সংকটের বহুমাত্রিক দিক- সমাধান কোন পথে? by হায়দার আকবর খান রনো

অবরোধ, হরতাল, সহিংসতা, পেট্রলবোমা, ক্রসফায়ার- সবই একসঙ্গে চলছে। তা-ও এক মাসের বেশি। প্রতিদিন অগি্নদগ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আপাতত এই অবস্থায় কোনো উন্নতির আশা দেখা যাচ্ছে না। বিবদমান দুই পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থেকে পরিস্থিতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, যা তাদের নিজেদেরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কদিন আগে (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতার লিড নিউজ থেকে জানা যায় যে, এক মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৭২ জন। তার মধ্যে পেট্রলবোমায় ৩৫ জন, ক্রসফায়ারে ১২ জন। স্বাভাবিকভাবে ধরে নেওয়া যেতে পরে, পেট্রলবোমায় ৩৫ জনের মৃত্যুর জন্য বিরোধী দল বিএনপি দায়ী, আর ক্রসফায়ারের দায় সরকারের কাঁধেই পড়ে। উভয়পক্ষই যে এই মৃত্যুর দায়দায়িত্ব অস্বীকার করবে তা জানা কথা। কিন্তু জনগণ উভয়পক্ষকেই এসব মৃত্যুর জন্য দায়ী মনে করছে। এটাই হলো পাবলিক পারসেপশন।
প্রথমে ধরা যাক বিরোধী পক্ষের কথা। তারা বলছেন, 'ওসব আমরা করছি না'। তবে কে করছে? কে ছুড়ছে পেট্রলবোমা? তারা বলবেন 'ওসব সরকারি দল করছে, আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ আনার অপপ্রয়াস।' মনে পড়ে, ঠিক এমন ধরনের কথা একদিন আওয়ামী লীগও বলেছিল। ২০০৪ সালে যখন এক হরতালের আগের রাতে ঢাকার রাস্তায় এক বাসে গানপাউডার দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল ১১ জনকে। পাবলিক পারসেপশন ছিল ওকাজ সেদিন আওয়ামী লীগই করেছিল কিন্তু আওয়ামী নেতৃত্ব বলেছিলেন, ওই গানপাউডার দিয়েছে সরকারি এজেন্সি, আমরা নই। এখন একই ধরনের কথা বলছেন, আজকের বিরোধী দল বিএনপি। কোনটা বিশ্বাস করব?
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনাটি যেমন রহস্যজনক তেমনি তা গোটা বিষয়কে আরও জটিল করে তুলেছে। রিয়াজ রহমানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সরকার এখনো নিশ্চুপ। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে কেন?
অন্যদিকে বিএনপি যতই অস্বীকার করুক না কেন, পেট্রলবোমার দায় তাকেই নিতে হবে। অথবা বিএনপি নেতৃত্বকে পরিষ্কার ভাষায় দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে হবে, 'যে বা যারা পেট্রলবোমা নিক্ষেপের মতো জঘন্য কাজ করছে, তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া হোক।' এমন বিবৃতি এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বের কাছ থেকে আসেনি।
বিএনপি নেতৃত্ব যদি অভিযোগ করে যে, 'আমাদের জন্য শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলনের সব পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে', তাহলে সেই বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। একমত হবেন সরকারদলীয় লোকজন অথবা দলকানা বুদ্ধিজীবী বাদে সবাই। বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার বাসায় বিষাক্ত গ্যাস নিক্ষেপ, বাড়ির সামনে বালির ট্রাক দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি, বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া- সরকারের এসব ফ্যাসিসুলভ আচরণের তীব্র নিন্দা জানাবে সব গণতান্ত্রিক মানুষ। কিন্তু তাই বলে সন্ত্রাসী পথ অনুমোদন করা যায় না। পৃথিবীতে নানা ধরনের সন্ত্রাসবাদী কাজের অভিজ্ঞতা