সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী আসছেন নতুন ৬ চুক্তি সই আজ

সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে আজ ঢাকা আসছেন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদং। বিকাল ৫টা নাগাদ তাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবেন। চীনের রাজনীতি ও সরকারে অত্যন্ত প্রভাবশালী লিউ ইয়ানদং এখানে তিন দিন অবস্থান করবেন। সফরের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে। গণভবনে আজ সন্ধ্যায় দুই নেতার বৈঠকের ঢাকা-বেইজিং সহযোগিতায় বিভিন্ন বিষয়ে নতুন আরও ৪-৫টি সমঝোতা সই হতে পারে। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি রয়েছে। ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন দেশের এক কূটনীতিকদের মতে, চীনের ওই প্রতিনিধির সফরে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান উন্নয়ন ইস্যুগুলো নিয়ে চলমান আলোচনা জোর পাবে। গত জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরে বাংলাদেশকে সহযোগিতায় চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব যে অঙ্গীকার করেছিল, যেসব চুক্তি, সমঝোতা, সম্মতিপত্র সই হয়েছিল উপ-প্রধানমন্ত্রীর সফরে সেসবের বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন করে দেশটির সহযোগিতা পাওয়ার দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ ঘটবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবিত সফরের অল্প আগে চীনের উচ্চপর্যায়ের ওই প্রতিনিধির সফর নিয়ে ঢাকার কর্মকর্তারা যেমন ব্যাপক আশাবদী, তেমনি খানিকটা সতর্কও। তবে পেশাদাররা বলছেন, বাংলাদেশ বরাবরই দিল্লি ও বেইজিংয়ের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। পররাষ্ট্র দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চীনের জ্যেষ্ঠ ওই রাজনীতিকের সফরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। সরকার প্রধানের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে তার দেখা হওয়ার বিষয়টি আয়োজন রয়েছে। তার সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি নৈশভোজের আয়োজন করছেন। এত গেল সরকারি কর্মসূচি। বিরোধী রাজনীতিকদের সঙ্গেও তার মতবিনিময় হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে যাবেন তিনি। সেখানে তরুণদের উদ্দেশে তার বক্তৃতা করার কথা। অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে খ্যাতিমান ওই নারী রাজনীতিককে সম্মাননাও জানানোর আয়োজন চলছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের ৬ মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিং সফর করেন। গত জুনে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অফ পিপলসে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দুটি চুক্তি এবং একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়; স্বাক্ষর হয় দুটি বিনিময়পত্রও। সেখানে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতাসংক্রান্ত চুক্তি, পটুয়াখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে চুক্তি, বাংলাদেশে চীনের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে সমঝোতা স্মারক। সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশ প্রস্তাবিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতা দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন দেশটির সরকার প্রধান। তবে বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনা সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের একটি আলোচনা ছিল। সেটি ওই দিনও হয়নি। অবশ্য বর্তমানে নতুন করে প্রকল্পটি সাজানোর চিস্তা করছে বাংলাদেশ। উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদংয়ের ঢাকা সফরে বিস্তৃত আলোচনা না হলেও একটি ফলোআপ হতে পারে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.