পাইকারি গ্রেপ্তার-মামলা বন্ধ করুন- ভুল অভিযান কখনোই সঠিক ফল দেয় না

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ ও উপর্যুপরি হরতালের শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলো সন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও বাস্তবে তারা কদাচিৎ অপরাধীদের ধরতে পেরেছে। পুলিশের গ্রেপ্তার-বাণিজ্য কিংবা গয়রহ মামলার পাশাপাশি কথিত বন্দুকযুদ্ধ জনমনে ভরসা না জাগিয়ে বরং আতঙ্কই সৃষ্টি করেছে।
প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১৫ জনের মধ্যে ৯ জনই অরাজনৈতিক ব্যক্তি। অথচ এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত থাকার কথা নয়। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এসব নাশকতার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দায়ী করা হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, তাহলে এই অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা কেন কথিত বন্দুকযুদ্ধের বলি হলেন? আর তাঁরা রাজনৈতিক ব্যক্তি হলেও বিচারের আগেই এভাবে বিচার করার এখতিয়ার কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আছে?
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পূর্বশর্ত। আর সেটি যে বিচারবহির্ভূত হত্যা কিংবা পাইকারি গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে সম্ভব নয়, সে কথা নিশ্চয়ই কর্তাব্যক্তিদের অজানা নয়। তার পরও বন্দুকযুদ্ধ কিংবা ক্রসফায়ারের গল্প চলে আসছে বহুদিন ধরে। এটি অবিলম্বে বন্ধ করুন। হরতাল-অবরোধের নামে যারা নাশকতা করছে, তাদের ধরুন। কিন্তু হুকুমের আসামি করে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবেই বিবেচিত হয়। হুকুমের আসামিরা গ্রেপ্তার হবেন, যাঁরা যাঁরা অপকর্ম করছেন তাঁদের টিকিটিও ধরতে পারবেন না, এই স্ববিরোধিতা অগ্রহণযোগ্য। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনায়ও হাজার হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও আটক করা হলেও বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড তথা বাড়াবাড়ি পরিস্থিতিকে যেমন নাজুক করে তুলেছে, তেমনি প্রকৃত অপরাধীরাও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনের ভাষায়ই কথা বলতে হবে। ভুল অভিযান কখনোই সঠিক ফল দেয় না।

No comments

Powered by Blogger.