রাজনীতির বিবর্তন ও এলিট শ্রেণী by ড. মীজানূর রহমান শেলী

ইংরেজি 'এলিট' কথাটির সঠিক বাংলা নিয়ে মতভেদ থাকা স্বাভাবিক। আভিধানিক সংজ্ঞায় অভিজাত; ক্ষমতা, প্রতিভা অথবা সুযোগ-সুবিধার কারণে সমাজের উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত শ্রেণী। সাধারণ অর্থে জীবনের যেকোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ বা অগ্রণীদের এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হয়।
সব দিক থেকে বিচার করলে যেকোনো সমাজের অগ্রণী শ্রেণী স্বভাবতই বুদ্ধি, ধন-সম্পদ, শক্তি ও পরাক্রমে প্রবল। এ শ্রেণী সাধারণত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। রাজনীতিতেই তার উদ্ভব ঘটে এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারও ঘটে পরিবর্তন অথবা সে-ই আনে সমাজের রদবদল, তা কম-বেশি যাই হোক না কেন। বিপ্লবধর্মী পরিবর্তনের ফলে যে বিপুল ও বিশাল রদবদল ঘটে, তার পরিণতিতে সমাজের প্রতিষ্ঠিত এলিটের ভাগ্য বদলে যায়। বেশির ভাগেরই ভাগ্য বিরূপ হয়ে দাঁড়ায়, ঘটে তাদের পতন ও বিলোপ। সে জায়গায় পরিবর্তনকারী শক্তির ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠে নতুন এলিট শ্রেণী। কিন্তু প্রখ্যাত ইতালীয় সমাজবিজ্ঞানী ভিলফ্রেডো প্যারোটো (১৮৪৮-১৯২৩) তাঁর বিখ্যাত 'সার্কুলেশন অব এলিট' বা এলিট শ্রেণীর সঞ্চালন নিয়ে যে তত্ত্ব রচনা করেন, তার বক্তব্য ভিন্ন। প্যারোটোর তত্ত্ব অনুসারে শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন, বিপ্লব প্রভৃতির কারণ কিন্তু জনগণ দ্বারা তাদের উৎখাত বা রদবদল নয়। বরং এ রদবদলের মূল উৎস নয়া কোনো এলিট, যা পুরনো এলিটের পতন ঘটায়। এ প্রক্রিয়ায় জনসাধারণ মূল উদ্যোগী বা নিয়ামকের ভূমিকা নয়, বরং অনুসারী ও সমর্থকের ভূমিকাই পালন করে।
প্যারোটোর কাছে মৌলিক স্বতঃসিদ্ধ হচ্ছে মানুষের অসমতা। তাঁর মতে, মানুষ শারীরিকভাবে, বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকে ও নৈতিকভাবে সমান হয় না। সমাজে বা তার যেকোনো স্তরে কোনো কোনো মানুষ অন্য সবার চেয়ে বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, দক্ষ ও সক্ষম। যেকোনো গোষ্ঠীর মধ্যে যেসব ব্যক্তি সবচেয়ে সক্ষম, তারাই এলিট শ্রেণীর সদস্য। প্যারোটোর তত্ত্বে এলিট শব্দটির কোনো নৈতিক বা বিশেষ মর্যাদার ব্যঞ্জনা নেই। তাই প্যারোটোর সংজ্ঞা অনুযায়ী সক্ষমরাই অগ্রণী ও নিয়ামক। এই শ্রেণীকে দুভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হলো তাঁরা, যাঁদের হাতে শাসনের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব রয়েছে, তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে সরকার ও শাসন চালানোর ব্যাপারে ভূমিকা রাখেন। তাঁদের বাইরের এলিটরা হলো বেসরকারি এলিট। প্যারোটো তাঁর তত্ত্বে মূলত শাসক এলিটদের বুঝিয়েছেন।
মনে হয় প্যারোটো বিশ্বাস করতেন যে একমাত্র সম্পূর্ণ মুক্ত ও বাঁধাবন্ধনহীন সমাজেই (open society) উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রকৃত সক্ষমতা সঠিক স্থান খুঁজে পায়। এ ধরনের সমাজেই সক্ষম ও দক্ষ ব্যক্তিরা শাসনকার্য চালান। কিন্তু তিনি এও জানতেন যে বাস্তবে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত সমাজ সম্ভব নয়। সত্য কথা হলো এই যে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ধন-সম্পদ পারিবারিক ও সখ্যের সম্পর্কের মতো বাঁধাবন্ধন ব্যক্তিবিশেষের সমাজে উচ্চ শ্রেণীতে সঞ্চালন দুঃসাধ্য করে তোলে। ফলে যাঁদের গায়ে এলিটের তক্মা আঁটা থাকে, তাঁদের সবাই সক্ষম বা উৎকৃষ্ট নন।
