থামাও আগুন, বন্ধ করো গুলি- আর কত প্রাণহানি
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের পাঁচ দিনের অবরোধে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর আগের ৭১ ঘণ্টার অবরোধে মারা গিয়েছিল ২২ জন।
এই যে মানুষের অস্বাভাবিক ও নিষ্ঠুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে, হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ মানুষ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে, এর শেষ কোথায়? আর কত দিন চলবে এই মৃত্যু, এই ধ্বংস? শনিবার থেকে শুরু হওয়া অবরোধ আজ বিকেল পাঁচটায় শেষ হওয়ার কথা। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এই সময়সীমাকে আলটিমেটাম হিসেবে বিবেচনা করে এ সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সামনে তবে কী অপেক্ষা করছে?
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব মৃত্যু ও ধ্বংসাত্মক ঘটনা চালানো হচ্ছে সংবিধান রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে। সরকারি দল সংবিধানের বাইরে এক পাও নড়বে না বলে প্রধান বিরোধী দলকে বাদ দিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর বিরোধী দল সেই নির্বাচন ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। দেশের সাধারণ মানুষ কেন তাদের এই দ্বৈরথের শিকার হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাবে? কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এই কাণ্ড চলতে পারে না।
বিরোধী দলের নেতারা জনগণকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে বলেছেন। নিরীহ মানুষের ওপর হামলা না চালাতে দলীয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তার পরও বাস্তবতা হলো, হামলা-নাশকতা চলছেই। গতকালও গাইবান্ধায় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে চারজন মারা গেছেন।
সরকারের দাবি, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তাদের এই দাবিই যদি সত্য হয়, তাহলে নিরীহ মানুষ কেন বোমার ঘায়ে, আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে? বিরোধী দলের কোনো নেতা-কর্মী এ ধরনের নাশকতা ঘটালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব তাদের পাকড়াও করে বিচারে সোপর্দ করা। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, সেটা সবার দাবি। কিন্তু বিরোধী দলের মিছিলে বা সমাবেশে গুলি করে মানুষ মারা তাদের কাজ হতে পারে না।
প্রথমেই সরকারকে স্বীকার করতে হবে যে, সমস্যাটি রাজনৈতিক। রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। শক্তি প্রয়োগ করে বিরোধী দলের কণ্ঠ স্তব্ধ করলে তার পরিণাম হবে আরও ভয়াবহ। অন্যদিকে বিরোধী দলের দাবি যতই যৌক্তিক হোক না কেন, আগুন জ্বালিয়ে বা গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ মেরে যে আন্দোলন তারা করছে, তাতে জনসমর্থন পাওয়া যাবে না। হরতাল-অবরোধের মতো আন্দোলনে সরকারের তেমন ক্ষতি হয় না, বরং দেশের সাধারণ মানুষের জীবনই হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত।
তাই, বিরোধী দলের এমন কর্মসূচি নেওয়া উচিত, যাতে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়। এ প্রসঙ্গে থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী আন্দোলন আদর্শ হতে পারে। সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই।
সর্বোপরি, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সরকার ও বিরোধী দলকে সংযম ও সহিষ্ণুতার পথেই এগোতে হবে। গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন যেমন কাম্য নয়, তেমনি আন্দোলনের নামে গাড়ি পোড়ানো এবং রেললাইন উপড়ে ফেলারও যুক্তি নেই।
No comments