কুমিল্লা সীমান্তে বাংলাদেশীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ভারতীয়রা : লাশ হস্তান্তর by সহিদ উল্লাহ মিয়াজী

কুমিল্লার সদর উপজেলার বৌয়ারা বাজারের একবারিয়ায় ভারতীয় সীমান্তের বরেদেপা গ্রামে পিটুনি দিয়ে এক বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে ভারতীয়রা। এসময় আরো তিনজনকে আহত করেছে তারা। পিটুনিতে নিহত ওই ব্যক্তির নাম নুরুল ইসলাম (৪৫)। তার বাড়ি কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম না জানা গেলেও জানা গেছে তার মায়ের নাম করুনা বেগম। রোববার বিকাল ৪টায় কুমিল্লা সদরের বিবির বাজারের কটক বাজার সিমান্তে বিজিবি-বিএসএফ’র কোম্পানি কমান্ডার পর্য়য়ের পতাকা বৈঠকে নুরুল ইসলামের লাশ হস্তান্তর করা হয়। তবে আহতদেরকে ফেরত দেয়া হয়নি। আহত অপর দুই জনের মধ্যে রাজাপাড়ার আবদুল হাকিমের ছেলে মজিদ হোসেন ভারতের গোবিন্দ ভল্লব হাসপাতালে এবং অলিপুরের আবু তাহের সোনামুড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আহতদের কেন মেরেছে এ খবর নিতে গিয়ে পিটুনিতে আহত শহরের সুজানগরের নুর জাহানকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দিয়েছে তারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার দিবাগত মধ্য রাতে কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের করুনা বেগমের ছেলে নুরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে মজিদ হোসেনকে ভারতীয় সীমান্তের বলেরদেপা গ্রামের মানুষ গনপিটুনী দেয়। এ সময় তাদের বেধড়ক পিটুনিতে গুরুতর আহত দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে রাত আড়াইটার দিকে নুরুল ইসলামের মৃত্যু হয়। মজিদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে গোবিন্দ ভল্লব হাসপাতালে নেয়া হয়।
অলিপুর গ্রামের আবু তাহেরকে বলের দেপা গ্রামের জঙ্গল থেকে ধরে পিটুনি দেয়া হয় এ খবর শুনে শহরের সুজানগরের নুরজাহান ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও পিটুনি দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। রবিবার সকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কে নিশ্চিত করেছে। ১০ বিজিবির কমান্ডার লে. কর্ণেল মোঃ মোখলেসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।
এক হাতে তালি বাজে না: বিজিবির প্রধান
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর
জেনারেল আজিজ আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে একের পর এক বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন, এক হাতে তালি বাজে না। বাংলাদেশের লোকজন যদি সীমান্ত পার হয়ে না যায়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। বিজিবি দিনাজপুর সেক্টরের শহীদ কর্নেল গুলজার মিলনায়তনে আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিজিবি প্রধান বলেন, ‘বিএসএফ আন্তর্জাতিক আইন মানছে না। আমরা চাই না সীমান্তে একটিও হত্যার ঘটনা ঘটুক। কিন্তু মনে রাখতে হবে এক হাতে তালি বাজে না। আমাদের লোকজন যদি না যায়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে না।’
সীমান্তে চোরাচালান দমনে সৈনিকদের দুর্বলতা প্রতিরোধ এবং সৈনিকদের খোঁজ-খবর নিতে ও তাঁদের কথা শুনতে উত্তরাঞ্চল সফর করেছেন বলে বিজিবির প্রধান সংবাদ সম্মেলনে জানান।
বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে অস্থিরতা চলছে। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য দুই দেশের সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব এবং মহাপরিচালক পর্যায়ের প্রতিটি বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। এ ধরনের ঘটনা পরপরই বিজিবির পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।
মাদক প্রতিরোধে থাইল্যান্ডের মতো বাংলাদেশেও কঠোর আইন করার সময় এসেছে মন্তব্য করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আইন হলে মাদক ব্যবসায়ী বা চোরাকারবারিদের বিজিবি নিজেরাই কঠোর শাস্তি দিতে পারবে। তিনি বলেন, সীমান্ত থেকে মাদকসহ চোরাচালানি এবং ব্যবসায়ীদের হাতেনাতে ধরে বিজিবি সদস্যরা থানায় মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তারা জামিন পেয়ে আরও বেশি উৎসাহ নিয়ে মাদক ব্যবসায় নেমে পড়ে। তিনি বলেন, ঘর থেকে মাদক প্রতিরোধ করা দরকার। সর্ব পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। সীমান্ত এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে চোরাচালান নিরুৎসাহিত করতে বেশি করে সীমান্তহাট স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি রংপুর অঞ্চলের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান, দিনাজপুর বিজিবি সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুর রাজ্জাক তরফদার, ২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জামাল হোসেন, দিনাজপুর বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) মেজর এ এস এম রবিউল হাসান এবং ২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পরিচালক মেজর মো. আবদুল হান্নান খান উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.