মন্ত্রীর স্ববিরোধী বক্তব্য

আইন-শৃংখলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই কমিটির সভাপতি ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু দাবি করেছেন, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে এবং তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। অবশ্য মন্ত্রী মহোদয় একইসঙ্গে বলেছেন, বর্তমানে যা হচ্ছে তা রাষ্ট্রীয় নাশকতা। তিনি হয়তো ধরতে পারেননি, তার শেষের কথাটি আগের কথার উল্টো হয়েছে অর্থাৎ তিনি স্ববিরোধী হয়ে উঠেছেন।
মাননীয় শিল্পমন্ত্রী কীভাবে বললেন দেশে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে? একটা সরল প্রশ্নই তাকে প্রথমে করা যেতে পারে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকই থাকবে, তাহলে রাতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার কথা কেন বলেছে সরকার? আশ্চর্যই বলতে হয়, প্রায় প্রতিদিনই দেশে কেউ না কেউ দগ্ধ হচ্ছেন, পুড়ছে কোনো না কোনো গাড়ি, ছাত্রছাত্রীরা সিডিউল অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে পারছে না, এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যেতে পারছে না মানুষ, বাস-ট্রেন-অটোরিকশায় চড়লে ভয়ে দুরু দুরু কাঁপে বুক; অথচ মন্ত্রী বললেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক! পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকই হবে, তাহলে বিদেশীদের নাশকতার ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে তাদের বিবেক জাগ্রত করতে চাওয়া কেন? নাশকতা কোথায় হচ্ছে না? আগে দূরপাল্লার বাসে হতো, এখন ট্রেনেও হচ্ছে। খোদ অর্থমন্ত্রীই বলেছেন, রাজধানীর বাইরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। শিল্পমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা যেতে পারে, কোন পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলা যায়? স্বাভাবিকতার প্যারামিটারই বা কী? দয়া করে তিনি যদি স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকের পার্থক্যটা দেখাতেন, আমাদের বুঝতে সুবিধা হতো।
বস্তুত দুই বিবদমান পক্ষ এখন যা বলে চলেছে, তাদের সেই কথাগুলো থেকেই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়। খোদ প্রধানমন্ত্রীও দগ্ধদের স্বজনদের সঙ্গে কেঁদেছেন এবং সবাই যেন বিএনপি নেত্রীকে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে বলেন সেই আহ্বান জানিয়েছেন। ওদিকে বিএনপি নেতৃত্ব বলছে, সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে এবং ইতিমধ্যে অনেকে গুম-খুন হয়েছে। এ কথাগুলো আমাদের নয়। সরকার ও বিরোধী পক্ষের। এসব কথা কি স্বাভাবিকতা নির্দেশ করে? আমরা মনে করি, শিল্পমন্ত্রী তথা সরকারের উচিত সত্য স্বীকার করে নেয়া। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বললে ভুক্তভোগীদের আঘাতটা আরও তীব্র হবে এবং তাতে সরকারের জনপ্রিয়তাও হ্রাস পাবে। তার চেয়ে বড় কথা, সত্য স্বীকার না করলে পরিস্থিতি মোকাবেলা করব কীভাবে? সেক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর মধ্যে শৈথিল্যভাবও চলে আসতে পারে।
দেশ সত্যি সত্যি এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, জাতিসংঘের মহাসচিবও দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন। আমরা মনে করি, বর্তমান অবস্থা আর বেশিদিন চললে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। সেই পরিস্থিতি আমাদের কারও জন্যই কাম্য নয়। বিএনপি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাচ্ছে, ভালো কথা। কিন্তু তারা যদি সেই নির্বাচনে জয়লাভ করে, তাহলে দেশটা তো চালাতে হবে। দেশের যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এখন, তাতে কি ক্ষমতায় গিয়ে এই ক্ষতি পোষানো সম্ভব হবে? এই দেশ আমাদের সবার। ক্ষমতার স্বার্থে দেশের ক্ষতি করা মানে আমাদের সবারই ক্ষতি করা। ফলে রাজনীতিটা এমন হওয়া উচিত নয়, যা দেশের ক্ষতি করতে পারে। আমরা আবারও উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানাই।

No comments

Powered by Blogger.