পেট্রোল বোমায় দগ্ধদের কান্না দুর্বৃত্তকেও স্পর্শ করুক

রাজনীতির নামে চলমান 'অগি্নসন্ত্রাস' নিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনীটির চিত্রগুলো স্বভাবতই ছিল হৃদয়বিদারক। প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বারবার অশ্রুসিক্ত হয়েছেন, তা উপস্থিত অন্যদের তো বটেই, সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসীর হৃদয়ও আর্দ্র করে তুলেছে। বুধবার সমকালে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ওই মিলনায়তনের শোকাবহ পরিবেশ_ 'মানুষের ওপর নৃশংসতার এই প্রামাণ্যচিত্র দেখার সময় প্রধানমন্ত্রীকে বারবার চোখ মুছতে দেখা গেছে। কখনও কেঁদে ফেলেন, কখনও বর্বরতার চিত্র সইতে না পেরে মাথা নিচু ও চোখ বন্ধ করে ফেলেন। এরপর আলোচনা সভার মঞ্চে উঠে সেখানে বসে থাকা রাজনীতির আগুনে নিহতদের পরিবার-পরিজন এবং আহতদের কাছ থেকে তাদের দুঃখ-দুর্দশা ও কষ্টের কথা শোনেন; তাদের সান্ত্ব্বনা দেন।' আমরা জানি, প্রায় দেড় মাস ধরে দেশে পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের কারণে কত সাধারণ মানুষ নারকীয় যন্ত্রণা ভোগ করছে! জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ঘর হতে বের হয়ে আর জীবিত ফিরতে পারেনি কতজন! বোমার আগুনে কেবল তারাই নন, পুড়ে ছাই হয়েছে পরিবারের স্বপ্ন ও আশা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসালয়ের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন পোড়া মানুষের যন্ত্রণায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। সমকালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ঢামেক বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ডা. সামন্তলাল সেন বলেছিলেন, 'রাজনৈতিক সহিংসতার সময় যানবাহনে দেওয়া আগুনে যারা পুড়ে যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেট্রোল বা গান পাউডারে পোড়ে। ফলে অনেক বেশি পুড়ে যায়। বিশেষ করে হাত বা পা অনেক সময় পুড়ে বিকৃত হয়ে যায়। সেগুলো আর সারিয়ে তোলা যায় না। সাধারণ মানুষ তো বটেই, চিকিৎসার সঙ্গে যুক্তরাও অনেক সময় এই দৃশ্য সহ্য করতে পারে না। তাদের পোড়া মুখমণ্ডলের দিকে আপনজনও তাকাতে পারে না।' আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই দেখছি পেট্রোল বোমার শিকার নাগরিকদের স্বজনের ম্লান মুখ ও সজল চোখ। ক্যামেরার চোখে আমরা যা দেখি, তার বাইরে থাকে আরও গভীরতর হাহাকার। মঙ্গলবারের প্রদর্শনীতেও সন্ত্রাস-নাশকতা ও পেট্রোল বোমার আগুনে নিহতদের স্বজন ও আহত কয়েকজন সেই বিভীষিকাময় মুহূর্ত ও তার পরবর্তী যন্ত্রণাদায়ক সময়ের অনুভূতি তুলে ধরতে গিয়ে বুকফাটা কান্না ও আহাজারিতে ফেটে পড়েন। তাদের বেদনায় কেবল প্রধানমন্ত্রীই অশ্রুসজল হননি, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ও দর্শক-শ্রোতাদেরও কাঁদতে দেখা গেছে। আসলে নিরপরাধ মানুষের কান্না প্রধানমন্ত্রী ও সাধারণ নাগরিক নির্বিশেষে সবাইকে কাঁদায়। বিবেকবান মানুষমাত্রই যে কোনো অজুহাতে এই নারকীয় 'আগুনখেলা' মেনে নিতে পারেন না। আমাদের মনে আছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। তার মতো আমাদেরও প্রশ্ন, কী অপরাধ রাজনীতির সঙ্গে নূ্যনতম সম্পর্কহীন এসব নাগরিকের? আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতির নামে যারা এভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারার খেলায় নেমেছে, তারাও মানুষ। তাদের হৃদয় আছে। মানুষের যন্ত্রণা, বেদনা ও আহাজারিতে তাদের মন আর্দ্র হয়। আমরা প্রত্যশা করি, পেট্রোল বোমায় দগ্ধদের যন্ত্রণা দুর্বৃত্তকেও স্পর্শ করুক। বন্ধ হোক রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানো। মুছে যাক মানুষের কান্না।

No comments

Powered by Blogger.