন্ত আম পাড়া ও বিক্রি নিষিদ্ধ by আসলাম-উদ-দৌলা

আমের শহরখ্যাত রাজশাহীতে যে দিকেই চোখ যায় শুধু আমের সমাহার। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা আম। আর কয়েক সপ্তাহ পরই এসব আম  বাজারে উঠবে। সামনের জুন-জুলাই আমের ভরা মওসুম। ইতিমধ্যে আড়তগুলোতে আগাম বুকিং নেয়া শুরু হয়েছে। সে সঙ্গে মুনাফালোভী অসাধু বিক্রেতারা অধিক মুনাফার আশায় অপরিপক্ব আম বিক্রি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। গত মওসুমে অসাধু ব্যবসায়ীদের দাপটে প্রকৃত আম ব্যাবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। তবে এবার কাঁচা আম পাড়া ও বিক্রি ঠেকাতে প্রশাসন নজরদারি করছে। এর মধ্যেই জেলার আমের বাজারখ্যাত চারঘাট ও বাঘায় ৫ই জুন পর্যন্ত আমপাড়া ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সূত্র মতে, গত মওসুমের শুরুতেই রাজশাহীর চারঘাট-বাঘা এলাকায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ব আম পেড়ে তাতে কেমিক্যাল ও ফরমালিন দিতে শুরু করে। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক থেকে আম নামিয়ে তা ধ্বংস করে প্রশাসন। এছাড়া রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অসাধু আম ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এবার যেন সে রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন আগাম ব্যবস্থা নিয়েছে।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী র্কমর্কতা (ইউএনও) বাদল চন্দ্র হালদার বলেন, কেমিক্যাল-ফরমালিনযুক্ত আম মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। জেলা প্রশাসন থেকে এ অসাধু তৎপরতা ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাঠ পর্যায়ে কড়া নজরদারি রাখাসহ স্থানীয় আম ব্যবসায়ীদের আগামী ৫ই জুনের আগ পর্যন্ত আমপাড়া ও বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতে প্রত্যেকের কাছে স্বাস্থ্যসম্মত আম পৌঁছাতে পারে।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহীর আম বাগানগুলোতে গাছে গাছে বাহারি জাতের আম দেশের কোটি কোটি মানুষের রসনা মেটাতে প্রস্তুত হচ্ছে। পথের পাশে চোখ মেললেই থোকায় থোকায় সবুজ আম নজর কাড়বে। এমন দৃশ্য বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জজুড়ে।
গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, অম্রপালি, আশ্বিনা, খিরসা, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা, মোহনভোগ আর রানীপছন্দ আম। যেন রাজশাহীতে শুরু হয়েছে ‘আম উৎসবের’ প্রস্তুতি। চলতি মাসের শেষের দিকে আগাম জাতের গুটি আমগুলো পাকতে শুরু করবে। জুনের প্রথম দিকে গোপালভোগ, শেষের দিকে ক্ষিরসাপাত ও জুলাই মাসের প্রথম দিকে ফসলি ও সবশেষের দিকে পাওয়া যাবে আশ্বিনা আম। জুন-জুলাই মাস থাকবে আমের ভরা মওসুম। তাইতো এখন থেকেই আমচাষিদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে বহুগুণে। ভাল ফলন তুলতে বেশিরভাগ সময় কাটছে তাদের গাছ পরিচর্যায়।
পবা উপজেলার নওহাটা গ্রামের আম চাষি রুবেল হোসেন বলেন, তার ৮ বিঘার বাগানে ভাল আম এসেছে। কয়েক দফার ঝড়ে কিছুটা ক্ষতি হলেও ভাল ফলনের আশা করছেন তিনি। পুঠিয়ার তৌয়ব আলী বলেন, প্রতিটি বাগানেই প্রত্যাশিত আম এসেছে। যে পরিমাণ আম এসেছে তা থেকে ভাল উৎপাদন পেতে বাগানের পরিচর্যা চলছে এখন।
এদিকে বানেশ্বর মেসার্স মদিনা ট্রেডার্সের মালিক আবদুল জব্বার বলেন, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা ও চারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার আম আসে বানেশ্বর আমের আড়তগুলোতে। এ কারণে বানেশ্বরে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা আম কিনতে আসেন। এখান থেকে আম কিনলে পাইকারদের পরিবহন খরচ অনেক কম হয়। তাই পাইকাররা বানেশ্বর আমের আড়তগুলোতে আগাম বুকিং দিতে শুরু করেছেন।
কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, আমের রাজধানীখ্যাত রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় আড়াইশ’ জাতের আম উৎপন্ন হয়। তবে রাজশাহীর ফজলি, ল্যাংড়া, দুধস্বর, গোপালভোগ, মোহনভোগ, ক্ষিরসাপাত, রানীপছন্দ, বারি-৩ (আম্রপালি) ও আশ্বিনা জাতের আম দেশসেরা। এছাড়াও রয়েছে গুটি জাতের বেশকিছু আম। রাজশাহীর প্রায় এলাকাতেই আমের আবাদ হয়। এর মধ্যে বাঘা, চারঘাট, বাগমারা, পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলায় আবাদের পরিমাণ বেশি। এবার রাজশাহী জেলার ১৬ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। সেখান থেকে দুই লাখ ৫৭ হাজার ৩১  মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন মানবজমিনকে জানান, রাজশাহীর আমের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। সারা দেশে রয়েছে এ অঞ্চলের আমের ব্যাপক চাহিদা। ফলে দিন দিন বাড়ছে আম চাষ। গত বছরের তুলনায় এবার কমপক্ষে দুই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আম চাষ হয়েছে। এবার দেশের সবাই রাজশাহীর আমের স্বাদ নিতে পারবেন।
রাজশাহী কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হযরত আলী বলেন, চলতি মওসুমে রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় আম গাছগুলোর শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মুকুলিত হয়েছিল। গাছে গাছে পর্যাপ্ত গুটিও এসেছিল। তবে এপ্রিলের শুরুতে কয়েক দফা কাল বৈশাখী ঝড়ে কিছুটা ক্ষতি হলেও এখন যে পরিমাণ আম গাছে ঝুলছে তাতে বাম্পার ফলন আশা করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.