ঢাকায় চলন্ত মাইক্রোবাসে গারো তরুণীকে গণধর্ষণ, আলামত মিলেছে

কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হলেন ২২ বছর বয়সী গারো জাতিগোষ্ঠীর এক তরুণী। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ভাটারা থানার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী ওই তরুণী রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তার উত্তরার বাসায় যাওয়ার জন্য রাস্তার পাশে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। ওই সময় সেখানে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দরজা খুলে দু’জন যুবক নেমে এসে মেয়েটিকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। প্রথমেই গামছা দিয়ে তার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। তারপর চলে পালাক্রমে ধর্ষণ। এরপর ওই তরুণীকে উত্তরায় তার বাসার কাছাকাছি ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ধর্ষকরা। এ ঘটনায় শুক্রবার অজ্ঞাতনামা পাঁচজনের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় মামলা দায়ের করেছেন ধর্ষিতা তরুণী। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ধর্ষিত এ তরুণীর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি যুগান্তরকে জানান, মাইক্রোবাসের চালক বাদে তিন যুবক তাকে ধর্ষণ করেছে। ওই সময় তার চোখ-মুখ বাঁধা থাকায় তিনি কাউকে চিনতে পারেননি। তিনি আরও জানান, তিনি উত্তরার জসিমউদ্দিন রোডের দলিপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাতে কর্মস্থল থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য কুড়িল বিশ্বরোডে সিনহা সিএনজি মোটর্সের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় ওই মাইক্রোবাসটি এসে তার সামনে থামে। দু’জন যুবক নেমে এসে তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। পরে গামছা দিয়ে তার পুরো মুখ বেঁধে ফেলে। চলন্ত গাড়িতে তিন যুবক তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তিনি বাধা দেয়ার চেষ্টা চালান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যুবকদের একজন তাকে এই বলে শাসায় যে, বেশি ধস্তাধস্তি করলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তিনি জানান, ধর্ষণের পর যুবকরা তার কাছ থেকে বাসার এলাকা জেনে নিয়ে রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে সেখানে ফেলে রেখে চলে যায়। যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যায়, এ ঘটনা নিয়ে যাতে থানা-পুলিশ না করে।
ভাটারা থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস কুমার এ ঘটনা সম্পর্কে শুক্রবার যুগান্তরকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনায় ২২ বছর বয়সী এ তরুণী অজ্ঞাতনামা পাঁচজনের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে পুলিশের টিম কাজ শুরু করেছে।
ভাটারা থানা সূত্রে আরও জানা গেছে, কয়েকজন যুবক মিলে এই তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। কিছুক্ষণ পর যুবকদের একজন নেমে যায়। ওই যুবকই সবার আগে তাকে ধর্ষণ করে বলে ধর্ষিত তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, মাইক্রোবাসটি বিভিন্ন পথে ধীরগতিতে চলতে থাকে। ভেতরে তার ওপর চলতে থাকে পাশবিক অত্যাচার। চোখ বাঁধা থাকায় তিনি বুঝতে পারেননি গাড়িটি কোন কোন পথে গেছে। তবে ধারণা করছেন, তাকে আটকে রাখা অবস্থায় গাড়িটি দু’বার ফ্লাইওভার ব্যবহার করেছে।
মাইক্রোবাসে তরুণীকে গণধর্ষণের আলামত মিলেছে
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় চলন্ত মাইক্রোবাসে গারো তরুণীকে গণধর্ষণের প্রাথমিক আলামত পেয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হবে। ওই তরুণীকে ঢামেকের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ওই তরুণীকে ঢামেক হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়।
এদিকে গারো এই তরুণীর ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের গুলশাণ জোনের ডিসি জানিয়েছেন, ধর্ষিত ওই তরুণী এক ধর্ষকের নাম বলেছেন এবং গাড়িতে থাকা একজনের চেহারার বর্ণনা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ যুবক বৃহস্পতিবার রাতে ওই তরুণীকে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণ করে। পরদিন শুক্রবার ওই তরুণী নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করে ভাটারা থানায় মামলা করেন। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ভাটারা থানা থেকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পাঠানো হয়।
থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তাপস কুমার ওঝা বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ওই তরুণী। এ সময় পাঁচ যুবক তার মুখ চেপে ধরে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে গাড়িতেই ধর্ষণ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডের মাথায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.