ভয়ের শাসন by মঈন উদ্দিন খান

গণতন্ত্র এখন শিকলে বন্দী। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়েই কার্যত মুছে গেছে গণতন্ত্রের সব সংজ্ঞা। শৃঙ্খলিত সেই গণতন্ত্রকে বাধা হচ্ছে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে। ন্যায়বিচারের পথ হয়ে গেছে সঙ্কুচিত। বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে দেয়ায় ভয়ের খড়গ নেমে এসেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আটকে গেছে সম্প্রচার নীতিমালার বেড়াজালে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উপর্যুপরি প্রয়োগে বিরোধী দলগুলো কোণঠাসা। বেসরকারি সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এমন অবস্থায় জনমনে পরিবর্তন প্রত্যাশা দিন দিন জোরালো হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ‘ভয়ের শাসনে’ সব যেন তটস্থ, নিরুপায়। একটি দেশের সংসদ যতটা কার্যকর, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল, সেই দেশের গণতন্ত্রও ততটা কার্যকর নয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন পরিষদ বা সংসদ জনগণের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে নির্মোহভাবে নতুন আইন প্রণয়ন করবে। কিন্তু বাংলাদেশের আইন পরিষদ প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশে এমন এক নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠিত হয়েছে যেখানে ১৫৪ জন ভোট না পেয়েই নির্বাচিত হয়েছেন। অভিনব এই সংসদে বিরোধী দল বলতে কার্যত কিছুই নেই।
এটি ঠিক যে, আমাদের সংবিধান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন নিষেধ করেনি। কিন্তু অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টিকেও আমাদের সংবিধান অনুমোদন করেনি। যে দেশে কোনো স্কুলের অভিভাবক সমিতি বা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি আসনে বহু লোক দাঁড়িয়ে যান, সেখানে সংসদ নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে কেউ না দাঁড়ানোই একটি চরম অস্বাভাবিক পরিস্থিতির প্রমাণ। ১৯৯০ সালের পর কোনো নির্বাচনে একটি আসনেও এমন ঘটনা ঘটেনি, শুধু ১৯৯৬ সালে ৪৮টি আসনে এটি ঘটেছিল। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনকে তাই অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা হয়, একই বিবেচনায় ২০১৪ সালের নির্বাচনও বহুগুণ বেশি অস্বাভাবিক।
এমন একটি অস্বাভাবিক সংসদে নতুন আইন পাস হওয়া নিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই উত্তপ্ত হতে পারে রাজনীতির মাঠ। আর সেই আইন যদি হয় স্পর্শকাতর ও নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্র্ণ, তাহলে তো কথাই নেই।
ষোড়শ সংশোধনী, নানামুখী বিতর্ক
সম্প্রতি আইনজ্ঞ ও রাজনৈতিক অঙ্গনের ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও সংবিধানে ষোড়শ সংশোধোনী এনে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের আলোকে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ছিল।
নতুন এই সংশোধনীতে বলা হয়েছে
১. এই আইন সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) আইন, ২০১৪ নামে অভিহিত হবে।
২. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে নি¤œরূপ ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হবে, যথা : ‘৯৬। বিচারকদের পদের মেয়াদ। (১) এই অনুচ্ছেদের বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো বিচারক ৬৭ (সাতষট্টি) বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। (২) প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারণ করা যাবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
ষোড়শ সংশোধনীর ফলে মহাহিসাব নিরীক্ষক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্যসহ অন্যান্য সাংবিধানিক পদের ব্যক্তিদের অপসারণের ক্ষমতাও সংসদের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে।
এই সংশোধনী পাস হওয়ার আগে দেশের চার বিশিষ্ট আইনজীবী একটি বিবৃতিতে দিয়েছিলেন। এখানে তা উল্লেখ করা প্রণিধানযোগ্য।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ ওই বিবৃতিতে বলেছিলেন, বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে আনা হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে। তারা বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক ভিত্তি। সর্বোচ্চ আদালত অষ্টম সংশোধনী নিয়ে দেয়া যুগান্তকারী রায়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ বলে ঘোষণা দিয়েছিল। কোনো আলোচনা, বিতর্ক বা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতের অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন ছাড়াই হঠাৎ কেন সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব আনা হলো, তা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন।