ক্ষমতার বলয়ে বা তার বাইরে থাকা এলিটরা যখন তাদের শ্রেণীতে দক্ষ ও সক্ষম নতুনদের প্রবেশ করতে দেয় না, তখন এলিট সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। এ অবস্থায় হয় নিম্নস্তর শ্রেণী থেকে এলিটে উত্তরণে নতুন খাত ও পথ তৈরি হয় অথবা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। সক্ষম ও দক্ষ ব্যক্তিরা শাসক এলিট পরিমণ্ডলে প্রবেশ করতে না পারলে তাঁরা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পথে অগ্রসর হন।
প্যারোটো তাঁর তত্ত্বের ব্যাখ্যায় শাসক এলিট শ্রেণীকে দুভাগে বিভক্ত করেন। যাঁরা উদ্যমী চতুর, ঝুঁকি নিতে উৎসাহী ও কুশল তাঁদের তিনি ম্যাকিয়াভেলির ভাষায় 'শৃগাল' হিসেবে বর্ণনা করেন। অন্যদিকে তাঁদের মধ্যে যাঁরা ধীরস্থির, রক্ষণশীল ও সাহসী তাঁদের প্যারোটো 'সিংহ' বলে ডাকেন। তাঁর মতে, এই দুভাগের সুষম সংমিশ্রণই বিদ্যমান এলিট শ্রেণীকে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। যখন এ ধরনের আদর্শ মিশ্রণ সম্ভব হয় না, তখন এলিট শ্রেণীতে ভারসাম্যের অভাব ঘটে এবং তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। সক্ষম নেতৃত্ব পেলে এই চ্যালেঞ্জ সফল হয় এবং এলিটের সঞ্চালন ঘটে ও নতুন এলিটের আগমন সম্ভব হয়।
অবিভক্ত বঙ্গ এবং পূর্ব পাকিস্তান : যে ভূখণ্ডের সমন্বয়ে বাংলাদেশের সৃষ্টি, তা ১৯৪৭ সালের উপমহাদেশ বিভাগের আগে ব্রিটিশশাসিত ভারত ও অখণ্ড বৃহত্তর বঙ্গের অংশ ছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুক্তিসংগ্রাম পর্যন্ত পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত এই ভূখণ্ড পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ ছিল। এই দুই কালেই এ অঞ্চলে মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে উৎসারিত এলিটরা রাষ্ট্রবিপ্লবে নেতৃত্ব দেন।
প্রাক-১৯৪৭ যুগে বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও সারা বঙ্গে মধ্যবিত্ত সমাজ ও এলিট শ্রেণী ছিল মূলত উচ্চবর্ণের হিন্দুশাসিত। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের আনুকূল্যে তুলনামূলকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও শক্তিশালী অমুসলিম মধ্যবিত্ত ও এলিট শ্রেণী ছিল পরাক্রমশালী। তাদের প্রাধান্য উঠতি বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দ্বারা প্রতিকূল বিবেচিত হতো। এই দুই সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থের সংঘাত পূর্ব বাংলার মুসলিমদের ১৯৩০-৪০ দশকের সর্বভারতীয় মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদী তথা পাকিস্তান আন্দোলনে শরিক করে।
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যে এলিট সারা পাকিস্তানে প্রবল ছিল এবং সে রাষ্ট্রে নীতি-নিয়ন্তা হিসেবে কাজ করছিল, সেই এলিটরা পূর্ব বাংলার স্বার্থ ও উন্নতির বৈরী ও প্রতিকূল হওয়ায় তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে এক নতুন প্রধানত বাঙালি এলিট। এই শ্রেণীর বিকাশ ও শক্তিবৃদ্ধি ঘটে পাকিস্তানের ২৪ বছরে। বর্ণ হিন্দু প্রভাবিত ও ব্রিটিশশাসিত ঔপনিবেশিককালে প্রান্তিক অবস্থানে স্থিত এই মুসলিম প্রধান মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে যে উদ্যমী নয়া এলিট তৈরি হয়, তারাই পাকিস্তানের অন্তর্লীন ঔপনিবেশিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে। এর ফলে সূচনা হয় পূর্ব বাংলার বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ, যার পরিণতিতে ১৯৭১ সালে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটে।
