শান্তাকে রক্ষিতা বানাতেই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল এসআই আনোয়ার by নুরুজ্জামান লাবু ও রুদ্র মিজান

পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট- গুলি করে সন্ত্রাসী সাজানোর অভিযোগ
কেরাণীগঞ্জের সেই ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত করতেন এস আই আনোয়ার। পয়লা সেপ্টেম্বর ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল ৮০০০ টাকায়। এর আগে থাকতো অন্য এলাকায়। কেরাণীগঞ্জের আরশিনগরের ওই ফ্ল্যাটে শান্তাকে রক্ষিতা হিসেবে ব্যবহার করতেন এসআই আনোয়ার। প্রতিদিন একবার করে যেতেন ওই ফ্ল্যাটে। কিন্তু তিন থেকে চার ঘণ্টা অবস্থান করতেন। মাঝে মধ্যে রাতও কাটাতেন ওই ফ্ল্যাটে। প্রতিবেশী ও বাড়ির কেয়ারটেকার এসআই আনোয়ারকে চিনতো শান্তার স্বামী হিসেবে। তবে ভিন্ন পরিচয়ে। শান্তা জানিয়েছিলেন তার স্বামী মোহাম্মদপুরে মোটর পার্টসের ব্যবসায়ী। এসআই আনোয়ারও তাদের বলেছেন একই কথা। গতকাল কেরাণীগঞ্জের আরশিনগরে সরজমিন গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে গতকাল এসআই আনোয়ারকে আদালতে সোপর্দ করে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

গতকাল কেরাণীগঞ্জের আরশিনগরে আনোয়ার-শান্তার সেই ফ্ল্যাটে গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। বাড়ির কেয়ারটেকার মোফাজ্জল জানান, সকালে সে বেরিয়ে গেছে। আর ফেরেনি। পাশে শান্তার পিতা দলিল হোসেনের বাসাও তালাবদ্ধ। তারাও সকালে বাসায় তালা মেরে বেরিয়ে গেছেন। সরেজমিন জানা যায়, আরশিনগরে গিয়াস উদ্দিন, আবদুস সালাম ও ইউসুফ হোসেনের মালিকানাধীন পাঁচতলা বাড়ির চারতলার উত্তর দিকের ফ্ল্যাটে শিশু সন্তানকে নিয়ে থাকে শান্তা। ওই বাড়ি থেকে কয়েক শ’ গজ দূরে একটি বাড়িতে থাকেন তার মা-বাবা। শান্তার জন্য আগস্ট মাসের শেষ দিকে বাসা ভাড়া নেন দলিল হোসেন। বাসা ভাড়া নেয়ার সময় আনোয়ারকে মেয়ের জামাই পরিচয় করিয়ে দেন। বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শেখ মোফাজ্জল জানান, বাসা ভাড়া নিতে এসে দলিল হোসেন জানিয়েছিলেন বাসায় তার মেয়ে, মেয়ের জামাই ও তাদের এক নাতনি থাকবে। ১লা সেপ্টেম্বর ওই বাড়ির চারতলার ফ্ল্যাট বাসায় ওঠে শান্তা। কিন্তু তখন ওই বাসায় কোন পুরুষ মানুষ ওঠেনি। চারদিন পরে একটি ব্যাগে বিভিন্ন ধরনের ফল নিয়ে এক যুবক ওই বাড়িতে ঢোকে। পরিচয় জানতে চাইলে সে নিজেকে শান্তার স্বামী পরিচয় দেয়। তারপর প্রায়ই শান্তার বাসায় কাটাতো ওই যুবক। সাধারণ রাত ১২টায় সে বাসায় যেতো। আবার সকালে বাসা থেকে বের হতো। কেয়ারটেকার মোফাজ্জল জানান, সে মেহমানের মতো আসা-যাওয়া করতো। কখনও স্বামীর মতো করে তাকে সংসারের কেনাকাটা করতে দেখেননি তিনি। প্রতি মাসে বাসা ভাড়া দিতেন দলিল হোসেন। মোফাজ্জল জানিয়েছেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আনোয়ারের আসা-যাওয়ার বিষয়টি কাউকে না বলতে চাপ দেয় শান্তা। কেউ জানতে চাইলে তিনি যেন বলেন, ওই বাসায় কোন পুরুষ আসা-যাওয়া করে না বলতে বলেন। ওই বাড়ির অপর এক ভাড়াটিয়া জানান, শান্তা প্রতিবেশী হলেও তার সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না। শান্তা এখানে থাকলেও দিনের বেশির ভাগ সময় তার বাবার বাসায় কাটায়। এমনকি সে খাওয়া-দাওয়া করে ওই বাসায়।
দুই দিনের রিমান্ডে আনোয়ার: স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে তার স্বামী শাহ আলমকে ধরে নিয়ে দুই পায়ে গুলি ও সন্ত্রাসী বানানোর চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত এসআই আনোয়ারকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির আনোয়ারকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানিতে আনোয়ারের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করেন আইনজীবী মল্লিক শফিউদ্দিন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে আসামির পক্ষে কোন জামিন আবেদন ছিল না। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি পশ্চিম) শেখ নাজমুল আলম বলেন, আনোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তাকে রিমান্ডে নিয়ে কেন এবং কোন প্রেক্ষিতে সে শাহ আলম নামে ওই যুবককে গুলি করেছে তা জানা হবে। এছাড়া শাহ আলমের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অবৈধ অস্ত্রটির উৎস জানার চেষ্টা করা হবে।
