‘পলাতক’ নেতা নিলেন স্বর্ণপদক -মঞ্চে ছিলেন বিস্ফোরক মামলার আরও চার আসামি

একটি বিস্ফোরক মামলার প্রধান আসামি তিনি। ৫০ দিন ধরে তাঁকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। আইনের চোখে তিনি পলাতক। পুলিশের চোখে ‘আত্মগোপনে’ থাকা এই নেতাই গতকাল বৃহস্পতিবার বগুড়া সার্কিট হাউসে পুলিশ-গোয়েন্দাদের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাত থেকে শ্রেষ্ঠ সংগঠকের ‘স্বর্ণপদক’ নিয়েছেন।
এই নেতা হলেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। স্বর্ণপদক গ্রহণ ও চেয়ারপারসনের বক্তব্য প্রদানের সময় তিনি ছাড়াও একই মামলায় অভিযুক্ত জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আরও চার নেতাকে দেখা গেছে। এই চারজন হলেন: জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ তাহাউদ্দীন ও পরিমল কুমার দাস এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহ মো. মেহেদী হাসান। বেলা সাড়ে ১১টায় সার্কিট হাউসের নিচতলার সিঁড়িসংলগ্ন প্রধান ফটকে বিএনপির চেয়ারপারসন আনুষ্ঠানিকভাবে সাইফুল ইসলামের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

>>পুলিশের চোখে মামলার পলাতক আসামি বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামকে গতকাল সার্কিট হাউসে ‘জিয়া স্বর্ণপদক, ২০১৪’ তুলে দেন খালেদা জিয়া। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন পলাতক আসামিকে দেখা যায় l প্রথম আলো
৩ অক্টোবর বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকার টেম্পল সড়কে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ককটেল হামলার ঘটনায় সাইফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ২৫ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাতনামা ২০০ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনের ধারায় মামলা হয়। এর পর থেকেই পুলিশের নথিতে পলাতক ছিলেন তাঁরা। ককটেল বিস্ফোরণে বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মাহমুদ খানসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। পরে সুলতান মাহমুদ খান বাদী হয়েই বিস্ফোরক আইনের ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারসহ ১৫ নেতা-কর্মী আদালত থেকে জামিন নিলেও অন্যরা ‘আত্মগোপনে’ বলে পুলিশ দাবি করে আসছে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হায়দার মো. ফায়েজুর রহমান বলেন, সাইফুল ইসলামসহ অন্যদের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। তবে মামলাটি বিস্ফোরক আইনের ধারায় হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার বিধান রয়েছে। কিন্তু মামলা দায়েরের পর থেকেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ‘পলাতক’ রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (গতকাল) আমি নিজেও সার্কিট হাউস এলাকায় বিএনপির চেয়ারপারসনের আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম। আত্মগোপনে থাকা ওই নেতাদের কেউ বিএনপির চেয়ারপারসনের কাছ থেকে স্বর্ণপদক নিয়েছেন বা বক্তব্য প্রদানের সময় কেউ বিএনপির নেত্রীর পাশে ছিলেন, এমনটা আমার নজরে আসেনি।’ তবে বগুড়া জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হেলালুর রহমান বলেন, বিস্ফোরক আইনের ধারায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ধরতে আদালতের পরোয়ানার প্রয়োজন নেই।
গতকাল বগুড়ার সার্কিট হাউসে বিএনপির চেয়ারপারসনের বক্তব্য প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন—এমন ২০ থেকে ২৫ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া গত বুধবার রাতে বগুড়া সার্কিট হাউসে আসেন। পরদিন নীলফামারীর উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি সার্কিট হাউসের সিঁড়ি দিয়ে নিচতলায় নেমে ফটকের কাছে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেওয়ার জন্য বারান্দায় দাঁড়ান। বক্তব্য দেওয়ার আগে সাইফুল ইসলামের হাতে শ্রেষ্ঠ সংগঠকের স্বর্ণপদক তুলে দেন। পদকদাতা হিসেবে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন—জিসাসের নাম উল্লেখ ছিল।
স্বর্ণপদক প্রদানকালে সাইফুল ইসলাম ছাড়াও বিস্ফোরক মামলার অন্য আসামিরা থাকায় জেলা বিএনপির বেশ কিছু নেতা-কর্মী বিব্রত অবস্থায় পড়েন। অস্বস্তিতে পড়েন পুলিশের কর্মকর্তারাও। চেয়ারপারসনের বক্তব্য শেষ হতে না-হতেই একটি গাড়িতে উঠে সাইফুল ইসলামসহ অন্যরা সার্কিট হাউস ত্যাগ করেন। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সাজানো মামলা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসানো হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তারের পরোয়া না করেই গোটা বগুড়াবাসীর সঙ্গে আমরাও দেশনেত্রীকে বরণ করার উৎসবে যোগ দিয়েছি।’ বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের সার্কিট হাউসে অবস্থানের সময় বিস্ফোরক মামলার কোনো আসামি সেখানে উপস্থিত ছিলেন, এমনটা কেউ তাঁকে জানাননি। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.