প্রিয়জনের সন্ধান চেয়ে কান্নায় বুক ভাসালেন স্বজনেরা

পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মারজান। ঢাকার মোহাম্মদপুরে আত্মীয়ের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে তাকে। সেই থেকে বাবার মুখ দেখছে না দুই সন্তান হাসিম ও সাবিহা।  অপর দিকে ২৩ দিন ধরে স্ত্রী ও কাজের মেয়েসহ নিখোঁজ একই উপজেলার বাসিন্দা দলিল লেখক আল আমীন। তাদেরও বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। তাদের দুই শিশুসন্তান ও স্বজনেরা ব্যাকুল তাদের জন্য।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া এ চারজনের সন্ধানে কান্নায় বুক ভেসে যাচ্ছে স্বজনদের। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেস কাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই স্বজনেরা তাদের প্রিয়জনকে ফিরে পেতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন। এ সময় তাদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে প্রেস কাবের ভিআইপি লাউঞ্জ। সংবাদ সম্মেলনে মিঠাপুরের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মারজানের স্ত্রী রোকাইয়া খানম লুকি লিখিত বক্তব্যে বলেন, তার স্বামী গত ৩১ জানুয়ারি উপজেলার কাজে ঢাকায় আসেন। মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। এর পরদিনই ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে তার স্বামীকে ওই বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো আদালতে সোপর্দ করা হয়নি এবং পরিবারের কাছেও ফেরত দেয়া হয়নি। তিনি জানান, স্বামীর খোঁজে তিনি ও পরিবারের লোকজন পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাবের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারা কোনো সন্ধান দিচ্ছে না। এ অবস্থায় আবদুল বাসেত মারজানের ফিরে আসা ও জীবন নিয়ে শঙ্কিত তারা। স্বামীকে ফিরে পেতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন তিনি।  এ দিকে ২৩ দিন ধরে বাবা-মাকে খুঁজছে তাদের শিশুসন্তানরা। দুই নাতিকে নিয়ে পুত্র ও পুত্রবধূর সন্ধানে সংবাদ সম্মেলনে ছুটে আসেন বৃদ্ধ শাহজাহান। এ সময় বাবা-মায়ের জন্য হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে শিশু রাইয়ান ও আল্পনা। সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি জানান, গত ১৪ জানুয়ারি সকালে তাদের ঘুম ভাঙে চিৎকার আর হাঁকডাকে। দরজা খুলতেই একদল লোক হুড়মুড় করে বাসায় ঢুকে পড়ে। কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আগন্তুকেরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক বলে পরিচয় দেন। ছেলে দলিল লেখক আল আমীন, তার স্ত্রী বিউটি বেগম ও বাড়ির গৃহপরিচারিকা মৌসুমীকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে আল আমীন, তার স্ত্রী বিউটি ও কাজের মেয়ে মৌসুমী কোথায় আছে তারা কিছুই জানেন না। শাহজাহান বলেন, আমি বৃদ্ধ অশিক্ষিত। আমি কোনো রাজনীতি করি না। আমার ছেলে দলিল লেখক।  সেও কোনো রাজনীতি করে না। আমার পুত্রবধূ  বিউটি ও কাজের মেয়ে মৌসুমী কী অপরাধ করেছে। এর জবাব কেউ দিচ্ছে না। পুলিশ, ডিবি, র‌্যাবের কাছেও ধরনা দিয়ে তাদের সন্ধান করতে পারেননি।

No comments

Powered by Blogger.