গল্প- ঘুমের দহন by এম বাশার

নূরুল কবীর এ নিয়ে দশ নম্বর চাকরি খোয়ালো ঘুমের বদৌলতে। ঘুমে এ রকম আসক্তি বিরল। সে কতবার ট্রেন কিংবা বাস ফেইল করে আবার হাসিমুখে বাড়িতে ফিরে এসে ঘুমের আয়োজনে মেতে উঠেছে। তবে অসম্ভব বিলম্বে আসা ট্রেন তার যাত্রাপথে শুভ লণ।
এ নিয়ে তার কোনো দুশ্চিন্তা বা লজ্জা নেই। তার মতে একটা কিছু ব্যতিক্রম থাকা ভালো। এতে বিখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছাত্রাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ঘুমের ঐতিহ্যটা বেশি করে রপ্ত করেছে। এ ছাড়া রয়েছে ঘুমের দীর্ঘকালের বংশধারা।
মেধার জোরে একে একে নতুন চাকরির মুখ দেখলেও বিভ্রাট শুরু হলো সংসারজীবনে। বিয়ের দিন সকাল ছ’টায় ট্রেনে চেপে যেতে হবে শালিখা। ট্রেন থেকে নেমে রিকশা অথবা ভ্যানগাড়িতে চাপতে হবে।
ভোর ছ’টায় যাওয়ার কথা শুনতেই তার চোখে মুখে বিরক্তি। হাই উঠতে লাগল। তার মা হনুফা বেগম ছেলেকে ডেকে অনেক বোঝালো। ‘অবশ্যই ভোর পাঁচটায়  উঠে সব গোছগাছ করে নিবি।’ গভীর আগ্রহে কথা বলে যখন ছেলের মুখের দিকে তাকালো, তখন তার গা রাগে গরগর করছে। নূরুল কবীর ইজি চেয়ারে বসে একেবারে ওর বাবার মতো মুখ হাঁ করে ঘুমোচ্ছে।
ভোর পাঁচটা হতেই শুরু হলো বরকে ঘুম থেকে তোলার কসরৎ। বাড়ির লোকজন দুই-তিনজন করে পালাক্রমে হাঁকডাক শুরু করল। কিন্তু কোথায়? কোনো সাড়াশব্দ নেই।
হনুফা বেগম ও তার স্বামী মোস্তফা কবীর দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে এলো ছেলের ঘরের দরজার কাছে। একবার হনুফা বেগম ডাকে ‘নুরু’। মোস্তফা কবীর ডাকে ‘নুরুল্যা’। এভাবে নুরু ও নুরুল্যা শব্দে তোলপাড়। প্রতিবেশীদের ঘুম ভেঙে গেছে। কিন্তু তার ঘুমের গহিনে এতটুকু ছেদ পড়েনি।
তারা দু’জন ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার কালে হনুফা বেগম তার স্বামীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল ‘ঘুমের গুষ্ঠি’। বলে দাপাতে দাপাতে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে শিশুর মতো কাঁদতে লাগল। তার এ প্রতিবাদে কোনো সুফল হলো না। সময় গড়াচ্ছে। সবার মধ্যেই বেধড়ক উত্তেজনা। বিয়ের আয়োজন ভেস্তে যাচ্ছে শুধু ঘুমের কারণে। হনুফা বেগমকে থামাতে ব্যস্ত ঘরভর্তি মানুষ। তারা উপদেশ দিয়েছে ‘শুভদিনে কাঁদতে হয় না।’ এ দিকে নূরুল কবীরের সবচেয়ে ছোট বোন জেদ করে ডাকতে গেল ভাইয়াকে। সে অনেকণ ধরে দরজা ধাক্কালোÑ ‘ভাইয়া, ওঠো ভাইয়া, ট্রেনের সময় শেষ।’ একপর্যায়ে গলার স্বর বেরোচ্ছে না। ডাকাডাকির মাত্রা আর একটু বাড়ালে গলা ভেঙে যাবে। পা দিয়ে দরজায় শব্দ করে লাথি মারল। শেষে চোখমুখ লাল করে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে নীরবে চুপচাপ বসে থাকল।
বাড়ির কাজের ছেলে দুলা মিয়া। সেও মনিবপুত্রের ওপর েেপ আছে। সে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বললÑ ‘আমি ভাইজানের ঘুম ভাংগায়া ছাডুম।’ বলেই একটি বড় পাতিল এবং দু’টি টিনের কৌটা এনে দু’জন সহযোগীসহ বেদম পেটাতে শুরু করল। এ কাণ্ড দেখে সবার মধ্যে খুশি খুশি ভাব।
