চরমপন্থা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে- শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদপে নিতে কেরির আহ্বান

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য যথাযথ পদপে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, সব দলের স্বাধীন মতপ্রকাশের েেত্র সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নিরপরাধ মানুষের ওপর হামলা এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিরোধী দলের রাজনৈতিক মত প্রকাশের ওপর বিধিনিষেধÑ কোনোটাই মেনে নেয়া যায় না। স্বাধীন গণমাধ্যম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এ জন্য মুক্ত গণমাধ্যমের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এক সংক্ষিপ্ত বৈঠকে জন কেরি বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিয়ে এ ব্যাপারে মার্কিন সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের যে ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া তার সাথে আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ মন্তব্য অভিন্ন বার্তাই বহন করে। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের মতো জন কেরিও শান্তিপূর্ণ পন্থা তথা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের কথা বলেছেন। এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের পুরনো অবস্থান পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এ বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে তারা এক বছর আগের সেই অগ্রহণযোগ্য একতরফা নির্বাচনকে সঙ্কটের মূল বলে মনে করেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের বাসায় আয়োজিত কূটনীতিকদের এক সভা এবং এফবিসিসিআই আয়োজিত আলোচনা সভায় কূটনীতিকদের বক্তব্যে এই মনোভাবেরই পরিচয় পাওয়া যায়। এর মধ্যে মূলত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে জনগণের ম্যান্ডেট হিসেবে গ্রহণ করে পাঁচ বছর এ সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। কংগ্রেস জোট আমলে ভারতের বক্তব্যে এ ধরনের মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যেত। এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কটের ব্যাপারে কোনো পক্ষ না নেয়া বা হস্তক্ষেপ না করার কথা বলা হয়েছে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্রের বক্তব্যে।
বাংলাদেশে যে একটি সঙ্কট আছে সেটি সবাই বললেও শুধু সরকারই তা মানতে চাইছে না। তারা এটাকে আইনশৃক্সলার সমস্যা হিসেবে দেখিয়ে দমন পীড়ন গুম ক্রসফায়ার এসবের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এ জন্য এখানকার তিনবার ক্ষমতায় যাওয়া রাজনৈতিক দলকে জঙ্গিবাদী দল এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে জঙ্গি নেত্রী হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে এ বক্তব্যকে গ্রহণ করছে না তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকছে না। এ অবস্থায় বিরোধী জোটের অব্যাহত কর্মসূচিতে দেশে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ অচলাবস্থা যত বেশি দিন চলবে ততই ধ্বংসের দিকে এগোতে থাকবে রাষ্ট্র।
আমরা মনে করি, দেশের বর্তমান সঙ্কটকে অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে রাজনৈতিক সঙ্কট হিসেবে। আর এর মূল যে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান সেই বাস্তবতাকেও মেনে নিতে হবে। তা না হলে সমস্যা আরো জটিল রূপ নেবে। সরকার বা বিরোধী জোট কোনো পক্ষেরই চরম পন্থার দিকে এগোনো উচিত হবে না; তা কারো জন্য কল্যাণও বয়ে আনবে না। সঙ্কট সমাধানের জন্য জাতিসঙ্ঘ যে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাতে সাড়া দেয়া উচিত। তা না করা হলে এক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তখন হয়তো কারো জন্য কিছু করার অবকাশ থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.