‘ফিরিয়ে দাও সেই শহীদ মিনার’

(বগুড়ায় আগের শহীদ মিনারের সঙ্গে সংগতি রেখে বর্তমান জায়গায় শহীদ মিনার নির্মাণের দাবিতে শহীদ খোকন পার্কে গতকাল প্রতীকী অনশন করেন ভাষাসৈনিক মাহফুজুল হক। অনশনে তাঁর পরিবারের সদস্যরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেন l প্রথম আলো) অ, আ, ক, খ বর্ণমালা লেখা শহীদ মিনার ফিরিয়ে দিতে কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছেন। প্রতিবছর শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিবার নিয়ে বগুড়া শহরের শহীদ মিনার চত্বরে দিনভর অনশন করে চলেছেন তিনি। সংগ্রামী এই মানুষটি হলেন ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুল হক। প্রায় এক যুগ আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বগুড়া শহরের শহীদ খোকন পার্কে মাহফুজুল হক ও তাঁর সহযোদ্ধাদের হাতে গড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ভেঙে ভিন্ন নকশার শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। অ, আ, ক, খ বর্ণমালার বদলে সেখানে লেখা হয় ব, ন, প। এর পর থেকেই মূল শহীদ মিনার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন মাহফুজুল হক।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল ভোর থেকেই বগুড়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনশনে বসেন মাহফুজুল হক। এ সময় অনশনকারীদের হাতে ছিল মূল শহীদ মিনারের ছবি এবং ‘ফিরিয়ে দাও সেই শহীদ মিনার’ লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার।
মাহফুজুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বায়ান্ন সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় গ্রেপ্তার হয়ে দুই বছর কারাভোগ করতে হয় তাঁকে। ১৯৫৪ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হলেও তৎকালীন সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজ জেলায় আর ফেরা হয়নি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। ভাসানীর পরামর্শেই জেল থেকে বেরিয়ে সোজা চলে আসেন বগুড়া শহরে। সেখানে থিতু হয়ে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ায় তাঁর বগুড়া শহরের বাসা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে শহরের সাতমাথার পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে নির্মাণ করেন সেই শহীদ মিনার।
পরবর্তী সময়ে সেটির নামকরণ করা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও শহীদ খোকন পার্ক। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আরেক দফা গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে জেল থেকে মুক্ত হয়ে ন্যাপের (মোজাফ্ফর) রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। রাজনীতির পাশাপাশি রক্ত দিয়ে অর্জিত বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে এবং বাংলা বর্ণমালার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেছে নেন অঙ্কনশিল্পীর কাজ। এ পেশাতেই কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি জীবনের প্রায় ৩০টি বছর।

No comments

Powered by Blogger.