কাউন্সিলর পদ নিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য! by শাহেদ চৌধুরী

তফসিল ঘোষণার আগেই ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা বাছাইয়ে মনোনয়ন-বাণিজ্য শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাদের সমর্থন পেতে রীতিমতো দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন। একাধিক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক এমপি-মন্ত্রী মনোনয়ন-বাণিজ্যে মশগুল। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মহানগর কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহী মাঝারি সারির এক নেতাও। আওয়ামী লীগের দুটি সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
ডিসিসি নির্বাচনে উত্তর ও দক্ষিণ- দুই অংশের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে। এদিকে, কোমর বেঁধে মনোনয়নপ্রাপ্তির লড়াইয়ে নেমেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। মন্ত্রী-এমপিদের বাসাবাড়ি তো বটেই, সংশ্লিষ্ট নেতাদের অফিস-আদালতেও ধরনা দিচ্ছেন তারা। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনেক নতুন মুখের আনাগোনাও বেড়েছে। পরিচয় জানতে চাইলেই স্মিত হেসে অবলীলায় জবাব দিচ্ছেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন চান তিনি। তাদের কারোই দলীয় পদপদবি নেই।
মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং অবৈধভাবে বাড়ি-জমি দখলদার থেকে শুরু করে সামাজিক অপরাধীরাও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পেতেমরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এ ব্যাপারে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী 'নেতাদের' সঙ্গে যোগাযোগ করছেন দালালের মাধ্যমে। ওই দালাল চক্র দলের সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যেই রয়েছে। পুরান ঢাকার একজন নেতার নাম ভাঙিয়েও সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে যোগ্য দলীয় প্রার্থী খুঁজে বের করার কাজেও আর্থিক সম্পৃক্ততার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কথিত 'নবাগত'দের কারণে পিছিয়ে পড়ছেন ত্যাগী, সৎ ও পরীক্ষিত অনেক নেতাকর্মী। বিপাকে পড়েছেন দলের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনাররাও। তারা না পারছেন চিহ্নিত নেতার হাতে টাকার বান্ডিল গুঁজে দিতে, না পারছেন ওই নেতাদের ইঙ্গিতপূর্ণ চাহনি এড়িয়ে যেতে। তারা আকার-ইঙ্গিতে 'সুবিধা' চাইছেন।
সম্মেলন হলেও মহানগরসহ থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো এখনও গঠন করা হয়নি। ডিসিসি নির্বাচনের পর এসব কমিটি ঘোষণার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তাই মনোনয়ন-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতাদের নাম বলে কেউই দলের পদপদবি লাভের সুযোগ হারাতে চাইছেন না। অবশ্য অনেকেই আকার-ইঙ্গিতে বলেছেন, মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েই চিহ্নিত নেতাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন তারা। ওই সব নেতা যে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন, তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই। এর পরও দলের বড় পদে থাকায় ওই নেতারাই হয়ে উঠছেন আগ্রহী প্রার্থীদের ভরসার কেন্দ্রবিন্দু।
কয়েকজন নেতা মনে করেন, বিএনপি ডিসিসি নির্বাচনে আসছে না- এমনটি ধরে নিয়েই আওয়ামী লীগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভিড় বাড়ছে। দলীয় সমর্থন জুটিয়ে দিতে না পারলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটি এক ধরনের জুয়া। লাগলে লাগল, না লাগলে কী আর করা!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা সমকালকে বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে সমর্থন নিয়ে দলের ভেতরে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা বিরাজ করছে। সব ওয়ার্ডেই একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় এবং বেশির ভাগই অর্থকড়ি দিয়ে দলীয় সমর্থন লাভে সচেষ্ট হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে বড় ধরনের ঝামেলা তৈরির আশঙ্কাও রয়েছে।
মনোনয়ন-বাণিজ্যের বিষয় ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি অবশ্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা বাছাইয়ের বেলায় কোনো ধরনের ভূমিকা না রাখার জন্য দুই সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও আনিসুল হককে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর একটি জরিপও করিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রতি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইয়ের তাগিদও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মেয়র পদে দক্ষিণ ঢাকার সম্ভাব্য প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এবং উত্তর ঢাকার প্রার্থী আনিসুল হকও একই মনোভাব পোষণ করছেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ সমকালকে জানিয়েছেন, দল-সমর্থিত প্রার্থী বাছাইয়ের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগর নেতাদের বৈঠকে ডাকবেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এ বৈঠক হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ হয়েছে। প্রার্থিতা বাছাইয়ের বেলায় মনোনয়ন-বাণিজ্য প্রসঙ্গ উঠলে এম এ আজিজ বলেন, এ ধরনের কোনো বিষয় তার জানা নেই। তারা এখন গ্রহণযোগ্য ও ভালো প্রার্থী খুঁজছেন।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বাছাই প্রক্রিয়া এবং মনোনয়ন-বাণিজ্য নিয়ে জানতে চাইলে টেলিফোনে কোনো মন্তব্য করতে চাননি মহানগর সাধারণ সম্পাদক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। তিনি গতকাল রোববার তার নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুরে ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.