ধুঁকছে পরিবহন খাত

হরতাল-অবরোধে সহিংসতা কমলেও আতঙ্ক কাটছে না। কাজের জন্য বাধ্য হয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হলেও শঙ্কা নিয়ে চলাচল করছেন তারা। যানবাহন চলাচল এখনও স্বাভাবিক হয়নি। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মহাসড়কে অর্ধেকের কম যানবাহন চলাচল করছে। অসুবিধায় আছেন পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকরা। যাত্রী সঙ্কটে তাদের রোজগার শূন্যের কোঠায়। ইতিমধ্যে কেউ কেউ বদলে ফেলেছেন দীর্ঘদিনের এ পেশাটি।
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, রংপুরে সহস্রাধিক পরিবহনের মধ্যে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা শতাধিক পরিবহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসন পাহারায় নিরাপত্তার ঘোষণা দেয়া হলেও বিশ্বাস-ভরসা করতে পারছেন না যাত্রী ও পরিবহন মালিকরা। তারা বলেন, সরকার শুধু শুধু বললে হবে না, আমাদের চিন্তা আমাদেরই করতে হবে। জাহাজ কোম্পানি মোড়সংলগ্ন টিআর পরিবহন কার্যালয়ের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা জগদিশ বাবু বলেন, রাতে তো দূরপাল্লার গাড়ি চলছেই না, তার ওপর সকাল থেকে শুরু করে বেলা ১১টা পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকটি রংপুর-ঢাকা কোচ চলছে। এ গাড়িগুলো ঢাকায় যেতে যেতে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা লেগে যায়। এর বেশি রিস্ক নেয়া যায় না। তিনি আরও জানান, ৫ই জানুয়ারি অবরোধ কর্মসূচির আগে দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় টিআর পরিবহনের ১৬টি বাস রংপুর-ঢাকায় আসা-যাওয়া করতো। সেখানে এখন ৩ থেকে ৪টি গাড়ি চলছে। তাও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। ডিপজল কাউন্টারের এখলাসুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের মুখের দিকে চেয়ে আগমনী, নাবিল, হানিফ, শ্যামলী, এসআর, টিআর, এনা, ন্যাশনাল পরিবহনসহ দূরপাল্লার হাতেগোনা কয়েকটি কোচ চলাচল করছে। আগমনী কাউন্টারের বেলাল হোসেন বলেন, তাদের পরিবহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। মাঝেমধ্যে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করে দু-একটি গাড়ি চলাচল করছে। এদিকে রংপুর বাস টার্মিনাল সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, উত্তরের ১৬ জেলার জন্য যেখানে ৫ শতাধিক গাড়ি চলাচল করতো, সেখানে ৬০ থেকে ৭০টি গাড়ি চলাচল করছে। সে গাড়িগুলোতেও যাত্রী তেমন মিলছে না। নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া কোন যাত্রী গাড়িতে উঠছে না। মোটর শ্রমিক রহিম বকস্‌ অভিযোগ করে বলেন, রংপুরে প্রায় ৫ হাজার পরিবহন শ্রমিকদের দুর্দিন চলছে। অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। বাড়ির শেষ সম্বল থালাবাসন বিক্রি করেও দু-একবেলা খাবার জোগাড় করছেন। কাজকর্ম না থাকার কারণে কেউ কেউ রিকশা চালনা, কুলি, ক্ষেতমজুর, কৃষাণীসহ অন্য কাজ করে রোজগারের চেষ্টা করছেন। দেশের চলমান সঙ্কটে সরকার ও বিরোধীপক্ষের হানাহানিতে টানা দুই মাসে ব্যাপক হতাহত, ক্ষয়ক্ষতি হয়। স্থবিরতা নেমে এসেছে সর্বত্রই। গত ১৩ই জানুয়ারি রংপুর মিঠাপুকুরের বাতাসন এলাকায় র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ-ম্যাজিন্ট্রেটসহ প্রশাসনের পাহারায় বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে নাশকতা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে পুড়ে মারা যান ৬ জন। আহত হন প্রায় ৪০ জন। এ ঘটনায় ১৬ই জানুয়ারি পুলিশের পুলিশ মহাপরির্দশক এ কে এম শহীদুল হক ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এলাকাবাসী ও সুশীলসমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এর কয়েক দিন পরেই ফের নগরীর মেডিক্যাল পূর্বগেট এলাকায় একটি চালবোঝাই ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রংপুর বিভাগে এ ধরনের প্রায় ৫০টি ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক পরিবহন ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ জন মারা গেছেন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় পুলিশ প্রশাসন রংপুর বিভাগের ৪০ পয়েন্টকে ডেঞ্জার জোন হিসেবে ঘোষণা দেয়। ফলে উদ্বিগ্নতা বেড়েছে রংপুরবাসীর। সম্প্রতি সহিংসতা-নাশকতা কমলেও রোধ করা যাচ্ছে না ককটেল বিস্ফোরণ। গত ৫ দিনে রংপুর সিটি করপোরেশনসংলগ্ন সিটি বাজার, দুদক কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখাসংলগ্ন, আওয়ামী লীগ কার্যালয়সংলগ্ন, জেলা পরিষদ কার্যালয় চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, সুপার মার্কেট, পায়রা চত্বর, শাপলা চত্ব্বরে ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি পালন করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। হামলা-মামলা গ্রেপ্তারের মধ্যেই চলছে তাদের এ কর্মসূচি। দূরপাল্লার যানবাহন আগের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও মানুষের মধ্যে রয়েছে আতঙ্ক। পেট্রলবোমা হামলায় হরতাল-অবরোধ চলাকালে সিএনজিযাত্রী লিটন (৩০), বাসের চালক নূরে আলম সুমন (৩৫) ও ট্রাকচালক কামাল হোসেনসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে শতাধিক গাড়িতে। অন্যদিকে জেলার সদরে ১০, রামগতিতে ২, কমলনগরে ৮, রায়পুরে ৭, চন্দ্রগঞ্জে ৫টিসহ ৬টি থানায় গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে নাশকতা ও সহিংসতার অভিযোগে ৩২টি মামলা করা হয়েছে। এ সময় মামলায় দেড় হাজার বিএনপি-জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকশজনকে। এ ছাড়া বাংগাখাঁ ইউনিয়নের নেয়ামতপুর এলাকার দোলাইকান্দিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক মাইনউদ্দিন বাবলু একই ইউনিয়নের মিরীকপুর বাজারে যুবলীগের ৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান, বশিকপুর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইস্রাফিল আলমকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে জানুয়ারি মাসে লক্ষ্মীপুর জেলায় ১৪৪টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ১৪৩টি মামলা রুজু করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর, রামগঞ্জ ও চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজনৈতিক কোন সমঝোতার পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা। এদিকে বাস-ট্রাকমালিকদের ব্যাংকের ঋণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শঙ্কার মধ্যেও গাড়ির চাকা সচল রাখতে হচ্ছে তাদের। কেননা ট্রাক-বাস পুড়লে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু গাড়ি বন্ধ থাকলে ব্যাংকের ঋণ যে হারে বাড়ছে তার লাগাম টানার ভিন্ন কোন উপায় নেই। অন্যদিকে বাস-ট্রাকের চালক-শ্রমিকদের পরিবারের মুখের আহার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে আবার পেশাও পরিবর্তন করছেন। এর ফলে পরিবহন খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। যার ভুক্তভোগী রাজশাহীর ১০ হাজার পরিবহন শ্রমিক ও অত্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন যেখানে এক হাজার মালবাহী ট্রাক, ৩ শ’ নাইটকোচ ও আন্তঃজেলা রুটে পাঁচ শতাধিক বাস চলাচল করতো। কিন্তু এখন চলছে মাত্র ৪ শ’ ট্রাক, নাইটকোচ দেড় শ’ এবং ২ শ’ বাস চলাচল করছে। পুলিশি নিরাপত্তা এবং ক্ষতিপূরণের আশ্বাসেও কাজ হয়নি। নেহায়েত খুব তাগাদা না থাকলে কেউ রাস্তায় বের হতে চান না। কিন্তু পরিবহন খাতের শ্রমিকরা নিরুপায় গাড়ি না চললে তাদের পরিবারের সদস্যরা না খেয়ে থাকবেন। