কমিশন, না পলিটিক্যাল কসমেটিক্স? by পলাশ কুমার রায়
দেশে
আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একাধিক কমিশন রয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য
কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, আইন কমিশন ইত্যাদি। এসব কমিশন থেকে সাধারণ
নাগরিকরা কতটা উপকৃত হয়েছে? যে কারণে সরকার এসব কমিশন গঠন করেছিল, তার
কতটুকুই বা বাস্তবায়িত হয়েছে বা হচ্ছে? জাতীয় মানবাধিকার কমিশন : জাতীয়
মানবাধিকার কমিশন থাকা সত্ত্বেও নাগরিকদের ন্যূনতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা
করা সম্ভবপর হয়নি। প্রতিদিনই অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে মানবাধিকার লংঘনের
ঘটনা ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, ঝালকাঠির লিমন হোসেনকে ২০১১ সালের ১৩ মার্চ
র্যাব প্রকাশ্যে গুলি করে একটি পা পঙ্গু করে দিলেও লিমন মানবাধিকার
কমিশনের মানবীয় প্রেম-সহানুভূতি ছাড়া অন্য কোনো ধরনের পরিষেবা পায়নি।
মানবাধিকার কমিশন স্বউদ্যোগে র্যাবের এহেন অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে আইনগত
পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি। এদিকে ২০১১ সালের ১৫ জুলাই রাতে ইস্কাটন গার্ডেন
রোডের খালার বাসা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবদুল কাদের
ফজলুল হক হলে ফেরার সময় সেগুনবাগিচায় পুলিশ তাকে ডাকাত বলে আটক করে।
খিলগাঁও থানার ওসি হেলাল উদ্দিন তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন
এবং মিথ্যা মামলা দেন। লিমন ও কাদেরের মতো হাজার হাজার নিরীহ-নিরপরাধ
ব্যক্তি দেশের কোনো না কোনো এলাকায় প্রতিদিনই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের
দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশন গণমাধ্যমে বিবৃতি আর
ভুক্তভোগীকে সামান্য সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আর কিছুই করিনি। নাগরিক সমাজের
পক্ষে সুপারিশ করা হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী করতে
মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ সংস্কার করার। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য
বাছাই কমিটি, শৃংখলা বাহিনীর ক্ষেত্রে অনুসরণীয় পদ্ধতি, কমিশনের আর্থিক
স্বাধীনতা, কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে এমন আইনের সংশোধনী, কমিশনের
চাহিদানুযায়ী জনবল নিয়োগ ও নিজস্ব ভবন না থাকা ইত্যাদি বিষয় নিষ্পত্তি না
করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়ারই কথা। এ
প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইনের দুর্বলতা আমরা প্রথম দিন থেকেই জানতাম।
যদি কাজ করার ক্ষমতাটা বিস্তৃত করা যায়, তাহলে জনগণকে আমরা আরও বেশি করে
প্রতিকার দিতে সক্ষম হব’। কমিশন চেয়ারম্যানের এ ধরনের হতাশাজনক বক্তব্য
থেকে পরিষ্কার যে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও ক্ষমতায়িত করা
কতটা জরুরি।
তথ্য কমিশন : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা নাগরিকদের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। জনগণ প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক ও জনগণের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক; তাই সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও সরকারি এবং বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট ও পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ (২০০৯ সালের ২০ নম্বর আইন) পাস করে। এই আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী আইন জারির ৬০ দিনের মধ্যে তথ্য সরবরাহের নিমিত্তে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষের তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করার কথা। কিন্তু এখনও সব প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি। তথ্য অধিকার আইন সম্বন্ধে না জানার কারণে অধিকাংশ মানুষ তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তথ্য কমিশন বাংলাদেশের জনসাধারণকে তথ্যপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা সম্পর্কে অবহিত করার লক্ষ্যে আরও ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
দুর্নীতি দমন কমিশন : ২০০৪ সালে পাস হওয়া দুদকের মূল আইনের ২৪ ধারায় বলা আছে, দায়িত্ব পালনে দুদকের স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু ১০ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন সংশোধনী বিল-২০১৩ পাস করা হয়। সংশোধিত আইনের ৩২(২) ও ৩২(ক) ধারায় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ও মামলা দায়েরে সরকারের পূর্ব অনুমতির বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মকর্তা কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত হলে সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো আদালত সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নিতে পারবেন না। কোন আদালতে এই মামলার বিচার হবে, তা সরকার নির্ধারণ করে দেবে। ১১৫ বছরের পুরনো ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারা দুদক আইনে ঢুকিয়ে দুদককে নখ-দন্তহীন বিড়ালে পরিণত করা হল। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দুদককে কার্যকর করার প্রতিশ্র“তি দিলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি কর্তাব্যক্তিদের খুশি রাখতে সেই অঙ্গীকার থেকে সরে এসে দুর্নীতিবাজ সরকারি আমলাদের পক্ষাবলম্বন করল বৈকি! যদিও আগের আইনে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে দুদকের একক ক্ষমতা ছিল।
