ভয় দেখিয়ে কাউকে পিছপা করা যাবে না -ড. কামাল

সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ থেকে শিক্ষা নিয়ে চলমান সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে হবে। গুম, হত্যার ভয় দেখিয়ে কাউকে পিছপা করা যাবে না। বাঙালি এসবে ভয় পায় না। জনগণের অধিকারের ব্যাপারে কোন আপোষ নয়। নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে হলে গুম- হত্যার ভয়ে বসে থাকলে চলবে না। গতকাল রাজধানীর আরামবাগে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ড. কামাল আরও বলেন, দেশে আইনের শাসন থাকবে না, জবাবদিহিমূলক বিচার ব্যবস্থা থাকবে না- এজন্য  তো বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেননি। জনগণ ক্ষমতার মালিক। তারাই অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে। পাকিস্তান আমলে তারা মার্শাল ল’কে ভয় করেনি। আমরা বঙ্গবন্ধুর কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। তাই আমরা কাউকে ভয় পাই না। আজ লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা দিলে সেই শক্তি নিয়ে মোকাবিলা করবো। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরি।
ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের দাবি আদায় করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলেও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। গুলি চালানোর পেছনে যারা ছিল আজকে তরুণরা তাদের নাম জানে না। কেউ নাম জানলেও তা স্মরণ করে না। ষাটের দশকে সরকার আমাদের অস্ত্রের ভাষায় শেষ করে দিতে চেয়েছিল। পঞ্চাশের দশকে তারা অহংকারের ভাষায় কথা বলেছিল। মুক্তিযুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই আমরা তাদের পরাজিত করতে পেরেছিলাম। যে রাজনীতি আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে সেই রাজনীতি থেকে আমাদের সুস্থ রাজনীতিতে ফিরতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বন্দুক দিয়ে পাকিস্তানিরা সাড়ে সাত কোটি মানুষকে মারতে পারেনি। এখন তো ষোল কোটি মানুষকে মেরে ফেলা সম্ভব না। পেট্রলবোমা মেরে, বিচারবহির্ভূত হত্যা করে মানুষ মেরে শেষ করা যাবে না। মানুষ সুস্থ রাজনীতি চায়। অন্যায়ের সামনে তারা মাথা নত করে না।
দেশে অসুস্থ রাজনীতির চর্চা হচ্ছে দাবি করে ড. কামাল বলেন, বর্তমানে রুগ্‌ণ রাজনীতির বড় আলামত হচ্ছে টাকার ব্যবহার। এটা সুস্থ রাজনীতিতে, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে থাকতে পারে না। জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে হলে কোটি কোটি টাকা নিয়ে নামতে হয়। নির্বাচন বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য, আইনপ্রয়োগ বাণিজ্য এগুলো অসুস্থ রাজনীতির অবদান। এগুলো থেকে মুক্ত হতে মানুষ চাচ্ছে সুস্থ রাজনীতির জন্য সংগঠিত হতে।
আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশনের শিডিউলের আগেই বিভিন্ন স্থানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামে কিভাবে বিলবোর্ডে টাঙানো হয়েছে সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, এসব কাজ বেআইনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পুরোপুরি পরিপন্থি। এটা নির্বাচনী লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের মধ্যে পড়ে না। ড. কামাল এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, কেন কিসের জন্য নির্বাচন কমিশন বিলবোর্ডের ব্যাপারে না দেখার ভান করছে, কেন মুখ বুঝে আছে তা বোধগম্য নয়। নির্বাচন কমিশন যেন অন্ধ হয়ে না থাকে। বিলবোর্ডের টাকার হিসাব হওয়া উচিত। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সভা-সমাবেশের সুযোগ দাবি করেন। তিনি বলেন, পুলিশের অনুমতি নিয়ে সভা-সমাবেশ করার অধিকারের নাম সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। দুইজন অসাধারণ সুবিধা পাবে আর বাকিরা পাবে না- তা হতে পারে না। মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক আহমেদ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.