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন নেতা জানান, সরকার ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বললেও পুলিশ-আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সে ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তা কাজ করে। সমপ্রতি ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে হানিফ পরিবহনের ২টি নাইটকোচ পুড়িয়ে দেয় নাশকতাকারীরা। কিন্তু মামলা করতে গেলে পুলিশ সে মামলা না নিয়ে নিজেরাই বাদী হয়ে মামলা করে। ওই মামলায় গাড়ির নাম বা নম্বর কোন কিছুর উল্লেখ নেই। পেট্রলবোমায় গাড়ি পুড়লে মামলায় গাড়ির নাম এন্ট্রি করতে পুলিশকে ঘুষ দিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামাল হোসেন রবি দাবি করেন, এখন পরিবহন ব্যবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। পেটের তাগিদে শ্রমিকরা পেশা পরিবর্তন করেছিলেন এ কথা সত্য, তবে তারা আবার মূল পেশায় ফিরে আসছেন। একই সঙ্গে ট্রাক ভাড়ার ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হারে ভাড়া আদায়ের অভিযোগও অস্বীকার করেন এই শ্রমিক নেতা।
স্টাফ রিপোর্টার, উত্তরাঞ্চল থেকে জানান, বিরোধী জোটের আন্দোলনে পাল্টে দিয়েছে উত্তরের মানুষের জীবনযাপন। কোথাও আতঙ্ক, কোথাও রোগীদের দুর্ভোগ। নেই সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, ঠিক নেই রেলের সময়সূচি ও সিটব্যবস্থা। জনপদের জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধাসহ ৮ জেলার প্রকৃত চিত্র আলাদা। দীর্ঘদিনের সরকারবিরোধী আন্দোলনের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম জানান, গাড়ি চলাচল করছে। তবে আগের তুলনায় অনেক কম। যাত্রীরা আতঙ্কের কারণে বাসকে নির্ভরযোগ্য মনে করছেন না। তা ছাড়া বাসমালিকরা রাস্তায় অগ্নিসংযোগ ও আন্দোলনকারীদের আতঙ্কে রাস্তায় নামাতে ভয় পাচ্ছেন। সে কারণে বাসের সংখ্যাও কমেছে। অধিকাংশ বাসযাত্রী এখন রেলনির্ভর হয়েছেন। তা ছাড়া ধান রোপণ ও ধান কাটার মওসুম এলে শুধু রংপুর বাস টার্মিনালেই শত শত কামলা বাসের অপেক্ষায় থাকতেন। এখন এ চিত্র নেই। কৃষিমজুররা বিভিন্ন অঞ্চলে কাজে যেতে পারছেন না। তারা নিজের এলাকায় কমমূল্যে কাজ করছেন। যাত্রীদের আশায় আশায় বসে থেকে বাসের সময় পার হয়ে যায়। অনেকেই একবার ছেড়ে গেলেও আর ফিরতে পারছেন না। এজন্য বাসমালিক ও শ্রমিকরা পড়ছেন অর্থ-সঙ্কটে। তিনি বলেন, দিনের বেলা পুলিশ পাহারায় হাতেগোনা বাস চলাচল করলেও যাত্রীরা থাকেন আতঙ্কে। লোকাল বাসসহ প্রতিদিনি প্রায় ২০০ ঢাকার গাড়ি চলতো। এখন আতঙ্ক কিছুটা কমে এলেও দামি গাড়িগুলো রংপুর ছেড়ে যাচ্ছে না নিরাপত্তার কারণে। যাত্রী না থাকায় দুর্দশায় পড়েছেন বাসমালিক ও শ্রমিকরা। গাইবান্ধার বাসশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুর রশিদ সরকার জানান, তার তিন হাজার শ্রমিকের অবস্থা কাহিল। দীর্ঘদিনের অবরোধ আর হরতালে বাস চলাচল করতে না পারায় শ্রমিকদের সন্তানদের নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। পুলিশ পাহারায় কিছু কিছ বাস চলাচল করতে গিয়ে গাইবান্ধার অন্তত ২০টি বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মধ্যে পড়েছে। একটি বাস ঢাকা যাওয়ার সময় গাইবান্ধা সদরের তুলসীঘাটে পেট্রলবোমায় ৮ কৃষি মজুরকে আগুনে পুড়ে মরতে হয়েছে। বর্তমান কিছু বাস গাইবান্ধা ছেড়ে গেলেও সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকেন যাত্রীরা। বিয়ের অনুষ্ঠান কমেছে বলে জানালেন গাইবান্ধার আর রহমান কমিউনিটি সেন্টারের মালিক জুয়েল আহম্মেদ। তিনি বলেন, তার কমিউটি সেন্টারের কর্মচারীদের বসে বসে বেতন দিতে হচ্ছে দুই মাস ধরে। ট্রেনের অবস্থা খারাপ। যাত্রীসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি সিট, বগি ও ট্রেন। সে কারণে শত শত যাত্রীকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শত শত মাইল যেতে হচ্ছে বলে জানান গাইবান্ধার স্টেশন মাস্টার এম এ ওয়াহেদ। তা ছাড়া ট্রেন কখন আসে কখন যায় তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ফলে ট্রেনের যাত্রীরাও এখন স্টেশন চত্বরে রাত-দিন অপেক্ষা করে বসে থাকেন। চোখের রোগী, হার্টের রোগী, কিডনি রোগীসহ বড় ধরনের রোগীরা চিকিৎসার জন্য নিয়মিত ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে পারছেন না। ঢাকা থেকে বা বিভিন্ন স্থান থেকে ডাক্তারদের আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকছেন এলাকার রোগীরাও। তরিতরকারি ও কাঁচামালের অবস্থা খুব খারাপ। