ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থীদের ১৩ অঙ্গীকার

হাতে হাত রেখে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থীরা জনতার সামনে ১৩টি অঙ্গীকার করেছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা, নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত, কার্যকর ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ঢাকাকে যানজটমুক্ত, মাদকমুক্ত, ভেজাল খাবারমুক্ত একটি আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত করারও অঙ্গীকার করেন তারা। গতকাল বিকালে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-এর যৌথ উদ্যোগে জনগণের মুখোমুখি হন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রপ্রার্থীরা। তারা উপস্থিত ভোটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং নিজ নিজ বক্তব্যে সিটি করপোরেশনকে ঘিরে নিজেদের প্রত্যাশা ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। মেয়রপ্রার্থীদের অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে নির্বাচনে টাকার প্রভাব খাটানো ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা, সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত, কার্যকর ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, সকল নির্বাচিত কাউন্সিলরকে নিয়ে যৌথ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করা, সম্পদ বৃদ্ধিসহ স্থানীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা, খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা প্রভৃতি মৌলিক মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, সকল কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি পরিহার করা, দখলকৃত ভূমিসহ সকল ধরনের জলাশয় দখলমুক্ত করা এবং নির্বাচিত হলে প্রতিবছর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদ, আয়-ব্যয় ও দায়-দেনার হিসাব প্রকাশ করার ঘোষণা দেন তারা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকা নানা সমস্যায় জর্জরিত ও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবুও আমরা প্রিয়জনদের টানে ঢাকাতেই থাকি। এরকম অসাম্প্রদায়িক নগরী পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন তিনি। হকারদের কিভাবে পুনর্বাসন করবেন- একজন ভোটারের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হকারদের জন্য পথচারীদের সমস্যা হয়। কিন্তু তাদেরও প্রয়োজন আছে। তাই মেয়র নির্বাচিত হলে পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে হকারদের সমস্যার সমাধান করব। ঢাকা দক্ষিণের আরেক মেয়রপ্রার্থী ও সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি বলেন, প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্কট রয়েছে। এই সঙ্কট দূর করতে হবে। আমি নির্বাচিত হলে নগরবাসীর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করবো। নাগরিকরা সরাসরি মেয়রের কক্ষে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারবেন। বাজেট সমস্যাসহ সকল সমস্যা সমাধানে উন্নত দেশের নগরগুলো থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবো। একজন ভোটারের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব ও বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহের দায়িত্ব মেয়রদের। কিভাবে মোবাইল কোর্টের সংখ্যা বাড়িয়ে এটা নিশ্চিত করতে হয় তা আমার জানা আছে। অনুষ্ঠানে মেয়রপ্রার্থী এস এম আকরাম নির্বাচিত হলে ভাসমান নাগরিকদের ফ্ল্যাট বানিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করেন। সিপিবিসমর্থিত প্রার্থী বজলুর রশিদ ফিরোজ মেয়র নির্বাচিত হলে নগর কাউন্সিল গঠন করবেন বলে জানান। মেয়র প্রার্থী শফিউল্লাহ চৌধুরী নির্দলীয় হওয়ার মাধ্যমে টেন্ডার সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার করেন। জাসদ সমর্থিত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ঢাকার সব বাড়িতে সিসিটিভি ও ওয়াইফাই সংযোগের ওয়াদা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম’ (নাসফ)-এর সভাপতি মু. হাফিজুর রহমান ময়না। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জনগণ হলো দেশের মালিক। তাই নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-শুনে-বুঝে ভোট দেয়া। আজকের এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা নাগরিকরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্র্থীদের যাচাই-বাছাই করে নিতে চাই। আপনারা জানেন, ঢাকা শহর বসবাসের দিক থেকে নিচের দিকে রয়েছে। আমরা চাই এমন একজন মেয়র, যিনি ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করে তুলবেন। সুজনের তৈরি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করায় মেয়রপ্রার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন আশা করি তারা নির্বাচিত হলে এ অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করবেন। উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোন দল না দেখে প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে ভোট দিতে হবে। তাই ভোট দেয়ার আগে প্রার্থীদের আয়, পেশা, সম্পদ, মামলা ইত্যাদি জেনে নিতে হবে। অনুষ্ঠানের শেষে ভোট প্রদানকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীর স্বপক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অঙ্গীকার করেন উপস্থিত ভোটারগণ। নাসফের সভাপতি মু. হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে, সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার পাঁচ শতাধিক ভোটার উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.