তারা বলেন, ভারতের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এইচ এম সিরভাই অভিশংসন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি তার ‘দ্য পজিশন অব দ্য জুডিশিয়ারি আন্ডার দ্য কনস্টিটিউশন অব ইন্ডিয়া’ বইয়ে লিখেছেন, একজন বিচারপতিকে অপসারণের ক্ষমতা আইনপ্রণেতাদের ওপর ন্যস্ত হলে রাজনৈতিক দল ও রাজ্যের বিষয়টি তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
এইচ এম সিরভাই তার বইয়ে লিখেছেন, ইংল্যান্ডে ১৮৩০ সালের পর কোনো বিচারপতিকে অপসারণ করা হয়নি। দেশটিতে বিচারপতিদের অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো সমস্যাও সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে একজন বিচারককে অভিশংসন করার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। একজন বিচারকের আচরণ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করার পর্যাপ্ত সময় সিনেট পায় না। এ ধরনের তদন্তের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনা কাজ করে।
এই চার আইনজীবী বিচারপতিদের অভিশংসনসংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনের আগে জাতীয় ঐকমত্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ঐকমত্য ছাড়াই পাস হয়েছে ষোড়শ সংশোধনী।
একদলীয় শাসনব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার অভিলাষ থেকে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও একই মত ব্যক্ত করেছে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে কোনো দিকে ভ্রক্ষেপ না করেই পাস করা হয়েছে ষোড়শ সংশোধনী। এর ফলে বিচারকেরা কি স্বাধীনভাবেই কাজ করবেন, না ভয় ভীতিতে থাকবেন, তা আঁচ করা গেলেও অন্তর্নিহিত অবস্থা অদৃশ্যই থেকে যাবে!
সম্প্রচার নীতিমালা, খাঁচায় বন্দী গণমাধ্যম
গত ৬ আগস্ট জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়, যা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে এই নীতিমালার মাধ্যমে এমন বক্তব্য আসছে প্রতিনিয়ত। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন, টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন এ নীতিমালার কঠোর সমালোচনা করে আসছে।
নীতিমালায় সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হলেও কবে তা করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ নেই। বরং বলা হয়েছে, কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার সম্পর্কিত সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্টদের কাছে এটাই সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়।
সম্প্রচার নীতিমালার তৃতীয় অধ্যায়ে সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রকাশের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোনো আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে কোনো প্রকার অসঙ্গতিপূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক অসত্য তথ্য বা উপাত্ত দেয়া পরিহার করতে হবে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে উভয় পক্ষের যুক্তিসমূহ যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকতে হবে।’
নীতিমালায় আছে, কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ক্ষতি করে এমন কোনো তথ্য প্রচার করা যাবে না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে, এমন ধরনের সামরিক, বেসামরিক বা সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না। সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও নীতিমালা সমুন্নত রাখতে হবে। জনস্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো বিদ্রোহ, নৈরাজ্য ও হিংসাত্মক ঘটনা প্রদর্শন করা যাবে না। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আঘাত সৃষ্টি করতে পারে, এমন ধরনের অনুষ্ঠান বা বক্তব্যও প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ বা অবমাননাকর দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। অপরাধীদের দণ্ড দিতে পারেন, এমন সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার মতোও দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না।
নীতিমালায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অনুষ্ঠানে সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বা মতামত প্রচার করা যাবে না।’
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা বলেছেন, এই নীতিমালায় এমন কিছু ধারা রয়েছে, যার মাধ্যমে আইনের অপপ্রয়োগ হতে পারে। এর ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও করছেন তারা। আইনজ্ঞ শাহদীন মালিকের মতে, এ ধরনের ধারার ফলে আইনের অপপ্রয়োগ হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দলগুলো টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারকাজ চালিয়ে থাকে। সরাসরি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য প্রচার করা না গেলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশও প্রচার করা যাবে না এমন কথাও উঠে আসছে।
জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা তথ্য অধিকার আইন, সংবিধান, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে এ নীতি একুশ শতকের উপযোগী নয়। তাই নিবর্তনমূলক এ নীতি গ্রহণযোগ্য নয়।
টিআইবি সম্প্রচার কমিশনকে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে প্রশাসনের বা সরকারের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সদস্য, রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তা বা কর্মচারী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা যার অবসর গ্রহণের পর কমপক্ষে তিন বছর পার হয়নি, এমন ব্যক্তি যার স্বার্থের দ্বন্দ্বের সুযোগ রয়েছে; তাদের কমিশনের সদস্য না করার পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে অপসারণের বিধান রাখার কথা বলেছে সংগঠনটি।
টিআইবির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ছয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্রুত স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর সম্প্রচার কমিশন গঠন, সম্প্রচারসংক্রান্ত আইন প্রণয়নে অংশীজনদের পরামর্শ নেয়া; কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠনে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের সুযোগ বন্ধ করা, সম্প্রচার মাধ্যমের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে এসংক্রান্ত নীতিমালার বিষয়গুলোকে পুনর্বিবেচনা; সম্প্রচার খাতের সাথে সংযুক্ত নেতৃত্ব এবং কর্মীদের স্বনিয়ন্ত্রণব্যবস্থা উদ্ভাবনে নিজস্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি আচরণবিধি প্রণয়ন করে এর তদারকির ভার সম্প্রচার খাতের পেশাজীবী সংগঠনের ওপর দেয়া এবং বিজ্ঞাপন নীতিমালাকে সম্প্রচার নীতিমালা থেকে আলাদা করা।
বিএনপি মনে করে, এ নীতিমালার মাধ্যমে গণমাধ্যমকে সরকারি খাঁচায় বন্দী করার ফিকির হচ্ছে। আর সাংবাদিক সংগঠন বিএফইউজে ও ডিইউজের নেতারা বলেছেন, এ সম্প্রচার নীতিমালা সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করবে।
জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) বলেছে, এই নীতিমালা দিয়ে সম্প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা দেশকে স্বৈরশাসন ও সহিংসতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
চতুর্মুখী এরকম আপত্তি সত্ত্বেও সম্প্রচার নীতিমালার আইনি রূপ দিয়ে তা বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর।
এনজিও খাতে বিধিনিষেধ
‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন-২০১৪’ নিয়ে বেসরকারি সংগঠনগুলোর (এনজিও) মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। ১৫টি বেসরকারি সংগঠন বলছে, এই আইন এনজিও খাতের বিকাশের ক্ষেত্রে ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। আইনটি চূড়ান্ত করার আগে এ নিয়ে আরো আলোচনা করা দরকার।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), আইন ও সালিস কেন্দ্র, গণসাক্ষরতা অভিযান, নিজেরা করি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ব্লাস্ট, বেলা, এফএনবি, অ্যাডাব, এএলআরডি, প্রিপ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, অ্যাকশন এইড, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও ওয়াটার এইড মনে করে, প্রস্তাবিত আইনের ৩ (২) ধারা বলবৎ থাকলে দেশে ব্যক্তিপর্যায়ের দাতব্য ও স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। প্রবাসীরা সেবামূলক কার্যক্রমে অবদান রাখতে নিরুৎসাহিত হবেন এবং হুন্ডি প্রথা ও কর ফাঁকির প্রবণতা বাড়বে। অন্য দিকে বেশ কিছু পেশার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবিত ধারা প্রাসঙ্গিক নয়।
তাদের মতে, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর হাতে যেভাবে নিবন্ধন বাতিল করে এনজিও বিলুপ্ত করা ও প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা যৌক্তিক হবে না।
মূলত সরকার সর্বত্র ‘নিয়ন্ত্রণমূলক’ একটি অবস্থা জারি করতে চাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকার আসলে কোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায় তাও অত্যন্ত পরিষ্কার। চরম কৃর্তত্ববাদী খেয়াল থেকেই এসব আইনকানুন আরোপিত হচ্ছে। জনগণের চাওয়া না চাওয়ার কোনো পরোয়া নেই এখানে। বিতর্ক, গঠনমূলক সমালোচনায়ও রুষ্ট হয় সরকার।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব মনে করছে। আর এসব হচ্ছে এক ধরনের অহংবোধ থেকে। সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিরাও সরকারকে বিপথে চালিত করছে। আর এর ফলে সঠিক ও যৌক্তিক সিদ্ধান্তের বদলে সরকার হাঁটছে একরোখা হয়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সরকার সময়ের ভাষ্য শুনতে ব্যর্থ হলে আগামী দিনে তাদের পথ আরো অমসৃণ হবে, পথ হারানো সরকারের ক্ষমতার পালাবদল হয়ে উঠতে পারে রক্তাক্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে।

No comments

Powered by Blogger.