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ সবজিচাষিরা আন্দোলনের কারণে তাদের উৎপাদিত সবজি কোথাও নিতে পারছেন না।
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, স্থবির হয়ে পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। বিপর্যয়ের মুখে জেলার পরিবহন ও কৃষি খাত। লোকসানে দিশাহারা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও ক্ষুদ্র-প্রান্তিকচাষি। দিন দিন বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। আতঙ্ক-অনিশ্চয়তার মধ্যে অন্য শহরে গিয়েও মিলছে না কাজ। ফলে বিপাকে পড়েছেন গ্রামীণ ও শহুরে শ্রমজীবী মানুষ। নিদারুণ অর্থ-সঙ্কটে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুঃসহ দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। রাজনৈতিক এ অস্থিরতার কারণে ধস নেমেছে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যেও। কাঙ্ক্ষিত যাত্রী না পেয়ে বাসগুলোকে ক্রমাগত লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে বাসমালিক ও শ্রমিক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে অহরহ ঘটছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মতো ঘটনা। পরিবহন খাতের এ বিশৃঙ্খলতার কারণে জেলার কয়েক হাজার শ্রমিক সঙ্কটে পড়েছেন। শহরের গাইটাল আন্তঃজেলা বাসটার্মিনালের পরিবহন শ্রমিক আবুল মিয়া জানান, দেশে যখন স্বাভাবিক অবস্থা ছিল, তখন প্রতিটি ট্রিপেই লাভ হতো। এতে মালিক-শ্রমিক উভয়েই উপকৃত হতেন। এখন আসন অনুযায়ী যাত্রী না পাওয়ায় প্রতি ট্রিপেই লোকসান হয়। এতে পরিবহন খাতের শ্রমিকদের দুর্দশা বেড়েই চলেছে। একই রকম অবস্থা শহরের ভ্যানগাড়ি, ঠেলা ও টমটমচালকদের। পুরান থানা এলাকার ঠেলাচালক মাহতাব জানান, হরতাল-অবরোধে পণ্য, আসবাব ও আনুষঙ্গিক মালামাল পরিবহন অনেক কমে গেছে। এতে দিন শেষে যা আয় আসে, তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানো যায় না। একই দশা শহরের বিভিন্ন মার্কেট এলাকার দিনমজুরদেরও। জেলা শহরের বড়বাজার, পুরান থানা, কাছারিবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যান চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে খুচরা বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনি, পিয়াজ ও মসলার দাম কিছুটা কমেছে। তবে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এদিকে মজুত বাড়লেও বেচাকেনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। শহরের গৌরাঙ্গবাজার এলাকার মুদি দোকানি বাবুল রায় জানান, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেচাকেনা সিকিভাগে নেমে এসেছে। বিপাকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিকচাষিরাও। কৃষিভিত্তিক এ জেলায় সবচেয়ে লাভজনক হিসেবে বিবেচিত শীতকালীন সবজি চাষ করে উৎপাদন খরচই তুলতে পারেননি তারা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। তাড়াইলের কৃষক মো. আক্কাছ আলী জানান, পরিবহন সঙ্কটের কারণে তাড়াইলের হাজার হাজার কৃষকের সবজির একটি বড় অংশ মাঠেই নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে যে পরিমাণ বাজারজাত করা সম্ভব হয়েছে, তাতে খরচের অর্ধেকও চাষিরা তুলতে পারেননি। এতে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন এখানকার সবজিচাষিরা।

No comments

Powered by Blogger.