গণধর্ষকদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি নিরাপত্তাহীনতায় ধর্ষিতা

হাসপাতালের বেডে শুয়ে এখনও মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে ধর্ষণের শিকার এক নারী। শরীরে প্রচণ্ড জ্বর, তলপেটে ব্যথা আর বমি বমি ভাব  রয়েছে অব্যাহত। থেকে থেকে ঘুমের ঘোরে আঁতকে উঠছেন। রোগীর সেবায় নিয়োজিত স্বজনদের দাবি হায়েনাদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত এ নারীর দিন কাটছে চরম আতঙ্কে আর উৎকণ্ঠায়। তার চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সদের দাবি অধিক মাত্রায় নির্যাতন আর নৃশংস অত্যাচারের কারণে তার শরীরের অভ্যন্তরে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা সারতে সময় লাগবে। এ ছাড়া অধিক রক্তক্ষরণ আর ভয় পাওয়ার কারণে শরীরে জ্বর জ্বর ভাব আর বমি দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া দুর্বৃত্তদের রাতভর পালাক্রমে নির্যাতনের ফলে তিনি মারাত্মক ভয় পেয়েছেন। যা দূর হতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। এদিকে নিরাপত্তার কারণে ওই নারীকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের একটি বিশেষ ওয়ার্ডে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের আরএমও শামছুল ইসলাম দোদুল বলেন, যেহেতু ঘটনাটি সেনসেটিভ। মিডিয়ার কারণে ঘটনাটি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া ভিকটিমের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তাকে কিছুটা হলেও নিরাপদে রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপরদিকে এই ঘটনায় মামলা হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে যুবলীগ ক্যাডার কুচেমোড়া গ্রামের হাতকাটা রাজু ও তার বাহিনীর সদস্যরা। গত রাতে ওই বাহিনীর সদস্যদের অব্যাহত হুমকি ধমকির কারণে  হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছিলেন ভিকটিম ও তার ভাই। পরে রাত ১২টার দিকে আবারও তাদেরকে একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে জেনারেল হাসপাতালের ওই কেবিনে ভর্তি করে কিছুটা হলেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করে ক্ষতিগ্রস্ত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরও এর সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি শার্শা থানা পুলিশ। উল্টো এই ঘটনাকে নিয়ে থানা পুলিশ চোর-পুলিশ খেলা শুরু করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ঘটনার পর থেকে হাতকাটা রাজুসহ তার ক্যাডাররা এলাকায় অবস্থান করলেও পুলিশের দাবি তারা তাদেরকে পাচ্ছে না। উল্টো এলাকাবাসী ফোন করে দুর্বৃত্তদের বিষয়ে তথ্য দিলে পুলিশ তা আসামিদের কাছে ফাঁস করে দিচ্ছে। গতকাল ঘটনাস্থল যশোর ও সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী কুচেমোড়া গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এলাকাবাসী জানান, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন অন্ত নেই। সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে এই চক্রটি ধরাকে সরাজ্ঞান করেছ। তারা এহেন কোন অপকর্ম নেই যার  সঙ্গে জড়িত নয়। চোরাচালান, অস্ত্র ব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি, সরকারি রাস্তার গাছ লুট থেকে শুরু করে সব রকমের অপকর্মের সঙ্গে এই চক্রটি সম্পৃক্ত। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুলের খোদ লোক হিসেবে পরিচিত এই হাতকাটা রাজু স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে পুলিশ ইচ্ছা করে তাকে বা তার ক্যাডারদের আটক না করে অভিযানের ভ্যান করছে। কুচেমোড়া গ্রামের ইয়াকুব আলী নামের একজন জানান, গত রাতে হাতকাটা রাজু বাহিনীর ক্যাডাররা গোটা এলাকায় শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তার দায় চাপানো হচ্ছে প্রতিপক্ষদের ওপর। ফলে গতকাল সকাল থেকে এই ঘটনার যারা প্রতিবাদ করছিলেন তাদেরকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। যাতে করে তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় কথা বলার কেউ না থাকে।
শার্শা থানার ওসি আব্দুর রহিম বলেন, গত রাতে এলাকায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে সত্য, তবে এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গণধর্ষণের ঘটনায় কোন আটক আছে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ ঘটনায় রাতে থানায় মামলা হয়েছে। এসআই বায়েজিদকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলতে পারবেন মামলার সর্বশেষ অবস্থা কি। তবে যদ্দূর জানি এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে মামলার আইও বাগআঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক বায়েজিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসামিদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, যখনই পুলিশ এলাকায় ঢুকছে তখনই কে বা কারা পটকা বা বোমা ফাটিয়ে আসামিদের সতর্ক করে দিচ্ছে। ফলে পুলিশ এলাকায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আসামরিা পালিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে যশোর পুলিশের মুখপাত্র এএসপি হেড কোয়ার্টার রেশমা শারমিন বলেন, এই ঘটনায় শার্শা থানায় হাতকাটা রাজুসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে। অপরদিকে গণধর্ষণের শিকার নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.