অবৈধ অস্ত্রটি পেলো কোথায়: সাজানো বন্দুকযুদ্ধ থেকে ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার দেখায় এসআই আনোয়ার। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি সাজানো এবং পরকীয়ার জের ধরে শাহ আলমকে গুলি করা হয়েছে তা ফাঁস হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, উদ্ধার করা অস্ত্র ও গুলি পেল কোথায় এসআই আনোয়ার। জানতে চাইলে পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার ওয়াহিদ আলম বলেন, অস্ত্রটির উৎস সম্পর্কে জানা যায়নি। বিস্তারিত তদন্তে এটি জানা যাবে। সূত্র জানায়, শেরেবাংলানগর থানার আগে মোহাম্মদপুর থানায় দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন এসআই আনোয়ার। এজন্য স্থানীয় অস্ত্রধারী অনেক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার পরিচয় ও যোগাযোগ রয়েছে। তাদের কারও কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করা হতে পারে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার ও বন্দুকযুদ্ধের ওই ঘটনার পর এসআই আনোয়ার দায়েরকৃত মামলার এজাহারে লেখা রয়েছে বন্দুকযুদ্ধে শটগানের পাঁচ রাউন্ড গুলি খরচ হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল যার গায়ে মেইড বাই জাপান ও ব্যারেলে আরমি লেখা রয়েছে। এছাড়া পিস্তলের তিন রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়েছে।
সহযোগীরা এখনও বহাল-তবিয়তে: সাজানো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় এসআই আনোয়ারের সঙ্গে আরও অন্তত পাঁচজন পুলিশ সদস্য ধরে নিয়ে গুলির ঘটনায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তাদের কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। হাসপাতালে আহত শাহ আলমও জানিয়েছেন, তাকে মোহাম্মদপুরের কৃষিমার্কেট এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় সাদা পোশাকে ৫-৬ জন লোক ছিল। এদের মধ্যে কেবল এসআই আনোয়ারকেই তিনি চিনতেন। আর সিরাজ নামে যেই ব্যক্তি তাকে ডেকে নিয়েছিল সেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। গুলি করার সময় সিরাজ বাদে অন্যরা সবাই উপস্থিত ছিল। এমনকি গাড়িতে তাকে যখন ঘোরানো হয় তখনও অন্যরা গাড়িতেই ছিল। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এসআই আনোয়ারের সঙ্গে সাজানো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় থানার এসআই শাজাহান, এএসআই আবদুর রশিদ, কনস্টেবল মতিউর ও ইমাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পর তারাও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তেজগাঁও জোনের এডিসি ওয়াহিদ আলম বলেন, বাদী শুধু এসআই আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এছাড়া ঘটনাটি ডিবির তদন্তের পাশাপাশি বিভাগীয় তদন্তও চলছে। তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষা প্রয়োজন: পঙ্গু হাসপাতালে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ শাহ আলমকে দেখতে গিয়ে জাতীয় মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যারা অস্ত্র বহন করেন, তারা দায়িত্ব পালনে মানসিকভাবে সক্ষম এবং প্রস্তুত কিনা তা পরীক্ষা করা দরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে শাহ আলমকে দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন। এর আগে শাহ আলম তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া ও গুলি করার বিষদ বর্ণনা দেন। মিজানুর রহমান বলেন, দেশের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ রকম নির্মম আচরণ করতে পারে না। এজন্য সাপ্তাহিক না হলেও অন্তত মাসে একবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যারা অস্ত্র বহন করেন, তাদের মানসিক সক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কারণ তাদের মানসিক চাপে যদি এমনটা ঘটে তাহলে তা দুঃখজনক। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে বছর দুয়েক আগে লিমনের সঙ্গে অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম। আমরা সোচ্চার হয়েছিলাম। এক পর্যায়ে রাষ্ট্র বাধ্য হয়েছে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি এই অন্যায় আচরণের বিচার নিশ্চিত করা আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখানে কোন ধরনের ছলচাতুরি, কোন ধরনের মিথ্যা বা বানোয়াট খেলা কমিশন সহ্য করবে না। তিনি বলেন, আমরা যখন আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার কাউন্সিলে বসব, মানবাধিকারের কথা বলবো আর রাষ্ট্রীয়ভাবে মানবধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবো না, এমন দ্বিমুখী আচরণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। শাহ আলমের মা মরিয়ম বেগম জানান, ঘটনার পর তিনি পঙ্গু হাসপাতালের ছেলের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে একজন পুলিশ সদস্য তাকে ধাক্কা মেরে বের করে দেন। এমনকি ছেলেকেও আহত অবস্থায় চড়-থাপ্পড় মারেন। এই তথ্য শুনে মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ওই পুলিশ সদস্যকেও শনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পা কাটতে হবে না শাহ আলমের: পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলির কারণে শাহ আলমের আপাতত পা না কাটতে হলেও দুই পা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে অনেক সময় লাগবে। সূত্র জানায়, শাহ আলমের দুই পায়ে শটগান দিয়ে গুলি করা হয়। এ কারণে তার পায়ের মাংস পেশিগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তবে হাড়ে কোন ফ্র্যাকচার হয়নি। ক্ষত স্থানে মাংস ভরাট হতে অনেক সময় লাগবে। শাহ আলমকে তত্ত্বাবধানকারী পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, আপাতত পা কেটে ফেলতে হবে না। তবে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে কিছুটা সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, স্ত্রী শান্তার সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে গাড়ি চালক শাহ আলমকে ধরে নিয়ে দুই পায়ে গুলি করে এসআই আনোয়ার। পরে তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার দেখায়। বিষয়টি তেজগাঁওয়ের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার গোপনে তদন্ত করে সাজানো জানতে পেরে এসআই আনোয়ারকে গ্রেপ্তার ও ওসিকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। এ ঘটনায় শাহ আলমের ভাই গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে শেরেবাংলানগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পদক্ষেপ জানাতে হাইকোর্টের নির্দেশ: যুবককে দুই পায়ে গুলি করে সন্ত্রাসী সাজানোর ঘটনায় কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে ঢাকার পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ১৮ই নভেম্বরের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দাখিল করতে ডিএমপি কমিশনারকে বলা হয়েছে। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেয়। একই সঙ্গে আদালত ওই ঘটনার শিকার শাহ আলমের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত ও চিকিৎসার খরচ বহন করতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেয়। ‘দুই পায়ে গুলি করে যুবককে সন্ত্রাসী সাজালো পুলিশ’ শিরোনামে ২২শে অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে এ রিট আবেদন করা হয়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র রিট আবেদনটি দায়ের করে। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট জেডআই খান পান্না। তার সঙ্গে ছিলেন এডভোকেট অবন্তী নুরুল। অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পাশাপাশি রুলও জারি করেছে হাইকোর্ট। রুলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়ার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সরকার ও পুলিশের সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.