‘এবার ঘুমোও দেখি কেমন ঘুমের মরা’Ñ বলে চিৎকার করছে হনুফা বেগম। অবশেষে রফা হলো। পুবের জানালার ধারে বেসুরো ও বিদঘুটে আওয়াজ হচ্ছে। কান ভাঁজানো শব্দের তোড়ে নূরুল কবীরের ঘুমের জাল ছিন্ন হলো। বাড়ির লোকজনের মুখে এক কথা, ঘুমের দোষে বিয়েটা বুঝি ভণ্ডুল হলো। ওদিকে হনুফা বেগম সমানে তার স্বামীর বংশ উদ্ধার করে চলেছেÑ ‘ওর বাবা কি আমাকে কম জ্বালিয়েছে? বিছানায় গা দিতেই মরার মতো পড়ে থাকত।’
ওরা যখন স্টেশনে এসে দাঁড়াল চার দিকে বোঁটকা গন্ধ। পচা ইলিশের পেটি থেকে নোংরা পানি গড়াচ্ছে। বোনজামাই নাকেমুখে রুমাল ঠুসে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরের যাত্রী। রেলস্টেশনের এমন চেহারা আগে কখনো দেখেনি।
ট্রেনে চেপে গন্তব্যে পৌঁছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে রাত প্রায় তিনটে। পরদিন ফেরার কথা। নূরুল কবীর বাসরঘরে ঢুকেই ঘন ঘন হাই তুলতে শুরু করল। বাসরঘরের সাজসজ্জা ও নববধূর মুখশ্রীর চেয়ে তাকে আকর্ষণ করল পরিপাটি করা বিছানা। বিছানার দিকে তাকাতেই মনে হলো বালিশটা যেন তাকে সাদর সম্ভাষণ জানাচ্ছে। বলছেÑ ‘আয় নূরু আয়’। সে বিছানায় গিয়ে নাটকের মতো করে শাওলীর চিবুকে হাত ছুঁয়ে বললÑ ‘তুমি কত জনমের প্রতীা।’ এ রকম দু-এক কথা বলতে-না-বলতেই কান্ত নূরুল কবীর ঘুমের মধ্যে ডুবে গেল। শাওলী বাকি রাত দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছে। চোখেমুখে অতৃপ্তির ছোঁয়া। মনে অজানা আশঙ্কা। বাসর রাতে স্বামীর এ আচরণ দেখে নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছিল।
পরদিন বাড়িতে ফিরে সরগরম অবস্থা। নববধূকে দেখার জন্য দলে দলে দর্শনার্র্থীর ভিড়। নূরুল কবীর এই সুযোগে ঘরের দরজা আটকে অঘোরে ঘুমোচ্ছে।
শাওলী প্রথম রাতের ঘটনা সামলে নিয়েছে। আজ কিছুটা ফুরফুরে ভাব। কিন্তু সে ভড়কে গেছে। পরের রাতেও অনুরূপ ঘটনা। নূরুল কবীর বিছানার কাছে যেতেই কোলবালিশটা যেন নূরুল কবীরের দিকে গড়াতে গড়াতে আসছে। বাসর রাতের মতোই দু-একটা কথা বলতে-না-বলতেই সে ঘুমের ঘোরে নেতিয়ে পড়ল।
পরদিন সকালে শাওলীর বান্ধবী অজন্তার টেলিফোন পেয়ে যেন নতুন জীবন ফিরে পেল। অফুরান কথার ফাঁকে অজন্তা মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলÑ ‘কিরে তোর উনি কোথায়?’
শাওলী কিছু না ভেবেই বলল ‘ঘুমোচ্ছে’। অজন্তাÑ ‘বলিস কি-রে ? এখন তো অনেক বেলা।’ অজন্তার মধ্যে হাসির বন্যা ছুটে চলেÑ ‘কিরে সারা রাত বেচারাকে ঘুমোতে দিস না বুঝি?’
শাওলীর মুখে বর্ষার মেঘ। অজন্তা কী করে বুঝবে এ ঘুমের দহন ? সে টেলিফোন ছেড়ে অনেকণ তাকিয়ে দেখল ঘুমের মানুষটাকে।
শাওলীর কাছে সবটাই দুঃস্বপ্নের মতো। মানুষের প্রতি এত অশ্রদ্ধা সে কখনো দেখেনি। আজ গভীর কান্নায় ভেঙে পড়ল। অধিক মাত্রায় ফোঁপাচ্ছে। ক’দিনের মধ্যে তার সুন্দর মুখচ্ছবিতে বড় রকমের পালাবদল ঘটেছে। দুঃসহ দাহ তাকে অনুণ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। শাওলীর এ অভিমান যার উদ্দেশ্যে, সে তখন বিছানায় মাথা গুঁজে নির্বিকার ঘুমোচ্ছে।
রাত পোহালেই শাওলী চলে যাবে। বাড়িতে প্রস্তুতির হাওয়া। শাওলী জানালার কাছ থেকে বিছানায় এসে বসল। হঠাৎ তার মনে হলো ঘুমন্ত স্বামীকে এক ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিলে কেমন হয়?
