প্রান্ত আর নাবিলার গল্প by আশরাফ উল্লাহ

(‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ’–এর এবারের প্রতিযোগিতায় সেরা চারে ছিলেন চট্টগ্রামের দুই শিল্পী—প্রথম রানারআপ প্রান্ত (ডানে) ও দ্বিতীয় রানারআপ নাবিলা l সৌরভ দাশ) প্রান্ত আর নাবিলা। দুজনই গান–অন্তঃপ্রাণ। গানের জন্য পুড়িয়েছেন অনেক কাঠখড়। ফলও পেলেন হাতে হাতে। হয়ে উঠলেন সুরের আকাশের নতুন তারা। চট্টগ্রামের এই দুই তরুণ তুর্কি জিতেছেন এবারের ‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ’–এর খেতাব। প্রান্ত প্রথম রানারআপ, নবিলা দ্বিতীয় রানারআপ।
তাঁরা এখন প্রাদপ্রদীপের আলোয়। ‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ’–এর পুরস্কার জিতে রাতারাতি বনে গেছেন সংগীত তারকা। দুজনেরই এটি প্রথম বড় কোনো প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জেতা। ৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর চট্টগ্রাম কার্যালয়ে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে।
শুরুতে ফ্ল্যাশব্যাক। ২ জানুয়ারি ২০১৫। কাতারের দোহা। হাজার হাজার দর্শক। সেরাকণ্ঠের গ্র্যান্ড ফিনালে মঞ্চ। ঘোষণা হচ্ছে ফলাফল। দুরুদুরু বুক। কেমন ছিল সেই ক্ষণ? শুরু করলেন নাবিলা, ‘ফলাফল ঘোষণায় খুব বেশি সময় নেননি উপস্থাপক। আর আমার তো শুরুতেই টেনশন ফ্রি। কারণ, প্রথমে ঘোষণা হয়েছে আমার নাম।’ সেরা হতে না পারার অক্ষেপ ছিল? নাবিলা বললেন, ‘৬৫ হাজার প্রতিযোগী থেকে সেরা সাতে এসে শিরোপা জেতার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হওয়া স্বাভাবিক। তবে এত্ত বড় প্ল৵াটফর্মে গ্র্যান্ড ফিনালেতে আসাটাই আমার জন্য বড় পাওয়া। ভালো ভালো শিল্পী ছিল প্রতিযোগিতায়। তাদের টপকে নিজের সামার্থ্য প্রমাণ করেছি। এতেই আমি খুশি। প্রতিযোগিতার প্রতিটি ধাপ পার হওয়ার সময় ভয় থাকত। মনে হতো এই বুঝি ছিটকে পড়লাম। এ জন্য চেষ্টা থাকত ভালো করার। সেই চেষ্টায় আমি সফল।’
এতক্ষণের নীরব শ্রোতা প্রান্ত এবার মুখ খুললেন। হাসি দিয়ে বললেন, ‘আড্ডা আর ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার ঝোঁক বেশি। তবে গানের ক্ষেত্রে কোনো ফাঁকি দিতে পারিনি। মা এ ব্যাপারে সিরিয়াস। সব গান ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটা তিনি নিজেই তদারক করেন। এদিক-ওদিক হলে বকুনি। মায়ের এই একাগ্রতা আমাকে এত দূর এনেছে। এখন নিজেই ভালো গান করার তাগিদ অনুভব করি।’
প্রান্তের ঠিক উল্টোটা নাবিলার পরিবারে। গান করতে কখনো নিষেধ করেনি, আবার খুব বেশি আগ্রহও ছিল না। তবু রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েটির সব সময় ইচ্ছে করত গানে ডুবে থাকতে। ছোটবেলা থেকেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু গান। নাবিলার এমন আগ্রহ দেখে বড় বোন হারমোনিয়াম ধরিয়ে দিলেন। তখন সবে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পা রেখেছিলেন নাবিলা। হারমোনিয়াম পেয়ে সাহস বাড়ল তাঁর। স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানের মঞ্চে একদিন গানও করে ফেললেন। নীরবে এত দূর! এবার কোথাও তো প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে হবে। মা-বাবার কাছে বায়না, অনুনয়–বিনয়ের পর তাঁদের মন গলল। নাবিলাকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হলো শাশ্বত ললিতকলা একাডেমিতে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন সংগঠনে গানের তালিম নেওয়া হয়েছে। শেখাতেই সীমাবদ্ধ সংগীতজীবন, কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া হয়নি। অবশেষে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেরাকণ্ঠে। সেখানেই বাজিমাত।
আর প্রান্ত পরিবারের চাপে সেরাকণ্ঠে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় পিসির হাতে গানের হাতেখড়ি। কিন্তু দুরন্ত প্রান্তকে হারমোনিয়ামে বসানো ছিল রীতিমতো দুরূহ কাজ। সারাক্ষণ খেলায় মজে থাকত, না হয় পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। তার পরও চোখে চোখে রাখতেন মা। মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া ছিল কঠিন। রেওয়াজ শেষ করে বাকি সব। শেষমেশ সেরাকণ্ঠে নিবন্ধন করান। অডিশন দিয়েই ঢাকার ইয়েস কার্ড। বাড়ল আত্মবিশ্বাস। মনে হয় পারব। এর পরের গল্প সাফল্যের চূড়ায় ওঠার।
প্রান্ত এইচএসসি পাস করেছেন। নাবিলা পড়ছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারে। এই বয়সে তারকা, কেমন অনুভূতি? প্রান্তের লাজুক হাসি। বললেন, ‘এখন অনেক জায়গায় গেলে সবাই চেনে। খুব ভালো লাগে।’ নাবিলার কাছে এটা মানুষের ভালোবাসা।
এবার আসি ভবিষ্যতের কথায়। কার কী ইচ্ছে? প্রান্ত কিছুটা গম্ভীর। বললেন, ‘গান চালিয়ে যাব। আমার সুফি ঘরনা ও গজলের প্রতি ঝোঁক। এ ছাড়া নজরুলসংগীতে আরও তালিম নেব।’ এদিকে নাবিলার লক্ষ্য সিনেমায় প্লেব্যাক করার। সেরাকণ্ঠের বিচারকেরাও সেই পথে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁকে।

No comments

Powered by Blogger.