সংলাপ নয়, শক্তিতেই সমাধান খুঁজছে সরকার by জাহাঙ্গীর আলম

চলমান পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে সংলাপ-সমঝোতার বিষয়ে দেশি-বিদেশি কোনো আহ্বানই বিবেচনায় নিতে রাজি নয় সরকার। এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে শক্তি প্রয়োগেই সমাধান খুঁজছে সরকার।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে। তাঁরা জানান, ঢাকায় কর্মরত ১৬ বিদেশি কূটনীতিকের সাম্প্রতিক তৎপরতা এবং তারও আগে জাতিসংঘের মহাসচিবের চিঠি—এসবকে সরকার ‘চাপ’ মনে করছে না। তাঁদের কোনো সহযোগিতাও নিতে রাজি নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা কারও দূতিয়ালি চাই না। কারও সহযোগিতাও প্রত্যাশা করি না। সরকারই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’ তিনি বলেন, ‘কূটনীতিকেরা যদি নতুন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান, তা হলে কথা বলব। তবে এটাকে সংলাপ বা সমঝোতার উদ্যোগ বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।’
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি এখন আর জনজীবনে কোনো প্রভাব ফেলছে না। আর কিছুদিন এভাবে চললে তা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়বে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে যে, অচিরেই চোরাগোপ্তা হামলা এবং যানবাহনে পেট্রলবোমা ও অগ্নিসংযোগ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে তারা সক্ষম হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনে আরও কঠোর পন্থা অবলম্বন করবে।
তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খুব শিগগির গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা নেই। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গত ১১ দিনেও সংশ্লিষ্ট থানায় পৌঁছায়নি বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে। যদিও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইনের প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে। প্রক্রিয়া শেষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় যাবে।
এরই মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটাও বিরোধীদের আন্দোলন অকার্যকর করার আরেক কৌশল বলে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে। নির্বাচনী ডামাডোলে সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও স্তিমিত হয়ে পড়বে বলে তাদের ধারণা।
বিদেশি কূটনীতিকদের সাম্প্রতিক তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা বলেন, ১ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে ১৬ কূটনীতিকের আলোচনার পর তাঁদের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে গতকাল পর্যন্ত আর যোগাযোগ করা হয়নি।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি যৌথভাবে ১৬ কূটনীতিক বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ করে দিতে অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেন। এ বিষয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাঁদের সাক্ষাৎ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে কূটনীতিকেরা আলোচনা করতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলবেন। তাঁকেই এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন দেশের বাইরে আছেন। তিনি দু-এক দিনের মধ্যে দেশে ফিরবেন।
সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংকট উত্তরণে জাতিসংঘের মহাসচিব এবং ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত প্রয়োজনে সহযোগিতা দেওয়ার কথা বললেও সরকার তাঁদের সহযোগিতা চাইবে না। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার দায়িত্ব দিয়েছিলেন মহাসচিব। তবে তারানকোর বাংলাদেশে আসা অনেকটাই অনিশ্চিত। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারানকোকে মধ্যস্থতার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

No comments

Powered by Blogger.