বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ না থামালে আসাম হবে বসনিয়া-কাশ্মীর- বিএসএফ-এর সাবেক কর্মকর্তার দৃষ্টিতে...

বাংলাদেশবিরোধী তিক্ত এক মন্তব্য করেছেন ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ-এর সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক পিকে মিশ্র। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ বন্ধ করা না হলে আসাম পরিণত হবে বসনিয়া বা কাশ্মীরে। গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন আইবিএন। এতে আরও বলা হয়, অবশ্যই বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বসতি স্থাপনের অনুমতি দিতে হবে ভারতের নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত সাবেক কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এটা করতে হবে নয়া দিল্লিকে। ‘বাংলাদেশ মাইগ্রেন্টস: এ থ্রেট টু ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এক গবেষণা গ্রন্থে পিকে মিশ্র এসব কথা বলেছেন। এতে তিনি সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে অবৈধ অভিবাসীর চিত্র তুলে ধরেছেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত রাজ্যগুলোর বিষয়ে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম। ৩০৪ পৃষ্ঠার ওই বইয়ে তিনি আরও বলেছেন, ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও তার সেনা, পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। তারা সীমান্ত এলাকায় তাদের অংশে প্রতিটি ইঞ্চি জমি চাষাবাদ করছে। তারা ভীষণ আগ্রাসী। এই পদক্ষেপের জবাব দিতে আমাদের সাবেক সব সার্ভিস সদস্যদের সীমান্ত এলাকার জমি চাষ করতে দেয়া উচিত, যাতে তারা আমাদের দৃষ্টিশক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে এবং আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আগেভাগে তথ্য দিতে পারে। এখানে উল্লেখ্য, পিকে মিশ্র দীর্ঘ সময় সীমান্ত এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সুপারিশ করেছেন ভারতের ভিতরে যারা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র পক্ষে  অস্ত্র চোরাকারবারির সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে তাকেও শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে আমরা আসামে আরেকটি বসনিয়া অথবা কাশ্মীর পাব। তিনি আরও বলেছেন, কাঁটা তারের বেড়ার সামনে সব  গ্রাম এখন বাংলাদেশী অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে। তিনি সীমান্ত এলাকার একটি চিত্র তুলে ধরেন। বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সীমান্ত এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনঘনত্ব ৮০০। যেসব এলাকায় বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসী নেই সে সব  এলাকা, গ্রামের চেয়ে এই ঘনত্ব অনেক বেশি। তার মতে, এরকম ঘনবসতি যেসব গ্রাম তা কাঁটা তারের বেড়া থেকে বেশি দূরে নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে তা সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে। পিকে মিশ্র বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করা একটি জটিল পদক্ষেপ বলে মনে করেন। এক্ষেত্রে ভারতীয়দেরও আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিন। কারণ, তাদের দৃশ্যত একই সংস্কৃতি, চেহারায়ও অনেকটা মিল। অনেক অবৈধ অভিবাসী আসামের নাগরিকদের মতো বাংলায় কথা বলে। ভারতে তাদেরকে মদত দেয় ভারতীয় একটি অসাধু চক্র। তাদের মাধ্যমেই তারা বৈধতার কাগজপত্র সংগ্রহ করে সহজেই। এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করে যে, তারা ভারতীয়। তিনি বলেন, এসব কারণে সীমান্তে অবাধে গবাদিপশু পাচার করছে তারা সংঘবদ্ধভাবে। ওই বইয়ে তিনি বলেছেন, ডাকাত, অপরাধী, অসৎ চক্র ও পাচারকারীরা ভারত-বাংলাদেশের দু’ দিকেই বসতি স্থাপন করেছে। তাদের রয়েছে পারিবারিক যোগসূত্র। তারা সীমান্ত এলাকায় সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা সীমান্ত রক্ষী ও অন্য নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের পছন্দ করে না। এসব গ্রামের মানুষ কখনোই বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসী ও অপরাধীদের বের করে দেবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্তের কথা উল্লেখ করেন। বলেন, ওই সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দেয়া প্রায় অসম্ভব। ওই বইয়ে তিনি আরও বলেছেন, শীতের সময় মেঘালয় সীমান্তে দৃষ্টিসীমা থাকে ১০ গজেরও কম। এতে সীমান্ত অতিক্রম সহজ হয় অনুপ্রবেশকারীদের। আসামের কিছু অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ, ওইসব এলাকা নিচু ভূমি অথবা ভারি বর্ষণপ্রবণ ও বন্যা হয় এমন এলাকা। ওই বইয়ে পিকে মিশ্র বলেন, পাকিস্তান সীমান্তে বসানো হয়েছে ফ্লাডলাইট। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে তা যথার্থভাবে কাজ করবে না। তিনি বলেন, যেহেতু ভারত থেকে অবৈধদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হলে বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে তাদেরকে পুশব্যাক করে থাকে তাই নয়া দিল্লিকে কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। তাদেরকে সীমান্তের ফাঁক দিয়ে রাতে পুশব্যাক করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটা করতে হবে পলিসির মাধ্যমে। তিনি জোর দিয়ে লিখেছেন, যদি আমরা এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরি তাতে কোন ফল হবে না। পিকে মিশ্র স্বীকার করেন ভারত ও বাংলাদেশ দু’পাশেই কিছু নিরাপত্তা রক্ষাকারী, সীমান্ত রক্ষী, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক সংস্থার সঙ্গে অপরাধী ও টাউটদের রয়েছে সম্পর্ক। মিশ্র বলেন, এতে তারা সহজেই ভারতের বৈধ শনাক্তকরণ কাগজপত্র সংগ্রহ করে এবং রেশন কার্ড তৈরি করে।

No comments

Powered by Blogger.