শ্বাস যদি নেই সুখে জীবন থাকবে আনন্দে by শুভাগত চৌধুরী

মনে হতে পারে স্বাভাবিকভাবেই যা হয়, যা ঘটে জীবনে, তা আবার শিখতে যাওয়া কেন? শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল ঠিকমতো জানলে, শিখলে জীবন আমূল পালটে যেতে পারে। এই তো এক্ষুনি শরীরের মধ্যে বিশেষ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।
যেদিন জন্ম হল সেদিন থেকেই তো সেই ঘটনার শুরু। নবজাতক শিশুটি কেঁদে উঠল শ্বাসক্রিয়া সূচনার আনন্দেই, নয় কি?
আমরা শ্বাস নিচ্ছি, ছাড়ছি।
প্রশ্ন করি, নিজেকেই, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্যকর তো?
দেহে তো অনেক কিছুই ঘটছে, এর মধ্যে একটি হল শ্বাসক্রিয়া। আমাদের ফুসফুস ভরে যায় বাতাসে, সজীব হয়ে ওঠে আমাদের দেহে প্রবাহিত রক্তস্রোত মহামূল্যবান অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে। সম্পূর্ণ জীবনে তো এ কাজই চলছে, কিন্তু শ্বাসক্রিয়ার একজন বিশেষজ্ঞ বলে নিজেকে দাবি করা যায় না তো। আমরা অনেকেই জানি না, অক্লেশে, অনেক সাবলীলভাবে শ্বাসক্রিয়া ঘটতে সাহায্য করে কোন পেশিটি? প্রতিটি নিঃশ্বাস কতক্ষণই বা স্থায়ী হয়? আমরা কি আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে একটু মনোযোগী হয়েছি? মনে হয়, শ্বাসকর্ম সম্বন্ধে আর একটু বেশি করে জানি।
শ্বাসক্রিয়া পুরো শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়াকে দেখার চেষ্টা করি।
শ্বাসগ্রহণ শ্বাস গ্রহণের জন্য ব্যবহার করতে হয় মধ্যচ্ছদা পেশি। একে আবিষ্কার করা চাই। প্রথমে বক্ষফলক, এরপর একটু নিচে যাই কয়েক ইঞ্চি, এরপর আর কোনো হাড় নেই, বক্ষপিঞ্জরের নিচে, তবে নাভির উপর পর্যন্ত।
মধ্যচ্ছদা বা diaphragm হল শ্বসনপেশি, কিন্তু একে আমরা ব্যবহার করি না। বরং আমরা শ্বাস নেই একটু ওপরে বুকের মধ্যে, এতে অনেক চেষ্টা প্রয়োজন আর শ্বাসও বেশ অগভীর হয়। এ যেন পা দুটি না ভেঙে ভারি কোনো কিছু উত্তোলন করা, ভূমি থেকে। আমাদের পিছ-কোমরের ওপর কোনো চাপ না ফেলে আমাদের পা দুটি ভারি ওজন তুলতে কতই না সাহায্য করে। সামান্য কষ্ট ও টেনশন ছাড়াই এ মধ্যচ্ছদা পেশির সাহায্যে গভীর তৃপ্তিকর শ্বাসকর্ম ঘটে যায় অক্লেশে। শ্বাস যখন নেই, শরীরে যে চেতনা বা অভিজ্ঞতা হয়, একে নজর করা চাই। নাকের দুটি ফুটোর মধ্য দিয়ে বাতাস ঢুকছে, অনুভব করি, লক্ষ করি মধ্যচ্ছদা পেশিকে, যখন ধীরে ধীরে এটি ঠেলে ওঠে এবং প্রসারিত করে পাকস্থলীকে।
এরপর বিরতি এ ধাপকে অনেকেই বেশ এড়িয়ে যায়। শ্বাসগ্রহণ বা বর্জনের মধ্যে সামান্য যে সময়, সেই সময়ের মধ্যেই প্রধান সব রাসায়নিকগুলোকে শুষে নেয় ফুসফুস। এ ছাড়া এ সময়টুকু, এই ক্ষণকাল হতে পারে শ্বাসক্রিয়ার সবচেয়ে আনন্দময় অংশ। ফুসফুস দুটি বাতাসে ভরপুর, বিশ্ব তখন সুখে। মহাকাশে মহাপ্যারাসুট থেকে লাফ দেয়ার মুহূর্ত। যেন সময় এখানে স্থির, ওম্ শান্তি ওখানে।
শ্বাস ত্যাগ শ্বাস ত্যাগ করার সময় মধ্যচ্ছদা যখন আরামে পেছনে নিচে যায় তখন ওদিকে নজর করি, পাকস্থলী তো চ্যাপটা হতে চলেছে তখন। লক্ষ করি, নাকের ফুটো দিয়ে বাতাস বের হওয়া শ্বাস ত্যাগের শেষে শুরু হল পরবর্তী শ্বাসকর্ম, শ্বাস ত্যাগের পর খুব বেশি অপেক্ষা গলে পরবর্তী শ্বাসগ্রহণ হতে পারে কষ্টকর।
শ্বাসকর্মের অভিজ্ঞতা শ্বাসক্রিয়ার ধাপে ধাপে এ অগ্রসর যাত্রার সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে আমাদের। প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও অভিজ্ঞতা হোক- গভীরতা এই শ্বাস হবে পুষ্টিকর ও তৃপ্তিকর। শ্বাস বর্জনের পর পরিতৃপ্তি আসে না? খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে বাইরের সতেজ বাতাস বুক ভরে টেনে নিই। সারা দিনের শ্রেষ্ঠ শ্বাসক্রিয়া ঘটবে তখন।
সময়ের দৈর্ঘ্য পূর্ণ শ্বাসচক্র কত সময় স্থায়ী হয়? সাধারণত মধ্যচ্ছদাপেশিকে ব্যবহার করে একটি গড় শ্বাসগ্রহণে সময় লাগে দু’সেকেন্ড, এক সেকেন্ডে বিরতি এবং আরও দু’সেকেন্ড শ্বাস বর্জন। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস গ্রহণ বর্জন চলুক। বল প্রয়োগের প্রয়োজন নেই।
আরামে আরামে শ্বাসকর্মটি খুব কি চাপের মধ্যে? বেশ ক্লেশকর কি? শরীরের কোনো অংশে কি বেদনা হল? কোনো পেশি কি ক্লান্ত শ্রান্ত? শ্বাসক্রিয়া হওয়া উচিত আয়েশে। অনায়াসে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী : পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম

No comments

Powered by Blogger.