নাটোর দুর্ঘটনা- হতাহতের ওপর দিয়ে চলে যায় হানিফের গাড়ি by ইসাহাক আলী

নাটোরের বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের রেজুর মোড়ে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬ জন নিহতের কারণ উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই গতকাল সকাল থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। অবৈধ যান চলাচল বন্ধসহ অভিযানে গাড়ির ফিটনেস ও আনুষঙ্গিক নানা বিষয় খতিয়ে দেখে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে। নাটোরের বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বনপাড়া থেকে গুরুদাসপুর কাছিকাটা টোলপ্লাজা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় বাস, ট্রাকসহ যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা, ওভারটেকিং ও ওভারলোডিং  নিয়ন্ত্রণে জন সচেতনতা সৃষ্টির জন্য অভিযান পরিচালনা করছে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এসব স্থানে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফুয়াদ রুহানী জানান, দুপুর পর্যন্ত ৫টি বাস আটক ও ১০টি বাসের কাগজপত্র সঠিক না থাকায় মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০শে অক্টোবর বড়াইগ্রামের রেজুর মোড়ে ফিটনেসবিহীন অথৈ পরিবহন ও কেয়া পরিবহনের সংঘর্ষে ৩৬ জন নিহত ও ৪২ জন আহত হয়। এদিকে এ ঘটনায় নিহত পরিবারের প্রত্যেককে জেলা পরিষদ প্রশাসকের পক্ষ থেকে বুধবার রাতে ১০ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর আগে এ দুর্ঘটনায় ৩৬ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তিন দিনের মধ্যেই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. মশিউর রহমানের কাছে কমিটির আহ্বায়ক নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী এই প্রতিবেদন দাখিল করেন। কমিটি দুর্ঘটনার তদন্ত কাজ শেষ করে ১৭টি সুপারিশ সহ সাত পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করে। তদন্ত প্রতিবেদনে সোমবারের সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে ওভারট্যাকিং, উভয় বাসের ফিটনেস না থাকা ও অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো হচ্ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত দু’টি বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট না থাকার পাশাপাশি ও লোকাল বাস অথৈ পরিবহন বাসের রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেটটি ভুয়া বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই বাসের সংঘর্ষের পরপরই আহত যাত্রীরা যখন মহাসড়কে পড়েছিল তখন হানিফ পরিবহনের একটি বাস তাদের পিষে দিয়ে চলে যায়। এতে হতাহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ১৭ সুপারিশের মধ্যে এই মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক, মালিক ও এলাকাবাসীকে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে সচেতন করে তোলার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
সোমবার দুর্ঘটনার পরপরই উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. মশিউর রহমান নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলীকে আহ্বায়ক এবং বড়াইগ্রাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাহফুজুজ্জামান আশরাফ ও বিআরটিএ’র নাটোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আশরাফুজ্জামানকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত  কমিটি ওই দিন রাতেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। দ্রুত ও ভালভাবে তদন্ত করার জন্য পরে কমিটিতে হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান ও বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. শরিফুন্নেছাকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই পাঁচ সদস্যের কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

No comments

Powered by Blogger.