প্যারোটোর এলিট সঞ্চালন তত্ত্ব এখানে অনেকটা বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে বলা চলে। প্রাক-১৯৪৭ এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল, এই দুইকালে আর্থ-রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট ও বিকশিত নয়া এলিটের সক্রিয় ভূমিকার ফলেই রাষ্ট্রবিপ্লব ঘটে। মানচিত্র পরিবর্তিত হয়। আসে যুগান্তকারী রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিবর্তন।
বাংলাদেশ : স্বাধীনতার চার দশক : এলিট পরিবর্তনের যে প্রক্রিয়া পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সৃষ্টির মূলে কাজ করেছিল, তা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের আবির্ভাবের পর অবিকৃতভাবে চালু থাকতে পারেনি বলেই মনে হয়। এই চার দশকের কিছু বেশি সময়ে এলিট সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি যেন উল্টো রথে চলেছে। এসব ক্ষেত্রে এলিটরা সরকারে যত না পরিবর্তন এনেছেন, ভিন্ন ভিন্ন নতুন সরকার তার চেয়ে বেশি পরিবর্তন এনেছে নবসৃষ্ট এলিট তৈরি ও তাদের বিকাশে। এখানে যে প্রক্রিয়া প্রবলভাবে সক্রিয় দেখা যায়, তাকে প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট রিলেশনশিপ নেটওয়ার্ক বা পৃষ্ঠপোষক ও পোষিতের সম্পর্কের বেড়াজাল বলে অভিহিত করা যায়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় লাভের পর যে সরকার নবসৃষ্ট সার্বভৌম রাষ্ট্রের কাণ্ডারি হয়, তার সমস্যা ও সংকট ছিল জটিল ও বিশাল। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি ও সমাজ গঠনের কাজে এবং মানবিক বিপর্যয় ও দুর্যোগের ব্যবস্থাপনায় তারা ব্যতিব্যস্ত থাকে। মিশ্র অর্থনীতির দেশ পাকিস্তানে তৎকালীন পূর্ব বাংলা, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের শিল্প ও অর্থনীতির অনেকখানি জুড়েই ছিল প্রধানত অবাঙালি পশ্চিম পাকিস্তানি পুঁজিপতিরা। মুক্তিযুদ্ধকালে তারা দেশত্যাগ করায় সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির অনুসারী হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম সরকার- আওয়ামী লীগ সরকার শুধু নীতিগত দিক থেকেই নয়, অনেকটা বাধ্য হয়েই ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা ন্যস্ত করা হয় দলীয় অনুগতদের কাছে। অনিয়ম, শৈথিল্য ও দুর্নীতির পথ ধরে এই শ্রেণীভুক্ত অনেকেই অর্থ ও প্রতিপত্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠে আসে নতুন এলিটের কাতারে। এ ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির বিশৃঙ্খলা এবং নয়া ও অনভিজ্ঞ সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই হয়ে ওঠে আঙুল ফুলে কলাগাছ। তাঁরাও জমায়েত হন নতুন এলিটের কাতারে।
১৯৭৫ : পটপরিবর্তনের পর : স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য স্বল্পসংখক বিপথগামী সক্রিয় ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার, বেসামরিক ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতায় নির্মমভাবে নিহত হন। এর ফলে যে বিশাল রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে তার প্রাথমিক নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগেরই এক পথচ্যুত অংশ। এর খলনায়ক ছিলেন সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ। অল্পকালের মধ্যেই এক পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে মোশতাক অপসারিত হন এবং তাঁর স্থলে বাংলাদেশের শাসন কর্তৃত্ব মূলত ন্যস্ত হয় তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের হাতে। রাষ্ট্রপতি জিয়া কিছু সামরিক অফিসারের হাতে নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের হাতে শাসনক্ষমতা ন্যস্ত হয়।