আছে। এনারকিজম, নিহিলিজম, ব্লঙ্কিজম, টেররিজম- নানা ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতার কথা ইতিহাস থেকে জানা যায়। সর্বক্ষেত্রে সন্ত্রাসী হামলার বিশেষ টার্গেট থাকে। সাধারণত রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো সংস্থা অথবা তাদের চোখে দুশমন কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি টার্গেট হন। কিন্তু কোথাও সাধারণ মানুষকে টার্গেট করার মতো ঘটনা নেই। নিরীহ বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারার দৃশ্য কোথাও দেখা যায়নি। এমন কি সন্ত্রাসী আন্দোলনের সংজ্ঞার মধ্যেও এটা পড়ে না।
অবশ্য এই কথা দ্বারা যেন আমাকে ভুল বোঝা না হয়। আমি কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সমর্থন করি না। কারণ আমি মার্কসবাদী। মার্কসবাদ নিপীড়িত জনগণের, মেহনতি মানুষের গণবিপ্লবে বিশ্বাস করে, ব্যক্তি সন্ত্রাসবাদে নয়।
এখন যে ধরনের সন্ত্রাস চলছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। অবরোধের কারণে যে শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটাও জাতির জন্য কম ক্ষতির নয়। আমরা দেখেছি, বিএনপি ধনীর সন্তান, যারা 'এ', 'ও' লেভেল পরীক্ষা দেবে তাদের জন্য ছাড় দিলেও এসএসসি পরীক্ষার জন্য ছাড় দেয়নি। খুব স্বাভাবিক। এটা তাদের শ্রেণির স্বার্থের সঙ্গেই সঙ্গতিপূর্ণ। এদিক দিয়ে আবার বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুইয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুই দল ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধি। বিগত সংসদ অথবা আজকের ভুয়া ভোটে গঠিত সংসদ সবই ধনিক শ্রেণির ক্লাব মাত্র। খালেদা জিয়ার নাতনি যেমন মালেশিয়ায় পড়ে, তেমনি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির নেতাদের ছেলে-মেয়েরা হয় বিদেশে পড়ে, না হয় 'ও' লেভেল 'এ' লেভেল পড়ে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন জামায়াতের নেতাদের সন্তানরাও বিদেশে পড়ে। নিশ্চিতভাবেই তারা মাদ্রাসায় পড়ে না। এখানে আরও উল্লেখ্য, ১৯৯৪-৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে হরতাল করেছিল, তখনো কিন্তু তারা পরীক্ষার জন্য ছাড় দেয়নি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাতায় (৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) সাংবাদিক, লেখক কাজী সিরাজ লিখেছেন 'এবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অবরোধ-হরতালে এ পর্যন্ত দুই দিন পরীক্ষা পিছিয়েছে, সেবার পিছিয়েছিল দুই মাস।'
সাধারণ জনগণের প্রতি সামান্যতম দরদ নেই, গণবিরোধী ধনিক শ্রেণির এই দুই দলের। সেজন্য দেখা যাচ্ছে যে, আন্দোলনকারীরা যেমন জনগণকে সম্পৃক্ত করে রাস্তায় নামতে পাড়ছেন না, চোরাগোপ্তা, বোমাবাজির পথ নিয়েছেন। সরকার পক্ষও তেমনি র্যাব-পুলিশ ছাড়া জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলতে পারছেন না। আন্দোলনকারীরা বলবেন, পথে নামলেই গ্রেফতার করে, কীভাবে শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন হবে? এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। সত্যিকারের দেশপ্রেমিক সংগ্রামী রাজনৈতিক দল প্রতিকূল অবস্থায় জনগণকে আন্দোলনের মাঠে নামাতে পারে। এখন হয়তো বিএনপির জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি (উপজেলা নির্বাচনে সেটাই প্রমাণিত হয়)। কিন্তু তাই বলে বিএনপির ডাকে জানবাজি রেখে মানুষ রাস্তায় নামবে কেন?
