‘গরু ধরাছোঁয়ার বাইরে’ by কমল জোহা খান

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গরুর মাংসের দোকানে ব্যস্ত
এক বিক্রেতা্ । ১৭এপ্রিল, এর ছবি । ছবি: জাহিদুল করিম
বড় আকারের গরুর রান কাটছিলেন মাংস বিক্রেতা মো. বিপ্লব। সামনে গোমড়ামুখে দাঁড়িয়ে ক্রেতা আতিকুর রহমান। অসহায়ভাবে তিনি বলে ওঠেন, ‘মাছের দিকে তো তাকানোই যাচ্ছে না। এখন মাংসও প্রায় ৪০০ টাকা কেজি!’
তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই বিপ্লব চটপট বলেন, ‘ভাই, কি আর করমু, ইন্ডিয়া থাইক্কা গরু আইতাছে না। ৩৮০ টাকার নিচে এক কেজি গোস (মাংস) বেচতে পারুম না।’ তিনি বলে ওঠেন, ‘ভাই, গরু ধরাছোঁয়ার বাইরে। কয়দিন পর ৪০০ টাকাও গোস পাইবেন না।’
আজ শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের মাংস বাজারে গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। শুধু মিরপুর নয়, সারা দেশেই গরুর মাংসের দাম হু হু করে বাড়ছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, তিন মাসের ব্যবধানে এক কেজি গরুর মাংসের দাম বেড়ে গেছে ১৫০ টাকারও বেশি।
বিক্রেতারা প্রথমে বলেছিলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে দাম বাড়ছে মাংসের। এখন তাঁরা বলছেন, ‘ভারত থেকে গরু আসছে না।’
পয়লা বৈশাখের দিন ইলিশ মাছের দিকে হাত বাড়াতে সাহস পাননি মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ। বিকল্প হিসেবে গিয়েছিলেন মাংসের বাজারে। মুখ গোমড়া করে ফিরে আসতে হয়েছে তাঁদের। সেদিন এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৪০০ টাকা।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলমের ভাষ্য, ‘তিন মাসে দেশি গরু দিয়া বাজার চলতাছে। ইন্ডিয়ায় বর্ডার বন্ধ কইরা দিছে। গরু আনতে গেলে গুলি করে। সিটি করপোরেশন, প্রশাসন সবাইরে কইতাছি কিছু করনের লইগ্যা। কিন্তু কেউ কিছু কয় না।’ তিনি বলেন, এক সপ্তাহের জন্য সীমান্ত থেকে গরু আনার অনুমতি দিলে বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মাসুদ আহসান বলেন, ‘আমরা মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সীমান্ত দিয়ে কিংবা অন্য কীভাবে গরু আসবে, এ ব্যাপারে আমরা কিছু করতে পারব না। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি জানাব।’
গরুর দাম বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়েছে খাসি ও মুরগির মাংসে। রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে জানা গেছে, খাসির মাংস ৬০০ টাকার নিচে নয়। ব্রয়লার মুরগির মাংস একলাফে বেড়েছে ৪০ টাকা। মার্চ মাসের প্রথম দিকে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৩০ টাকা। আজ সকালে এর দাম উঠেছে ১৭০ টাকা। দেশি মুরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির দাম ২৪০ টাকা থেকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা।
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের মুরগি-বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, ‘অবরোধের সময় বিয়া-শাদীর মতো অনুষ্ঠান কম ছিল। তহন মুরগির দামও কম ছিল। অহন অবরোধ নাই। তাই অনুষ্ঠান বেশি হইতাছে, মুরগির দামও বাড়ছে।’
শুকনা মৌসুমের অজুহাতে মাছের দামও যেন টগবগ করছে। বলা হচ্ছে, খালবিল শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এক কেজি কাচকি মাছ সাড়ে ৩০০ টাকা। মাঝারি আকারের রুই-কাতল মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বড় মাগুর মাছ এক হাজার ২০০ টাকা। ছোট শিং ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ইলিশের দাম শুনলে ক্রেতাদের প্রাণবায়ু যায়-আসে। রাজধানীর সুপারশপগুলোতে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম আড়াই হাজার টাকা হাঁকা হচ্ছে। বাজারে ৫০০ গ্রাম ওজনের চারটি ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে এক হাজার ৬০০ টাকা।

No comments

Powered by Blogger.