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সালের মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি জিয়া প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপির শাসনামলে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এক নতুন এলিটের সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রধানত আওয়ামী লীগপন্থী নয় এবং আওয়ামী লীগবিরোধী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীরা এই এলিটের অন্তর্ভুক্ত হয়। তাদের মধ্যে ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রের অবসরপ্রাপ্ত আমলা এবং উচ্চাভিলাষী পেশাজীবী গোষ্ঠী। তাদের পদ, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থার শিল্প ও বাণিজ্য ঋণ, বিভিন্ন সরকারি ঠিকাদারি ও ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনে সাহায্য করে ক্ষমতাসীন দল। এই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার বদলে তাদের কাছ থেকে আশা করা হয় যে তারা ক্ষমতাসীন পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তি ও দলের ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদি ও মজবুত করবে।
১৯৮২ সালে সেনাপ্রধান জেনারেল এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে সামরিক শাসন ও পরবর্তীকালে শাসনতান্ত্রিক কিন্তু ছদ্মবেশী আধাসামরিক শাসন ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত চালু থাকে। এই আমলেও রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্টি হয় আরেক নতুন এলিটের। ১৯৯০ সালের শেষাশেষি প্রবল গণ-আন্দোলনের ফলে এরশাদ সরকারের অবসান ঘটলে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনর্বহাল হয়। সংসদীয় আমলের প্রায় ২৩ বছরে রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রধানত দ্বিদলীয় রূপ নেয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি পালাক্রমে দুবার করে ক্ষমতায় আসে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ সময়ে পৃষ্ঠপোষক ও পোষিতের বেড়াজাল আরো বিস্তৃত ও নিবিড় হয়েছে। আদর্শ ও দলীয় সংগঠন এবং গণতন্ত্রের মূলনীতি পারস্পরিক সহনশীলতার স্থানে ক্ষমতার রাজনীতি প্রধান হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার লড়াইয়ে রাজনীতির পথ নয়, প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট নেটওয়ার্ক বা পৃষ্ঠপোষক ও পোষিতের স্বার্থভিত্তিক দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্কের বেড়াজাল রাজনীতিকে বিকৃত করেছে, গণতন্ত্রকে করেছে নির্জীব ও দুর্বল।
বাংলাদেশে তাই প্যারোটোর তত্ত্ব অনুযায়ী নতুন এলিটরা রাষ্ট্রবিপ্লব বা নয়া ব্যবস্থার প্রবর্তন করছে না, বরং এখানকার বাস্তবতায় বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তৈরি করে চলছে দলবাজ নতুন নতুন এলিট, যারা রাজনীতিকে করছে বিপথগামী ও অশুদ্ধ এবং গণতন্ত্রকে করছে বিপর্যস্ত ও নির্জীব।
লেখক : চিন্তাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও সিডিআরবির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
mrshelley43@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.