আইন কমিশন : দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রবর্তন ও বিভিন্ন আদালতে বহুসংখ্যক মামলা দীর্ঘদিন বিচারাধীন থাকার পরিপ্রেক্ষিতে এবং মৌলিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আইনগত দিকসমূহ পুনঃনিরীক্ষণ ও আইন শিক্ষার মানোন্নয়নসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান করার লক্ষ্যে অচল আইনসমূহ বাতিল, প্রচলিত অন্য আইনসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আইনগুলোর যুগোপযোগী সংস্কার অথবা ক্ষেত্রমতো নতুন আইন প্রণয়ন করার উদ্দেশ্যে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করার জন্য একটি স্থায়ী আইন কমিশন প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় সরকার ১৯৯৬ সালে আইন কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। আইন কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কমিশন ১২৫টি আইন সংক্রান্ত সুপারিশ সরকারকে প্রদান করেছে। কমিশনের ওইসব প্রস্তাব সরকার খুব বেশি আমলে নেয়নি। এ বছরের ২৩ জুলাই সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছেন। কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্য আইন বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহ আলম স্যারের কাছে বিনীত অনুরোধ এই যে, ২০০১ সালে মিথ্যা মামলা (প্রতিরোধ ও প্রতিকার) শীর্ষক প্রস্তাবিত আইনটি কার্যকর করা হোক। এই আইনটি কার্যকর হলে নিু আদালত থেকে হাজার হাজার মিথ্যা ও কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা করার প্রবণতা দূর হয়ে যাবে। নিরীহ বিচারপ্রার্থীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। আইন কমিশন কি জনসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থে এই উদ্যোগটি গ্রহণে তৎপর হবে না?
এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা কমিশনগুলো সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং জনসাধারণ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যাশিত পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তা ছাড়া অনাকাক্সিক্ষত যে কোনো দুর্ঘটনার কারণ জানতে চেয়ে সরকার প্রায়শই দি কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ অনুযায়ী কমিশন গঠন করে থাকে। অভিযোগ আছে, কমিশন গঠিত হওয়ার পর সেই কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশে নাটকীয়ভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করার কারণে জনগণ ওই কমিশনের চূড়ান্ত অবস্থান সম্বন্ধে জানতে পারেন না। জনসাধারণকে বোকা ভেবে এই কর্মযজ্ঞ সুদীর্ঘকাল থেকেই চলে আসছে। সুনির্দিষ্ট আইন দ্বারা গঠিত এসব কমিশন জনসাধারণের কতটা উপকারে আসে? জনসাধারণের করের টাকায় ওইসব কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা হলেও কাজের কাজ তেমন কিছুই হয় না বলে প্রায়শই অভিযোগ শোনা যায়। তাহলে ঢাকঢোল পিটিয়ে ওইসব কমিশন রাখার প্রয়োজন কী? সরকার ওইসব কমিশনকে আইন দ্বারা ক্ষমতায়িত করে জনসাধারণের কল্যাণে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেবে এমনটাই প্রত্যাশা। আর কমিশনগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের শুধু আইনি বাধ্যবাধকতার কারণেই নয়, বরং সামাজিক ও মানবীয় মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও জনসাধারণের ন্যায়সঙ্গত এবং যৌক্তিক প্রয়োজনে অকৃপণভাবে এগিয়ে আসার মানসিকতা ধারণ করতে হবে।
পলাশ কুমার রায় : আইনজীবী; আহ্বায়ক সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন (সুপ্রা)
তথ্য কমিশন : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা নাগরিকদের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। জনগণ প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক ও জনগণের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক; তাই সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও সরকারি এবং বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট ও পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ (২০০৯ সালের ২০ নম্বর আইন) পাস করে। এই আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী আইন জারির ৬০ দিনের মধ্যে তথ্য সরবরাহের নিমিত্তে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষের তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করার কথা। কিন্তু এখনও সব প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি। তথ্য অধিকার আইন সম্বন্ধে না জানার কারণে অধিকাংশ মানুষ তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তথ্য কমিশন বাংলাদেশের জনসাধারণকে তথ্যপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা সম্পর্কে অবহিত করার লক্ষ্যে আরও ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
