সিটি নির্বাচনে গণরায়-শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অনন্য দৃষ্টান্ত

রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল- চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত সব প্রার্থী। পরাজিত ও বিজয়ী প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল উল্লেখযোগ্য।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের এই পরাজয়কে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিশেষ ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছেন। কারো কারো মতে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি জনসমর্থন যে ব্যাপকভাবে কমে গেছে, এটি তারই প্রমাণ। অবশ্য এ ব্যাপারে ভিন্নমতও আছে। তাঁরা জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনকে এক করে দেখতে চান না। তাঁদের মতে, স্থানীয় নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে রাজনীতির পাশাপাশি আরো অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে এবং এবারও করেছে। তাই বলে চারটির মধ্যে একটিতেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হতে পারবেন না- এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না।
এই চারটি সিটি করপোরেশনের আগের নির্বাচনটি হয়েছিল নবম জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে। সেখানেও আমরা রাজনীতিরই জয়-পরাজয় লক্ষ করেছিলাম। সিটি নির্বাচনের ফলাফলেরই প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তখন চারটি সিটি করপোরেশনেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছিলেন। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের জয়জয়কার দেখা গিয়েছিল। কাজেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও যে রাজনীতির প্রভাব পড়ে, সেটি স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন আসতেই পারে, মাত্র সাড়ে চার বছরে কেন আওয়ামী লীগের এত বড় বিপর্যয় ঘটল? এর জবাব আওয়ামী লীগকেই খুঁজে বের করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে যেতে হবে। তাদের অভিযোগগুলো জানতে হবে। তবে এটুকু বলা যায়, এ সময়ের সরকার পরিচালনায় মানুষ যেমন সন্তুষ্ট হতে পারেনি, তেমনি বিরোধী দলের প্রতি গণতান্ত্রিক আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও তাদের ব্যর্থতা ছিল অপরিসীম, যা মানুষ মেনে নিতে পারেনি। সেই সঙ্গে দলীয় ক্যাডারদের উৎপাত মানুষকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে।
সিটি নির্বাচনে সরকারের একমাত্র সাফল্য হচ্ছে, তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারা। দলীয় সরকারের অধীনে এত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আগে কখনো দেখা যায়নি। এ জন্য নির্বাচন কমিশনও প্রশংসার দাবিদার। ভোটগ্রহণ পর্যন্ত সব প্রার্থীই স্বীকার করেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন প্রার্থী ছাড়া আর কেউই নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেননি। তাঁর এই প্রত্যাখ্যান বা অনিয়মের অভিযোগ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলেও মনে হয় না। বরং এটি করে তিনি দ্বিতীয় দফায় পরাজয়বরণ করেছেন বলেই মনে করেন অনেকে। অন্যদিকে সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে পরাজয় মেনে নিয়েছেন এবং বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দিত করেছেন। আমরা তাঁর এই গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রদর্শনকে সাধুবাদ জানাই।

No comments

Powered by Blogger.