ভারতের প্রতিরক্ষা খাত ‘দখল’–এর লড়াইয়ে পশ্চিমারা

নরেন্দ্র মোদি
পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের নেতারা ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যতটা দ্রুত সম্ভব সাক্ষাতের চেষ্টা করছেন। দেশটির বিকাশমান প্রতিরক্ষাশিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে দিতে যাচ্ছে সরকার। আর পশ্চিমাদের লক্ষ্য শত শত কোটি ডলারের সেই বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া। খবর রয়টার্সের। ১০ দিনের মধ্যে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকেরা ভারত সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির সোভিয়েত যুগের অস্ত্রসম্ভার আধুনিকায়নের প্রস্তুতি শুরু করছেন। তিনি ভারতের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারকের পরিবর্তে শক্তিশালী অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী সব প্রধানমন্ত্রীই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার কথা বলে আসছে এবং প্রতিরক্ষা খাতের কয়েকটি প্রকল্পের পূর্ণ দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ রেখেছে। যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হার্শ প্যান্ট বলেন,
ভারতীয় বাজারব্যবস্থায় নাটকীয় পরিবর্তন আসছে। এ ধরনের ইঙ্গিত পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দেশ নিজ নিজ স্বার্থের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠেছে। আর তারা বুঝতে পেরেছে, ভারতের বাজারে আগে গেলে বেশি সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। ভারতের প্রতিরক্ষা খাত ‘দখলে’র সুযোগ পাওয়ার লক্ষ্যে নয়াদিল্লিতে প্রথম সফরে যাচ্ছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফাবিয়া। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদি ছাড়াও অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠক করবেন। ফাবিয়া মূলত ভারতে ১২৬টি যুদ্ধবিমান বিক্রয়সংক্রান্ত প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি স্থগিত চুক্তি বাতিল করতে চান। এবারের ভারত সফরে তিনি চুক্তিটি সম্পাদন এবং অর্থ ছাড়ের সময় নির্ধারণ করে ফেলতে আগ্রহী। পরের সপ্তাহেই নয়াদিল্লি যাবেন মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন। ভারতের অর্থনৈতিক ও সামরিক উত্থানের প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ত হওয়া উচিত বলে তিনি ইতিমধ্যে মন্তব্য করেছেন। ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সামর্থ্য, প্রযুক্তি ও সহযোগিতা নিয়ে ভারত বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ এবং অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন আগামী মাসের (জুলাই) দ্বিতীয় সপ্তাহেই ভারত সফরে যেতে পারেন বলে গত শুক্রবার দেশটির সরকারি সূত্র খবর দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিমান ক্রয় চুক্তির ব্যাপারে ফ্রান্সের সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি হলেও আশা একেবারে ছেড়ে দেয়নি যুক্তরাজ্য। এদিকে বছরের পর বছর ধরে ভারতের অস্ত্রের চাহিদা পূরণকারী দেশ রাশিয়াও তাদের পুরোনো মিত্র নয়াদিল্লির নতুন উদ্যোগের অংশীদার হওয়ার চেষ্টায় পিছিয়ে নেই। রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি রোগোজিন দুই সপ্তাহ আগেই ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে গেছেন। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র গত বছর রাশিয়াকে পেছনে ফেলে ভারতে অস্ত্র সরবরাহকারী শীর্ষ দেশে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা বিসওয়াল বলেন, ভারত বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে শক্তিশালী ইতিবাচক সম্পর্ক রাখতেই পারে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, ভারত আঞ্চলিক পর্যায়ে একটি অধিকতর শক্তিশালী ও নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হোক। আর এ বিষয়টিকে সারা বিশ্বই স্বাগত জানাবে।

No comments

Powered by Blogger.