সেনাবাহিনী ছাড়া দেশে জরুরি অবস্থার দাবি সংসদে

হরতাল অবরোধ কর্মসুচীতে পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারাসহ চলমান সহিংসতা বন্ধে, বিশেষ করে নির্বিঘ্নভাবে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের স্বার্থে এক-দেড় মাসের জন্য সেনাবাহিনী ছাড়া  জরুরি অবস্থা জারি করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি। আর ২০ দলের বর্তমান আন্দোলনকে ইনসার্জেন্সি (বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকান্ড) আখ্যায়িত করে এটিকে মোকাবেলায় ভারতের সন্ত্রাস দমন আইন টাডা আইন (টেরোরিষ্ট অ্যান্ড ডিসট্রাপটিভ অ্যাকটিভিটিষ্ট (প্রিভেন্ট) অ্যাক্ট) করে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। দেশে ল ইনসার্জেন্সি চলছে দাবি করে কঠোর আইনের দাবি করেন জাসদের মঈন উদ্দিন খান বাদলও।
সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে আজ সন্ধ্যায় এই আহবান জানান সংসদ সদস্যরা।  মাগরিবের বিরতির পর সংসদের বৈঠক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে পয়েন্ট অব অর্ডারে কুমিল্লায় পেট্রোল বোমায় ৭জন নিহত হওয়ার ঘটনাসহ চলমান সহিংসতা এবং এসএসসি পরীক্ষা  নিয়ে সরকারি দল, জাতীয় পার্টি ও জাসদের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী পয়েন্ট অব অর্ডারে ফোর নিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া একের পর এক মিথ্যাচার করেছেন। মিথ্যা বলার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে তার বিচার হয়েছে, তার ছেলে মারা গেছেন। তিনি কী আল্লার ইশারাও বোঝেন না? এরপরেও কুমিল্লায় গভীররাতে বাসে পেট্রলবোমা দিয়ে ঘুমন্ত সাতজন মানুষকে পুড়িয়ে মারলেন!
সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত  বলেন, বাংলাদেশ দাউ দাউ করে জ্বলছে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে। ক্ষমতার লোভে মানুষ করছে।  মইন উদ্দিন খান বাদলের মতের সঙ্গে একমত পোষন করে বলতে চাই, দেশে ইনসার্জেন্সি চলছে। বিশ্বের কোথাও ইনসার্জেন্সি  বিদ্যমান আইনে মোকাবিলা করা যায়না।  নতুন আইন দিতেই হবে। ভারতে বিচ্ছিনতাবাদীদের দমনে টাডা আইন করা হয়েছিল। যে আইনে অপরাধীদের দীর্ঘমেয়াদে গ্রেপ্তার করে এবং জামিন না দিয়ে বিচার করা হয়েছে। আমাদেরও সময় এসেছে, প্রচলিত আইন বা বিশেষ আইন দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করা সম্ভব নয়। কোনরকম দয়া নয়, অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এই সংকট মোকাবেলা করতে হবে। কারণ তাদের আন্দোলন বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদীদের সংগ্রাম। খালেদা জিয়া ও জামায়াত এই দেশে ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই সংসদ নিরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারে না। শুধু আহাজারি ও বিলোপ করে নয়, এই অবস্থা মোকাবেলায় অবিলম্বে টাডা জাতীয় নতুন আইন করে দ্রুত সংকট সমাধান করতে হবে। গণতন্ত্র নিরঙ্কুশ করতে ওদের নির্মূল করতে হবে।
নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, এতদিন ধরে অবরোধ-হরতাল চলছে। দেশবাসী হতাশ। কার্যকর ও স্বার্থক যৌথ অভিযান দেখতে চাই। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি’র সঙ্গে যৌথবাহিনীতে সেনাবাহিনীকেও অন্তর্ভূক্ত করা হোক। সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া হোক। তাতেও না থামলে জরুরি অবস্থা দেয়া হোক, তবে সেনাবাহিনী নামানোর দরকার নেই। হরতাল-অবরোধসহ এই নাশকতা যেন চলতে না পারে, সেজন্য জরুরি অবস্থা দরকার। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার সময়টাতে জরুরি অবস্থা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
জাসদের মাইন উদ্দিন খান বাদল ফোর নিয়ে বলেন,  খালেদা জিয়াকে যদি গণতান্ত্রিক মনে করা হয় তাহলে কোন না কোনভাবে আলোচনা সাজানো যেতে পারে। যদি মনে করেন খালেদা জিয়া সন্ত্রাসী তাহলে তার সাথে কোনভাবেই আলোচনার টেবিল সাজানো যায় না। দেশে এখন যেটা চলচে সেটা হচ্ছে লো ইনসার্জেন্সি। এটা সাধারণ আইনে দমন করা যায়না বিশেষ আইন করে দমন করতে হবে। খালেদা জিয়া যে অন্যায়  আচরণ করেছেন খালেদা জিয়া এক মূহুর্তও বাইরে থাকতে পারেন না। কেস করতে চান। টেলিফোনের আলাপই যথেস্ট। সোজা কথা তার স্থান কাশিমপুর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আক্রোশ তো এই সংসদের ওপর। আমরা সাড়ে তিনশ সদস্য এই সংসদে আছি। খালেদা জিয়াকে বলবো- আপনি প্রয়োজনে আমাদের ওপর আক্রমণ করুন। তারপরেও সাধারণ মানুষকে বোমা মারা বন্ধ করুন।
আওয়ামী লীগের ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা খালেদা জিয়ার টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করেছে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ এগুলোর মাধ্যমেই খালেদা জিয়া মানুষ মারার নির্দেশ দিচ্ছিলেন। যা ইতোমধ্যে ইউটিউবে এসেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। এসিড সন্ত্রাসের মতো পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ মারার বিরুদ্ধেও আইন করার দাবি জানান তিনি।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, একজন আন্ডারমেট্রিক সন্ত্রাসী ও জঙ্গি নেত্রীর কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জীবন আজ হুমকির মুখে পড়েছে।
নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, তারেক রহমান পোপনে গুন্ডা-পান্ডা ভাড়া করে পাষন্ডের মতো মানুষ হত্যা করছেন। খালেদা জিয়ার রাজনীতি বন্ধ করে দিতে হবে।
স্বতন্ত্র সদস্য হাজী সেলিম বলেন, জ্বলছে দেশ-পুড়ছে মানুষ, কিন্তু সরকার নিবর। সময় এসেছে, জনগণও সরকারকে বলছে- একটা কিছু পদক্ষেপ নেয়ার জন্য।
এই ইস্যুতে পয়েন্ট অব অর্ডারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আসম ফিরোজ, তাহযিব আলম সিদ্দিকী, মনিরুল ইসলাম ও তালুকদার মো. ইউনুস, শওতকত চৌধুরী, নজরুল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.