কালো পতাকা, গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে খালেদার গতিরোধের চেষ্টাঃ কোন বাধাকে ভয় পাই না -খালেদা জিয়া

দ্বিতীয় দিনের মতো সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় নেমে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাধার মুখে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাস্তায় তার গাড়ি বহরের গতিরোধ ও গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কালো পতাকা প্রদর্শন করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বাধা পেলেও প্রায় পাঁচ ঘণ্টা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন খালেদা জিয়া। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন,  কোন বাধায় তিনি ভয় পান না। প্রচারে নেমে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বিকাল চারটায় গুলশানের বাসা থেকে বের হয়ে উত্তরা, কুড়িল বিশ্বরোড, শাহজাদপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন। তার গাড়িবহর গুলশান, বনানী, বিশ্ব রোড, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর হয়ে উত্তরা জসিম উদদীন মোড়, ১ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর সড়কে থামে। প্রচারণার  শুরুতেই ওই মোড়েই আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের সামনে কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এরপর পুলিশ তাদের সরিয়ে নেয়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ধীরে  ধীরে সামনে এগুতে থাকে। এরপর তিনি গাড়ি থেকে লন্ডন প্লাজায় প্রচারণা চালান। উত্তরার এসবি টাওয়ার, আমীর কমপ্লেক্স, রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দোকানে উত্তরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করে ভোট চান। এসবি টাওয়ারের এক নারী বিক্রয় কর্মীকে খালেদা জিয়া বলেন,‘তাবিথ আউয়ালকে আপনারা ভোট দেবেন। আমরা নতুন প্রজন্মের প্রার্থী দিয়েছি।’ জবাবে নারী বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘আমরা তাবিথ আউয়ালকে ভোট দেবো। কারণ আমরা পরিবর্তন চাই।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ রোববার বিকেলে
উত্তরায় তাবিথ আউয়ালের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান
এরপর খালেদা জিয়া এস আর টাওয়ারের সামনে যান। এখানে গাড়িতে উপস্থিত শত শত নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এসময় উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে দেখা যায়। সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে খালেদা জিয়া নর্থ টাওয়ারের নিচতলায় প্রচারণা চালান। সেখান থেকে সাড়ে ৬টার দিকে তার গাড়িবহর হাউজ বিল্ডিং মোড় দিয়ে ঘুরানোর সময় সেখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৬০/৭০ জন নেতাকর্মী কালো পতাকা হাতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার জিপের সামনে পুলিশের গাড়ির ওপর কালো পতাকাসহ লাঠি ছুড়ে মারে। এ সময় পুলিশ তৎপর হয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কর্মীরা পুলিশের গাড়ির সামনে এসে গতিরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে। ওই সময় কয়েক শ’  নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার গাড়ি ঘিরে এস্কট করে নানা স্লোগান দিয়ে নিরাপদে গাড়ি ঘুরিয়ে দেন। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সামনে ছিল একদল কর্মীর মোটর এস্কট। খালেদার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীদেরও এ সময়ে বেগ পেতে দেখা যায়। এরপর বিএনপির চেয়ারপারসনের গাড়িবহর ধীরগতিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এগিয়ে যায়। এ সময় রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনকে তিনি হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর খিলক্ষেত মোড়ে আসলে আওয়ামী লীগের গোটা পঞ্চাশেক নেতাকর্মী কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একই স্থানে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় তিনি কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভার হয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে প্রবেশ করেন। মিনিট দশেক মার্কেটের নিচ তলায় বেশ কয়েকটি দোকানে প্রচারণা চালান। ওই মার্কেট থেকে বের হয়ে এরপর তিনি শাহজাদপুর সুবাস্তু নজর ভ্যালি মার্কেটে প্রবেশ করেন। নিচ তলায় প্রচারণাকালে সিকদার অপটিক্সের বিক্রয়কর্মী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন না করলে তো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, জনগণসহ সবাই সেনাবাহিনী চায়। সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েন চাই। কারণ সেনাবাহিনী ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কিন্তু ভোটচুরি করবে বলে তারাই (আওয়ামী লীগ) সেনা মোতায়েন চায় না। এরপর মার্কেটের সামনে সাংবাদিকদের খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের বাধা সত্ত্বেও  নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যেখানেই যাচ্ছি বিপুল মানুষের সমাগম হচ্ছে। এই জনসমাগম দেখে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাকে বাধা দিচ্ছে। সন্ত্রাস করছে। তবে আমি কোন বাধাকে ভয় পাই না।  জনগণ আমার সঙ্গে আছে, আমি নির্ভয়ে তাদের কাছে যেতে চাই। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন সিটিতেই আমাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। এরপর খালেদা জিয়া উত্তর বাড্ডা হয়ে আমেরিকান দূতাবাস মোড় ঘুরে শাহজাদপুর, নর্দ্দা, বিশ্বরোড ফ্লাইওভার, বনানী, গুলশান-২ হয়ে রাত ৯টার দিকে বাসায় ফিরেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রচারণাকালে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা নেত্রী শিরিন সুলতানা, শ্যামা ওবায়েদ, সুলতানা রহমান প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.