পদ্মায় লঞ্চডুবি, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ by আব্দুল মমিন

(পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া যাওয়ার পথে পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি মোস্তফার কিছু অংশ পানির ওপর থেকে দেখা যায়। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে লঞ্চটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়। ছবি: ফোকাস বাংলা) পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া যাওয়ার পথে পদ্মা নদীতে আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এমভি মোস্তফা নামের যাত্রীবাহী একটি লঞ্চ ডুবে গেছে। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করা এক শিশুকে হাসপাতালে নেওয়ার পর সে মারা যায়। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করার খবর নিশ্চিত করেছে। এদিকে এ ঘটনায় ধাক্কা লাগা কার্গো জাহাজ নার্গিস-১-এর লস্কর শাহিনুর রহমান (২১), শহিদুল ইসলাম (২৪) ও জহিরুল ইসলামকে (১৬) আটক করেছে শিবালয় থানার পুলিশ।
পাটুরিয়া ঘাটের সুপারভাইজার জুয়েল রানা জানান, দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল লঞ্চে। লঞ্চটি ১৪০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন।
পাটুরিয়া ফেরিঘাটে পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক ফজলুর রহমান খানসহ (৫৬) এ পর্যন্ত ১৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আরও চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন লাইলি বেগম (৬৫), মো. ইমরান (৮), মো .সেলিম (২২) ও নাসিরউদ্দিন (৪০)।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী জাহাজ আইটি ৩৮৯ ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। ঢাকা থেকে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের ১৫-১৬ জন ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
উদ্ধারকারী জাহাজ থেকে মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঘটনার পরপরই নদীতে থাকা অন্যান্য লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলার গিয়ে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার করে। তবে কতজন এখনো নিখোঁজ, তা জানা যায়নি। এখন পর্যন্ত ২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ছয়জন, নারী পাঁচজন ও পুরুষ ১২ জন।
ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গুরুতর অবস্থায় এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়। শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর শিশুটি মারা যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিকাশ মণ্ডল শিশুটির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
গোয়ালন্দ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার কিয়াম শিকদার জানান, নিহত শিশুটির নাম স্মৃতি। তার বাবার নাম ফারুক শেখ। তাদের বাড়ি এই ওয়ার্ডেই। ফারুক তাঁর ছেলেমেয়ে, স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এ দুর্ঘটনায় তিনি বেঁচে গেলেও তাঁর স্ত্রী ও শাশুড়ি এখনো নিখোঁজ। ছেলেকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে উদ্ধার পাওয়া যাত্রী হাফিজুর রহমান শেখের ভাষ্য, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট থেকে লঞ্চটি দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছাড়ে। রওনা হওয়ার ১৫ মিনিট পরে আড়াআড়িভাবে আসা একটি কার্গো জাহাজ লঞ্চটির মাঝখান বরাবর আঘাত করে। এতে লঞ্চটি উল্টে ডুবে যায়। তিনি লঞ্চের ডেকে ছিলেন। ধাক্কায় তিনি নদীতে পড়ে যান। তিনি আরও জানান, যাঁরা লঞ্চের ডেকে ছিলেন, তাঁরা বের হতে পেরেছেন। তবে ভেতরে থাকা যাত্রীরা কেউ বের হতে পারেননি। হাফিজুরের বাড়ি বাগেরহাটে।
তদন্ত কমিটি গঠন: লঞ্চডুবির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।
কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. শাজাহান। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নৌযান দুর্ঘটনা তদ‌ন্তের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এর আগে যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সেই কমিটিও আজকের দুর্ঘটনার তদন্ত করবে।
এদিকে, লঞ্চডুবির ঘটনার পরপরই নৌপরিবহমন্ত্রী শাজাহান খান সচিবালয় থেকে ঘটনাস্থলে যান এবং উদ্ধারকাজের তদারকি করেন। তিনি এক শোকবাণীতে লঞ্চডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।

No comments

Powered by Blogger.