সুন্দরবন বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিবেদন ৩১শে ডিসেম্বর by এ, কে আজাদ

তেল নিঃসরণে সুন্দরবনের ইকো সিস্টেম ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করেছেন ইউএনডিপির বিশেষজ্ঞ দল। তারা বলছেন, দূষিত তেলের প্রভাবে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। তবে কি  পরিমাণ প্রভাব পড়বে এবং সুন্দরবন কত দিনে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে গবেষণা ছাড়া এই মুহূর্তে তা বলা সম্ভব নয় বলে তারা জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ দল আগামী ২৮শে ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করবে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে দিকনির্দেশনাসহ ৩১শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে এ দল। এরপর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে সুন্দরবনের আন্ধারমানিক এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে ইউএনডিপি বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান এমেলিয়া ওয়ালস্ট্রম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তেল নিঃসরণ ঘটনার গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইকো সিস্টেম। শেলা নদীর তেল দূষণে এখানকার ইকো সিস্টেম ভেঙে পড়বে। তিনি বলেন, আমরা ৬টি বিষয় নিয়ে কাজ করছি। ছড়িয়ে পড়া তেলের বিস্তৃতি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, উদ্ভিদ, জলজ ও বন্যপ্রাণী, মানুষের জীবন-জীবিকা এবং ম্যানগ্রোভ ইকো সিস্টেমের ওপর কি প্রভাব পড়ছে কিংবা পড়তে পারে সেই সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি। জীববৈচিত্র্যের স্বাভাবিক আচার-আচরণ  পর্যবেক্ষণ, মাটি ও পানিসহ প্রভাবিত নমুনা সমূহ সংগ্রহ করা হচ্ছে। কথা বলছি সুন্দরবনের সঙ্গে  সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের সঙ্গে। তারা আমাদেরকে যা জানাচ্ছেন তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি কিংবা এর প্রভাব কতটা মারাত্মক আমরা সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। আমাদের গবেষণা ও সুপারিশ বাংলাদেশ সরকারকে দেয়া হবে। তিনি বলেন, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কতটা সময় লাগবে তা একমাত্র প্রকৃতিই বলতে পারবে। তিনি আরও বলেন, প্রকৃতির দান ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনের এ দুর্যোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল চিন্তিত। শব্দ দূষণ ও পানির মধ্যে কম্পন জীববৈচিত্র্যের স্বাভাবিক আচার-আচরণকে বাধাগ্রস্ত করে। বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে ভাসমান তেল অপসারণে নদীর পানি অনেকটা পরিষ্কার হওয়ায় সরকার ও জনগণকে তিনি ধন্যবাদ জানান। চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি, এর প্রভাব ও করণীয় নির্ধারণে জয়েন ইউএন গভর্নমেন্ট ওয়েল স্পিল রেসপন্স মিশন নামে জাতিসংঘের ২৫ সদস্যের একটি দল সোমবার সন্ধ্যায় সুন্দরবন পর্যবেক্ষণে আসেন। আগামী শনিবার পর্যন্ত তারা সুন্দরবনে অবস্থান করবেন। বিশেষজ্ঞ এ দলটি বনবিভাগের বোটে করে ৪টি দলে বিভক্ত হয়ে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ের জন্য নমুনা ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। তেল নিঃসরণ বিশেষজ্ঞ, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি সংস্থার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত এ দলের প্রধান এমেলিয়া ওয়ালস্ট্রম। ঢাকা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও রয়েছেন এ দলে। বনবিভাগের জাহাজ এমএল ফ্লোটিং হোম তাদের সহায়তা করছে। এ দলটি বর্তমানে অবস্থান করছে সুন্দরবনের আন্ধারমানিক এলাকায়।

No comments

Powered by Blogger.