যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে পুলিশ। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে দ্বিতীয় দফায় এ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কার্যালয়ের আশপাশে বাড়ানো হয়েছে পোশাকধারী  ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা। সোমবারের ধারাবাহিকতায় গতকালও খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে কাউকে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। গ্রেপ্তার আতঙ্কে চেয়ারপারসনের কার্যালয়মুখী হননি দলের নেতাকর্মীরা। সেখানে যারাই যাচ্ছেন তাদের হয় গ্রেপ্তার, নয় ফেরত দেয়া হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন ২০দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। কিন্তু মূল ফটকের সামনে তাকে আটকে দেয় পুলিশ। চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে তাকে গেট থেকে সরিয়ে আনে। দীর্ঘ ১০ মিনিটের বেশি সময় তিনি এ ঘেরাও অবস্থায় ছিলেন। তারপর তাকে ফিরে যেতে বলে পুলিশ। এর আগে সকালে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে ঘেরাও করতে গুলশান-২ এ জড়ো হয় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রজন্ম লীগের সভাপতি ফাতেমা জলিল সাথী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট স্বপন চৌধুরীর নেতৃত্বে শতাধিক কর্মী খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করতে যান। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপে গুলশান-২ গোলচত্বরে বিক্ষোভ করে তারা ফিরে যান। পরে বেলা ১১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের সামনে যান মুফিদুল ইসলাম নামে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের এক নেতা। সেখানে গিয়ে তিনি হঠাৎ করেই কোমর থেকে একটি অস্ত্র বের করে খালেদা জিয়াকে গুলি করার হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। পরে সেখানে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে সরিয়ে দেন। পুলিশ সূত্র জানায়, মুফিদুল ইসলামের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রটি লাইসেন্স করা। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, টেলিফোন, কেবল টিভি, ইন্টারনেট লাইন বিচ্ছিন্ন ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া সরকার। পরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও অন্যগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রাপ্তে: বিএনপি
চলমান আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত বলে দাবি করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশের সব গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক জনতা ঐক্যবদ্ধ। সংবিধান-স্বীকৃত সব মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার, ভোটের অধিকার, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা ও ভোটারবিহীন জবরদখলকারী অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে চলমান গণ-আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত প্রায়। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত পদত্যাগ করে সুষ্ঠু ও অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত চলমান শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য জনদাবির পক্ষে আমরা দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছি। বিবৃতিতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সব নেতাকর্মী ও গণতন্ত্রকামী সব দেশপ্রেমিক জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালনের জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিদিন আন্দোলনকারীদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে কালো রাজপথ। সোমবারও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার জামায়াত নেতা সাইদুল ইসলামকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আইনের ছাত্র আরিফুল ইসলাম মুকুলকে একইভাবে ডিবি পুলিশ হত্যা করেছে। রূপনগর থানা বেড়িবাঁধ এলাকায় লাশ ফেলে রেখে গেছে। আমরা ঠা-া মাথার এসব হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করছি। দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীদের এ আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যাবে না। সমগ্র দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করলেও এ অবৈধ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। বিবৃতিতে বলা হয়, গণতন্ত্রমুক্তি আন্দোলনকে কলুষিত করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে এ অবৈধ সরকার। প্রতিদিন সরকারি এজেন্টদের মাধ্যমে পেট্রলবোমা হামলা চালিয়ে তার দায়দায়িত্ব বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। কিছুসংখ্যক সরকারি মদতপুষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এ অপপ্রচারে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিন্তু আমরা বারবার দাবি করছি- এসব জঘন্য কর্মকা-ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার করা হোক। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট গণতান্ত্রিক অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করে। কষ্ট স্বীকার করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রাম, হরতাল-অবরোধ অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসী, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সব নেতাকর্মী ও গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণকারী সব রাজনৈতিক শক্তি ও ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিএনপি। এদিকে অবরোধের পাশাপাশি চলমান হরতাল কর্মসূচি আগামীকাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে ২০ দল। গতকাল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, গণদাবি মেনে নেয়ার কোন ঘোষণা না দিয়ে সরকারের পেটোয়া যৌথবাহিনী নরহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশব্যাপী ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে খুন, গুম, হামলা-মামলা ও গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে। সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ এবং বিচারব্যবস্থার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে। ২০ দলের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সব সিনিয়র নেতা এবং বরেণ্য বিশিষ্ট নাগরিকদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যা মামলা করছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে দেশব্যাপী চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি চলমান ৭২ ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ হরতাল আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.