বান্ধবী অজন্তার কাছে শুনেছে সাধারণ মানুষের চিন্তাশক্তির স্থিরতা ‘তিন সেকেন্ডের’ বেশি থাকে না। অর্থাৎ তিন সেকেন্ডের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে ধাক্কা মারার সিদ্ধান্ত নিলো। যেই হাত উঁচু করে কাজ সমাধা করবে অমনি নূরুল কবীর দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে জেগে উঠল। সে চমকে তাকালÑ শাওলী জড় পদার্থের মতো স্থির হয়ে আছে। নূরুল কবীর বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলÑ ‘তুমি! জেগে আছো?’
শাওলীর চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরছে। যেন চৈত্রের নদীর বাঁকে নতুন বৃষ্টির জোয়ার। সে জাপটে ধরে শাওলীকে। নুরুল কবীরের পাঞ্জাবি ভিজে যাচ্ছে।
শাওলী আজ আর ােভ উত্তেজনায় কিছুই বলতে পারছে না। তবুও বললÑ প্রলাপের মতোÑ ‘আমার অপমান তুমি বুঝতে পারো না? তুমি এমন করে ঘুমোলে আমি এ বাড়িতে আর ফিরে আসব না।’ শাওলীর দেহটা ফুলে উঠছে অভিমানে।
নুরুল কবীর নড়েচড়ে বসল। সে এক নিমেষে অনেক কিছু ভেবে নিলো। এত চাকরি নয় ইচ্ছে হলেই ইস্তফা দিয়ে নতুন চাকরিতে জয়েন করবে।
এই প্রথম নূরুল কবীর খুব গভীর করে শাওলীকে কাছে টেনে নিলো। এমন করে আর কখনো সে ভালোবাসেনি। এক ফাঁকে শাওলীকে বললÑ ‘তোমায় কথা দিচ্ছিÑ আর এমনটি হবে না।’
শাওলী ব্যাকুল। কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সকালে বাবার বাড়িতে পাঠানো লোককে জানালো এখন তার যেতে ইচ্ছে করছে না। ক’দিন পর যেন কাউকে পাঠিয়ে দেয়। কথা শুনে বাড়িতে অন্তহীন কানাঘুষা। মুখটিপে হাসাহাসি। কেউ বললোÑ ‘নতুন বিয়ে তো...।’
শাওলী তার স্বামীর কাছে পুরোপুরি সমর্পণের প্রতীায় বিভোর। তার মুখে ভোরের নতুন রোদ। সে দিনটা যেন একেবারেই অন্য রকম। সারাটা দিন কখন কিভাবে কেটে গেল। শাওলী অনেক কথা জমিয়ে রেখেছে। আজ সব কথা শোনাবে ঝড়ের বেগে। রাতে টুকিটাকি কাজ সেরে ঘরে ঢুকতেই দেখল ঘর অন্ধকার। কোনো সাড়া শব্দ নেই। সে মৃদু আলো জ্বালাল। বিস্মিত হলো শাওলী। পুবের জানালা খোলা। নূরুল কবীর জানালার গ্রিল ধরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে শরতের জোসনা। ভাবল চাঁদের আলো দেখছে। ওর মনটাও নেচে উঠল।
শাওলী মৃদু পায়ে এগিয়ে গেল। পিঠে হাত রেখে বললÑ ‘দেখছো কী সুন্দর আকাশ! চলোÑ অনেক রাত হলোÑ শোবে না?’ কিন্তু নূরুল কবীরের কোনো সাড়াশব্দ নেই।
‘তুমি কি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো। কী, কথা বলছো না কেন?’ তবুও কোনো উত্তর নেই। শাওলী আবেগে গা ঘেঁষে ঝাঁকুনি দিতে গিয়ে দেখে নূরুল কবীর জানালার গ্রিলে হাত রেখে দাঁড়িয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে।
শাওলীর মগজে হঠাৎ করে আগুন জ্বলে উঠল। তার মনে হলোÑ ‘লোকটা কি মানুষ? সে কি নির্বোধ? সে চট করে ভেবে নিলোÑ তিন সেকেন্ড সময় পাবে। এর মধ্যে সে কিছু একটা করবে। চিৎকার করে বললÑ ‘এই প্রেতাত্মা। মানুষের জীবন কি তোর কাছে কাদামাটি?’ বলে এক ধাক্কা দিলো প্রচণ্ড বেগে।
নূরুল কবীরের শুধু চাপাকণ্ঠের আওয়াজ ‘উহ্’! বলে চোখের ওপরের অংশ চেপে ধরল। গ্রিলের সাথে লেগে জায়গাটা থেঁতলে গেছে।
