কতদূর এগুলো নারী?

বছর বিশেক আগে বেইজিংয়ে জড়ো হয়েছিলেন বিশ্ব নেতারা। আলোচনার বিষয় ছিল নারীর অধিকার রক্ষা। সেখানে তারা ঐতিহাসিক এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তারপর থেকে অনেক কিছুই ঘটেছে। ঘটছে এখনও।
চুক্তিতে ১৯৯টি কর্মপরিকল্পনা ছিল। সবগুলি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি স্বভাবতই। তবে অনেক কিছুই কিন্তু বদলেছে। সবচেয়ে বড় অর্জন হলো চিন্তার পরিবর্তন। নারী সম্পর্কে ধারণাটা বদলেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা 'ইকুয়ালিটি নাও' এর গ্লোবাল নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমিন হাসান বললেন, ২০ বছর আগে এটা নিয়ে কেউ ভাবতোই না। কেউ এ সব প্রসঙ্গ ওঠালে তাকে দেখা হতো অন্য দৃষ্টিতে। এতদিনে বদলেছে অনেক কিছু।
হাঁ, এটা সত্য যে সবকিছু পারফেক্ট হয়নি এখনও। বৈষম্যটাও রয়ে গেছে সব ক্ষেত্রেই। তবু প্রথম বড় পদক্ষেপটা আমরা নিতে পেরেছি। বর্তমানে ১৩০টিরও বেশি দেশে নারী সমতা আইন রয়েছে। ১২০টির মতো দেশে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।
এখানে ছোট্ট একটা তালিকা দেয়া হলো। ২০ বছর আগে যে সব করতে পারতো না নারীরা, আজ পারছে সেগুলি।
ফ্রান্স : রাতে কাজ করতে পারে নারী
২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রথাটা ছিল। ধর্ষণকারী ধর্ষিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেই ছাড়া পেয়ে যেতো। সেই প্রস্তাবে ধর্ষিতা রাজি থাক আর না থাক, সেটা বিবেচ্য ছিল না। এখন আর সে সুযোগ নেই।
গুয়াতেমালা, পেরু, উরুগুয়ে, ইথিওপিয়া এবং মরক্কোতেও এ ধরণের প্রথা ছিল যেগুলো এখন আর চালু নেই।
রুয়াণ্ডা : সম্পদের উত্তরাধীকারী হতে পারে নারী
১৯৯৯ সালে রুয়াণ্ডা নারীকে সম্পদ উত্তরাধীকারের অধিকারের দেয়। রুয়াণ্ডা এক সময় অনেক বিষয়েই নারী অধিকারের মডেল দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো। তবু মাত্র বছর দশেক হলো দেশটিতে জমির মালিকানা ও বিক্রির অধিকার পেয়েছে নারীরা।
জর্ডান : প্রতারক স্বামীকে খুনের দায়ে শাস্তির মাত্রা কমেছে নারীর
জর্ডানে স্ত্রী পরপুরুষে আসক্ত হলে পুরুষরা সুবিধাটা পেতো। স্ত্রীকে খুনের দায়ে অন্য খুনের মতো শাস্তি হতো না পুরুষদের। শাস্তি কমিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু স্বামী চরিত্রহীন হলেও এ ধরণের কোন সুবিধা পেতো না নারী। সে অবস্থা এখন বদলেছে। পুরুষের মতো একই সুবিধা পান এখন নারী। ২০০১ সালে এই আইন সংশোধন করে জর্ডান।
মালয়েশিয়া : মহিলারা ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারেন স্বামীর বিরুদ্ধে
বিবাহিত হলেও যৌন সম্পর্ক ধর্ষণের পর্যায়ে যেতে পারে যেটা পৃথিবীর বহু দেশেই উপেক্ষিত। মালয়েশিয়াতে নারীরা তার স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারেন। নারীর পক্ষে একই ধরণের আইন রয়েছে পাপুয়া নিউ গিনি ও সার্বিয়া অ্যাণ্ড মন্টিনিগ্রোতে।
ভারতে অবশ্য এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন নেই। ২০১২ সালে নয়াদিল্লীতে এক তরুণী ধর্ষণের শিকার হলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। ওই ঘটনার পর বিষয়টি আইনের অধীনে আনতে সুপারিশ করে পর্যবেক্ষণ কমিটি।
উগাণ্ডা : অবিশ্বস্ত স্বামীকে তালাক দিতে পারে নারী
স্ত্রী অবিশ্বস্ত হলে তালাক দেয়ার সুযোগ পুরুষের বরাবরই ছিল। ২০০৪ সালে সাংবিধানিক আদালত নারীর জন্যও এ অধিকার নিশ্চিত করেছেন।
ইন্দোনেশিয়া : স্বামী পেটালে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন স্ত্রী
গৃহে নারীর উপর যে কোন ধরণের নির্যাতন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ২০০৪ সালের এক আইনে। এ ক্ষেত্র বহু দেশ অবশ্য এখনও পিছিয়ে আছে।
সুরিনাম : সন্তানকে নিজের জাতীয়তা দিতে পারেন মা
স্বামী ও সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে পৃথিবীর বহু দেশেই নারীকে ভুগতে হয় অনেক। কিন্তু সে দিক থেকে এগিয়েছে সুরিনাম। সেখানে সন্তানকে নিজের নাগরিকত্ব দিতে পারেন মা।

No comments

Powered by Blogger.