টানা অবরোধ-হরতাল, সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে

বিএনপি এবং তার মিত্র দলগুলো দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের যে চরম সহিংস পন্থা অনুসরণ করছে, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দেশ নিয়ে যারা বিন্দুমাত্র ভাবেন, মানুষের প্রতি যাদের সামান্যতম দরদ-সহানুভূতি রয়েছে, তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারেন না। কথায় কথায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণ তো নয়ই, এমনকি দেশের কোথাও কর্মী-সমর্থকদের পর্যন্ত সামান্যতম অংশগ্রহণ নেই। অথচ গায়েবি ঘোষণা দিয়ে টানা অবরোধের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে হরতাল। রোববার থেকে ২০ দলীয় জোট একটানা ৭২ ঘণ্টা হরতাল আহ্বান করেছিল। সর্বমহল থেকে অনুরোধ এসেছিল প্রায় ১৫ লাখ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে পরীক্ষার সময় হরতাল প্রদান না করতে। কিন্তু দেশবাসী বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে দেখল যে, শুভ ও সুন্দর কোনো পরামর্শে কর্ণপাত করায় তাদের সামান্যতম আগ্রহ নেই। সরকার পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সোমবারের পরীক্ষা শুক্রবারে নিয়েছে। নতুন সূচি অনুযায়ী আজ বুধবার থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা। হরতালের কারণে সে পরীক্ষার জন্য নতুন তারিখ নির্ধারিত হয়েছে শনিবার। হরতাল-অবরোধে যেহেতু জনসমর্থন নেই এবং জনজীবনও অনেকটা স্বাভাবিক; তাই এ ধরনের কর্মসূচির মধ্যেও পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু আন্দোলনের নামে যে ধরনের সহিংসতা আমরা দেখছি, তাতে কোমলমতি ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলা যায় না। কোনো দায়িত্বশীল সরকার এ পথে চলতে পারে না। মঙ্গলবার ভোররাতে গুপ্তঘাতকের মতো কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কাছে যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে সাতজনকে। বাসের ভেতরেই এসব হতভাগ্য যাত্রীর শরীর পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আহত ও দগ্ধ হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন। এ কোন দেশে বসবাস করছি আমরা_ সর্বত্রই আজ এ প্রশ্ন। একই সঙ্গে প্রশ্ন_ সরকার কী করছে? তারা কেন নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে? যারা যাত্রীবাহী ট্রেন-বাস-লঞ্চে আগুন দিচ্ছে, আন্দোলনের নামে পাখির মতো মানুষ হত্যা করছে, তারা কোনো রাজনৈতিক শক্তি নয়। সরকারকে শক্ত হতেই হবে। এদের কঠোর হস্তে দমন করা হলে তা কেন রাজনৈতিক নিপীড়ন হবে? এরা সন্ত্রাসী এবং সেভাবেই তাদের প্রতি আচরণ করতে হবে। আমরা মনে করি, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনার জন্য যা কিছু করা দরকার_ সর্বপ্রথমে চাই জনজীবনে স্বস্তি। আর সেটা করার প্রধান দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। সংবিধানও তাদের ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করেছে। বিএনপি এবং তার মিত্ররা সরকারের সঙ্গে সংলাপ চাইছে। দুই পক্ষের আলোচনা কোনো না কোনো পর্যায়ে শুরু হয়েছে_ এমন খবর জানতে পারলে দেশবাসীর জন্য সেটা হবে পরম সন্তোষের বিষয়। তবে সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করার মূল দায়িত্ব 'আন্দোলনরত' ২০ দলের। জানি না, আর কত ক্ষতি হলে তারা হুঁশে ফিরবেন।

No comments

Powered by Blogger.