শুধু নির্বিকারভাবে নূরুল কবীর বললÑ ‘শাওলীÑ এত দিনে বুঝলাম আমার বাবার দাঁড়িয়ে ঘুমোনোর অভ্যাসটা আমিও রপ্ত করে ফেলেছি।’
শাওলী এর কী জবাব দেবে? সে ভীষণ কুণ্ঠা ও লজ্জায় কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। লোকটার এতটুকু অনুযোগ নেই। এক হাতে তস্থান চেপে দাঁড়িয়ে আছে।
এরপর থেকে কী যে হলো। নূরুল কবীর আর ঘুমোতে পারে না। প্রতি রাতেই কপালের ব্যথাটা চিনচিনিয়ে ওঠে। একটু শোয়, একটু ওঠে। কপাল চেপে বসে থাকে কিন্তু মুখে কোনো যন্ত্রণাকাতর শব্দ নেই। মাঝে মধ্যে উঠে পানি খায়। অস্থির ভাবে পায়চারি করে। অন্ধকারে ঘরের বাইরে বকুল তলার বেদিতে গিয়ে বসে, গায়ে বকুল ঝবে পড়ে।
শাওলীর যন্ত্রণার দাহ আগের চেয়ে তীব্র হলো। তার স্বামী তার জন্যই তো ঘুমহীন হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মনে হলো কয়েক বছর বয়স বেড়ে গেছে। তার ঘুমহীন চোখ দুটো লাল আঙুরের মতো। মুখটা বিবর্ণ।
শাওলীও ইদানীং ঘুমোতে পারছে না। স্বামীর সেবা নিয়ে ব্যস্ত। সারা রাত কপালে হাত বুলিয়ে ঘুম দিতে চায়। কিন্তু কিছুতেই ঘুমোতে পারছে না।
শাওলী প্রচণ্ড কান্তিতে আজ ঘুমের বাঁধনে ফেঁসে গেছে। সে ভোর রাতে স্বপ্নে দেখল ‘নূরুল কবীর তাকে বলছে করুণ স্বরেÑ ‘শাওলী তুমি আমার আজন্মের ঘুম কেড়ে নিলে। আমার বংশধারার ঐতিহ্য ছিনিয়ে নিলে কেন? আমি তো সারা জীবনের জন্য ঘুমহীন হয়ে গেলাম।’
শাওলী ভয়ে আর্তচিৎকার করে জেগে উঠল। সে জেগে দেখল নূরুল কবীর তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
পরদিন সকালে ওকে নিয়ে যাওয়া হলো ক’জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে। পরীা নিরীা সেরে ডাক্তার বিস্মিত হলেন। এমন জটিল রোগী আগে কখনো পাননি। অনেক ভেবেচিন্তে কিছু হালকা ওষুধপত্র দিয়ে বললেনÑ‘এই রোগীর ঘুম ভীষণ জরুরি’। রোগী আপাতত একটানা পাঁচ দিন শুয়ে থাকবে। এ পাঁচ দিনে সে চোখের পাতা একদম মেলবে না। ঘুম ভেঙে গেলেও চোখের পাতা বুজে শুয়ে থাকবে। জটিল চিকিৎসা। নূরুল কবীর পরামর্শ শুনে ঘাবড়ে গেছে। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের সুরে বললÑ ‘স্যার আমাকে সারা জীবনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিন।’
ডাক্তার মৃদু হেসে বললেনÑ ‘আগে পাঁচ দিন ঘুমিয়ে নিন তো।’
শাওলী ডাক্তারের কথায় প্রচণ্ড মুষড়ে পড়েছে। ওখানেই টেবিলে মাথা রেখে ফোঁপাতে শুরু করল।
শাওলী ক’দিন ধরে ল করছে নূরুল কবীরের চোখের পাপড়িগুলো ঝরে যাচ্ছে। মুখটাও কেমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। শাওলী অনুভব করল তার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। যে ঘুমোতে চায় তার ঘুম কেড়ে নেয়া যায় না। এই সরল বিষয়টি সে বুঝতে চায়নি। তার মধ্যে প্রচণ্ড অপরাধবোধ জেগে উঠেছে।
পাঁচ দিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা চিকিৎসা চলেছে। নূরুল কবীর দশ নম্বর চাকরিটা গতকাল হারিয়েছে। মুখে বিষণœতার হাহাকার। সে শাওলীর হাত সজোরে চেপে ধরে বললÑ ‘আমি আর এভাবে পারছি নাÑ আমি চোখ মেলে তোমাকে দেখতে চাই।’ শাওলী স্বামীর বুকে মাথা আছড়ে বললÑ ওগো, আমি তোমার ঘুম চাই-ঘুম। তুমি আমার চোখের ঘুম কেড়ে নাও।

No comments

Powered by Blogger.