ইট বেঁধে স্কুলছাত্রের লাশ ফেলা হয় নদীতে

নিখোঁজের চার দিন পর মেধাবী স্কুলছাত্র সাজেদুর রহমান সাহিদের (১১) বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় অভয়নগর উপজেলার চোমরডাঙ্গা এলাকায় মুক্তেশ্বরী নদীতে বস্তাবন্দি লাশ ভাসতে দেখে পথচারীরা। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। নিহত সাহিদ মনিরামপুর উপজেলার পাঁচাকড়ি গ্রামের সাইফুর রহমানের ছেলে ও নেহালপুর এডাস আইডিয়াল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। তবে সন্দেহের তীর চাচাতো ভাইয়ের পরিবারের দিকে।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। হত্যার বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার স্থানীয় বালিদহ পাঁচাকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার : নিহত সাহিদের পিতা সাইফুর রহমান জানান, ১১ এপ্রিল সন্ধ্যার আগে স্থানীয় ট্যাকারঘাট ব্রিজের পাশ থেকে তার ছেলে সাজেদুর রহমান সাহিদ নিখোঁজ হয়। ওই দিন মনিরামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। দু’দিনেও কোনো সন্ধান না পেয়ে পরিবারের সদস্য, শিক্ষক ও এলাকাবাসী বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। ১৩ এপ্রিল যশোর র‌্যাব ক্যাম্পে অভিযোগ দেয়া হয়। কিন্তু তারাও সন্ধান মেলাতে পারেনি। র‌্যাব পুলিশের পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়। কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। বুধবার সন্ধ্যার দিকে অভয়নগর উপজেলার চোমরডাঙ্গা এলাকায় মুক্তেশ্বরী নদীতে একটি বস্তা ভেসে যেতে দেখেন পথচারীরা। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় তাদের সন্দেহ হয়। তারা স্থানীয় ভবদহ পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ নদী থেকে উত্তোলন করে। এরপর আমরা গিয়ে লাশটি শনাক্ত করি। লাশের কোমরে ও বাম হাতের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তাকে হত্যা করে বস্তাবন্দি করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। তিনি জানান, বস্তার মুখে রশিতে দুটি ইট বাধা রয়েছে। দুটি ইট মনিরামপুরের সুন্দলী এলাকার দিপ্র বিকসের তৈরি।
অভয়নগর থানার ভবদহ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আসাদ যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে বুধবার সন্ধ্যায় লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বস্তাবন্দি লাশের সঙ্গে দুটি ইট পাওয়া গেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার সকালে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিকালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
হুমকি ও ফ্লেক্সিলোড দাবি করা মোবাইল নম্বরটি সাইফুরের চাচাতো ভাইয়ের : কী কারণে কেন স্কুলছাত্রকে হত্যা করা হল তা নিয়ে এলাকায় আলোচনার ঝড় বইছে। এলাকাবাসী এ বিষয়ে মুখ খুলছে না। তবে নিহতের পরিবার ও অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সাইফুর রহমানের চাচাতো ভাই আসাদ গাজীর সঙ্গে বিরোধ ছিল ঘেরের হারি নিয়ে। কয়েক মাস আগে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়। সেই সময় আসাদ গাজী সাইফুরকে দেখে নেয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন। ছেলে নিখোঁজের পর থেকে তার সন্দেহ চাচাতো ভাইয়ের দিকেই। রোববার একটি বাংলালিংক ও অপর একটি রবি নম্বর থেকে ফোন করে সাইফুর রহমানকে হুমকি দেয়া হয়। একই সঙ্গে দুই হাজার টাকাও দাবি করা হয়। বাংলালিংক ০১৯১০-১৫২৮০৮ নম্বরের গ্রামের একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান (যার নম্বর ০১৭২০৩৭৬৫৮৬) থেকে দুই হাজার টাকা পাঠান সাইফুর রহমান। এছাড়াও ০১৮৬৭-৭০৯৬৯৬ নম্বর থেকে হুমকি দেয়া হয়। ওই নম্বরের মোবাইল ফোন সাইফুর রহমানের চাচাতো ভাই আসাদ গাজীর ছেলে আলামিনের ব্যবহৃত বলে জানা গেছে।
শোকের মাতম গ্রামজুড়ে : দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সাইফুর রহমান ও তাহেরা দম্পতির সুখের সংসার। বড় ছেলে সাজেদুর রহমান সাহিদ পঞ্চম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। তাকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তারা দু’জনই। তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা কারও জানা নেই। গ্রামের নারী-পুরুষ শিশু সবাই সাহিদের জন্য কাঁদছে। খুনিদের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বালিদহ পাঁচকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অভিভাবকের অংশগ্রহণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগানসংবলিত প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন।
নেহালপুর এডাস আইডিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ আলমগীর সাজ্জাদ বলেন, সাজেদুর রহমান সাহিদ পঞ্চম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। আমার স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে দশজন বৃত্তি পাওয়ার মতো তার মধ্যে সাহিদ ছিল অন্যতম।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.