দুর্নীতি দমন কমিশন : ২০০৪ সালে পাস হওয়া দুদকের মূল আইনের ২৪ ধারায় বলা আছে, দায়িত্ব পালনে দুদকের স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু ১০ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন সংশোধনী বিল-২০১৩ পাস করা হয়। সংশোধিত আইনের ৩২(২) ও ৩২(ক) ধারায় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ও মামলা দায়েরে সরকারের পূর্ব অনুমতির বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মকর্তা কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত হলে সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো আদালত সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নিতে পারবেন না। কোন আদালতে এই মামলার বিচার হবে, তা সরকার নির্ধারণ করে দেবে। ১১৫ বছরের পুরনো ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারা দুদক আইনে ঢুকিয়ে দুদককে নখ-দন্তহীন বিড়ালে পরিণত করা হল। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দুদককে কার্যকর করার প্রতিশ্র“তি দিলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি কর্তাব্যক্তিদের খুশি রাখতে সেই অঙ্গীকার থেকে সরে এসে দুর্নীতিবাজ সরকারি আমলাদের পক্ষাবলম্বন করল বৈকি! যদিও আগের আইনে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে দুদকের একক ক্ষমতা ছিল।
আইন কমিশন : দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রবর্তন ও বিভিন্ন আদালতে বহুসংখ্যক মামলা দীর্ঘদিন বিচারাধীন থাকার পরিপ্রেক্ষিতে এবং মৌলিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আইনগত দিকসমূহ পুনঃনিরীক্ষণ ও আইন শিক্ষার মানোন্নয়নসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান করার লক্ষ্যে অচল আইনসমূহ বাতিল, প্রচলিত অন্য আইনসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আইনগুলোর যুগোপযোগী সংস্কার অথবা ক্ষেত্রমতো নতুন আইন প্রণয়ন করার উদ্দেশ্যে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করার জন্য একটি স্থায়ী আইন কমিশন প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় সরকার ১৯৯৬ সালে আইন কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। আইন কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কমিশন ১২৫টি আইন সংক্রান্ত সুপারিশ সরকারকে প্রদান করেছে। কমিশনের ওইসব প্রস্তাব সরকার খুব বেশি আমলে নেয়নি। এ বছরের ২৩ জুলাই সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছেন। কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্য আইন বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহ আলম স্যারের কাছে বিনীত অনুরোধ এই যে, ২০০১ সালে মিথ্যা মামলা (প্রতিরোধ ও প্রতিকার) শীর্ষক প্রস্তাবিত আইনটি কার্যকর করা হোক। এই আইনটি কার্যকর হলে নিু আদালত থেকে হাজার হাজার মিথ্যা ও কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা করার প্রবণতা দূর হয়ে যাবে। নিরীহ বিচারপ্রার্থীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। আইন কমিশন কি জনসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থে এই উদ্যোগটি গ্রহণে তৎপর হবে না?
এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা কমিশনগুলো সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং জনসাধারণ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যাশিত পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তা ছাড়া অনাকাক্সিক্ষত যে কোনো দুর্ঘটনার কারণ জানতে চেয়ে সরকার প্রায়শই দি কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ অনুযায়ী কমিশন গঠন করে থাকে। অভিযোগ আছে, কমিশন গঠিত হওয়ার পর সেই কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশে নাটকীয়ভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করার কারণে জনগণ ওই কমিশনের চূড়ান্ত অবস্থান সম্বন্ধে জানতে পারেন না। জনসাধারণকে বোকা ভেবে এই কর্মযজ্ঞ সুদীর্ঘকাল থেকেই চলে আসছে। সুনির্দিষ্ট আইন দ্বারা গঠিত এসব কমিশন জনসাধারণের কতটা উপকারে আসে? জনসাধারণের করের টাকায় ওইসব কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা হলেও কাজের কাজ তেমন কিছুই হয় না বলে প্রায়শই অভিযোগ শোনা যায়। তাহলে ঢাকঢোল পিটিয়ে ওইসব কমিশন রাখার প্রয়োজন কী? সরকার ওইসব কমিশনকে আইন দ্বারা ক্ষমতায়িত করে জনসাধারণের কল্যাণে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেবে এমনটাই প্রত্যাশা। আর কমিশনগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের শুধু আইনি বাধ্যবাধকতার কারণেই নয়, বরং সামাজিক ও মানবীয় মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও জনসাধারণের ন্যায়সঙ্গত এবং যৌক্তিক প্রয়োজনে অকৃপণভাবে এগিয়ে আসার মানসিকতা ধারণ করতে হবে।
পলাশ কুমার রায় : আইনজীবী; আহ্বায়ক সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন (সুপ্রা)
No comments