অন্যদিকে বিরোধী জোটের সহিংসতার বিরুদ্ধে লাখ লাখ মানুষকে সমবেত করতে পারছে না কেন সরকার? তারা তো ক্ষমতায় আছে। তারপরও সরকারকে কেন শুধু র্যাব-পুলিশের ওপর নির্ভর করতে হবে? কারণ জনগণ সরকারের সঙ্গে নেই। এমনকি নিজের দলও নেই। তৃণমূল পর্যায় ও মাঝারি পর্যায় সরকারি দল ব্যস্ত টেন্ডারবাজি নিয়ে, লুটপাট ও দুর্নীতি নিয়ে। আবার ভাগ নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি খুনাখুনিতেই ব্যস্ত। অন্য কাজে মন দেওয়ার প্রয়োজন কী? সময়ই বা কোথায়? আইন শালিস কেন্দ্রের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, গত ছয় বছর আওয়ামী রাজত্বকালে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়েছে এক হাজার একশত এগারো বার। তাতে নিজেদের মধ্যে খুনাখুনিতে নিহত হয়েছে ১৭২ জন, আহত হয়েছেন ১৩ হাজারেরও বেশি। এহেন দল কি দেশ উদ্ধার করবে?
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই সময়কালে বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলেও তারাও কম যায় না। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তাদের নিহতের সংখ্যা ৩৪ জন এবং আহতের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৬২ জন।
লুটেরা শ্রেণির প্রতিনিধি এই দুই দল দিয়ে আর কিই বা আশা করা যায়। এখন তারা ক্ষমতার কামড়াকামড়িতে এতই হিংস হয়ে উঠেছে যে, মানুষ আজ অগি্নদগ্ধ হচ্ছে, মানুষ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। একদল যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় যেতে যায়। সে জন্য পেট্রলবোমা ব্যবহারে আপত্তি নেই। অপরদল প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে দখল করা গদি অাঁকড়ে রাখার জন্য ফ্যাসিবাদী আচরণ করছে। তাই গুম-খুনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে। আইনবহির্ভূত হত্যা এর আগেও ছিল। আইন ও শালিস কেন্দ্রের পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারে ২০১৩ সালে মারা গেছেন ৭২ জন, ২০১৪ সালে ১২৮ জন। ২০১৪ সালে গুম ও গুপ্তহত্যার শিকার ৮৮ জন। যার মধ্যে ২৩ জনের লাশ পাওয়া যায়নি। এদের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ রাজনৈতিক হত্যা বলে অনুমান করা অসঙ্গত নয়।
সরকার ও সরকারি দল বর্তমান সংকটকে রাজনৈতিক সংকট বলেও মানতে চাচ্ছেন না। তাই রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার ইচ্ছা নেই। এমনকি এক সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে- এমন কথাও শুনিয়েছেন বারবার। জানি না কয় সপ্তাহে এক সপ্তাহ হয়। এতদিন পরে হলেও অর্থমন্ত্রী পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঢাকা স্বাভাবিক মনে হলেও জেলাগুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ। চোখ বুজে থাকলেই কি প্রলয় বন্ধ হয়? আমরা কি দেখছি না সারা দেশের পরিস্থিতি এবং সেই সঙ্গে সরকারের নিদারুণ ব্যর্থতা। এর প্রধান কারণ সরকার জনগণের দ্বারা সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করার পরিবর্তে খুব বেশি মাত্রায় পুলিশ-র্যাবের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এর ফলে পুলিশ-র্যাব মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতাশীল হয়ে উঠেছে। দেশ যেন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
এই মারাত্মক পরিস্থিতির কিছু লক্ষণ পাওয়া গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বড় কর্তাদের কথাবার্তা থেকে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেই বসলেন যে, ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন সংক্রান্ত এই কথা বলার অধিকার তাকে কে দিল? এরকম রাজনৈতিক বক্তব্য যে অনধিকার চর্চা তাই নয়, রীতিমতো অপরাধও বটে। কিছুদিন আগে বিজিবি প্রধানের এক বক্তব্যকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিক-উল হক 'আইনের পরিপন্থী' বলে মনে করেছেন। পুলিশ এখন রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলছেন ও আচরণ করছেন, অন্যদিকে রাজনীতিবিদরা পুলিশের মতো কথা বলছেন। সরকারি জোটের জাসদের এক সংসদ সদস্য বলেই বসলেন, 'এবার পায়ে না, বুকে গুলি চালানো হবে'। কোন পরিস্থিতিতে দেহের কোন অংশে গুলি চালাবে, তা পুলিশ ঠিক করবে। এর জন্য নির্দিষ্ট বিধিমালাও আছে। সরকারি সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলে পার পেয়ে যান। কিন্তু বিরোধী পক্ষের কেউ এই ধরনের কথা বললে তাকে নিশ্চয়ই 'হুকুমের আসামি' করা হতো। পুলিশের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে র্যাব-পুলিশের ঔদ্ধত্যও বেড়ে গেছে। র্যাবের মহাপরিচালক বলেছেন, 'অপরাধ দমন করতেই সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অস্ত্র দিয়েছে, হাডুডু খেলার জন্য নয়।' এ ভাষা তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সেবক পুলিশের ভাষা নয়। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি বলেছেন, 'একটি লাশ পড়লে এর পরিবর্তে দুটি লাশ ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা পুলিশের আছে।' না নেই। এমন ক্ষমতা দেশের আইন পুলিশকে দেয়নি। আর এই ভাষায় কথা বলার অধিকারও তার নেই।
পুলিশকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়ার ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও গ্রেফতার বাণিজ্য শুরু হয়েছে ব্যাপক হারে। এই প্রসঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটি প্রতিবেদন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'জামিনের জন্য আওয়ামী লীগে প্রত্যয়নপত্র-বোমাবাজরা সৎ ও মেধাবী'। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হাতে নাতে ধরা পড়া বোমাবাজদের জামিনে ছাড়িয়ে নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা, তাদের পক্ষে প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছেন যে, আসামিরা সৎ, মেধাবী এবং আওয়ামী লীগের সদস্য। এরকম বেশ কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, 'সারা দেশে এমন শত শত আসামির পক্ষে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের জামিন করে ছাড়িয়ে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।'
এ বড় বিপজ্জনক কথা। এখানে তিনটি সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারি। ১. বোমা নিক্ষেপকারীরা আসলেই আওয়ামী কর্মী। বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপানোর জন্য তারাই বোমাবাজি করছে। একথা মানলে বিএনপির অভিযোগ সত্য হয়। ২. তারা আসলে আওয়ামী কর্মী নন। বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী নেতারা প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছেন। এটা সত্য হলে বলতে হবে যে, দুর্নীতিবাজ দল দ্বারা এবং সেই দলের সরকারের দ্বারা আর যাই হোক দেশের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ৩. আসলেই আসামিরা নির্দোষ, হয় তো আওয়ামী কর্মীও হতে পারে, গ্রেফতার বাণিজ্যে লিপ্ত পুলিশ গণহারে গ্রেফতার করছে। সেক্ষেত্রে এমন পুলিশ দিয়েও পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। সব দিক বিবেচনায় আনলে এটা বলতেই হবে যে, পরিস্থিতি খুবই জটিল। এর সমাধান খুঁজতে হবে রাজনৈতিকভাবে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে। উভয়পক্ষের গোঁয়ারতুমির পরিণতিতে চূড়ান্তভাবে কেউই জিতবে না। পরাজিত হবে দেশ।
আমি আশা করব সবারই শুভবুদ্ধির উদয় হবে। সমস্যা এত জটিল ও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, এখন সব কার্যকর রাজনৈতিক দল (জামায়াত বাদে) এবং বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে ঐকমত্যে আসার উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় ভিত্তিতে ব্যাপক আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক আচরণ সংক্রান্ত সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে।
বিএনপিকে অবরোধ প্রত্যাহার করতে হবে। সহিংসতা পরিত্যাগ করতে হবে। সরকারকে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সবার জন্য সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দিতে হবে। বিরোধীপক্ষের নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। শেষ কথা বলবে জনগণ। দুই দলের বাইরেও আছে বিশাল জনগণ এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তি ও রাজনৈতিক দল। সবাইকে নিয়েই কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছতে হবে। এটা কি খুব বেশি চাওয়া হয়ে গেল?
এটুকু যদি আমরা না করতে পারি তাহলে আজকের সংকটের পরিণতি কোথায় দাঁড়াবে তা বলতে পরব না। তবে এটুকু বলতে পারি যে, এর পরিণতিতে জনগণ বেশ দীর্ঘদিনের জন্য হারাবে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সেই সময়টা খুবই দীর্ঘ হতে পারে।
লেখক : রাজনীতিক।

No comments

Powered by Blogger.