গণরায়ের বিরুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ারিং করা যায় না

দেশের চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়কে গণজোয়ার হিসেবে উল্লেখ করে খুলনা এলাকায় বিএনপির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, গণরায়ের বিরুদ্ধে কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং করা যায় না।
তিনি বলেন, সরকারি দলের প্রার্থীরা সিটি নির্বাচনের ফলাফল ইঞ্জনিয়ারিং করে প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে জণগণের পাহারার মুখে তা পারেনি। মূলত সরকারের ব্যর্থতার জবাব দিয়েছে চার সিটির ভোটররা।
শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু।
আলোচকরা চারটি সিটির নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের জয় পরাজয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক বলেন, দেশের চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতে চলেছেন। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আজ যাঁরা নির্বাচিত হচ্ছেন তাঁরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থী। তাঁরা ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী। এ নির্বাচন গত সাড়ে চার বছরে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার পরিচয়। দুর্নীতি অপশাসনের পরিচয়। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব কিছুতেই তাঁর দলের সাফল্য টেনে আনেন। বিএনপির বিষয়ে কোনো সাফল্য টানেন না।
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক মোস্তফা ফিরোজ শামসুজ্জামান দুদুর কাছে জানতে চান, 'নির্বাচনে বিজয়ী হচ্ছেন মুখে হাসি দেখছি না কেন?' জবাবে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এখনো তো চূড়ান্ত বিজয় হয়নি। তা ছাড়া সরকার যে শেষ রাতে কী করে তা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তিনি এ সময় রাজশাহীতে ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী বুলবুলের বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সরকারের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন ঢিমেতালে ভোটের রেজাল্ট দিচ্ছে। তিনি বলেন, দেখেন ভোট শেষ হয়েছে আট ঘণ্টার বেশি হতে চলেছে, এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হচ্ছে না। ভোটররা ফল প্রকাশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। পরে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সব সিটির ভোটরদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক টেলিভিশনের লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে বাংলাভিশনের রিপোর্টারের কাছে জানতে চান, বিএনপির প্রতিনিধিদল কেন এত রাতে নির্বাচন কমিশনে গেছে। এ সময় সরাসরি টেলিভিশনের পর্দায় কথা বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মইন খান। তিনি বলেন, চারটি সিটিতে নির্বাচন শেষ হয়েছে আট ঘণ্টা আগে। এখনো কোনো ফলাফল হয়নি। দেশের ১৬ কোটি মানুষ তাকিয়ে আছে রেজাল্টের দিকে। অথচ নির্বাচন কমিশনের কোনো তৎপরতা নেই। নির্বাচন কমিশন হেডকোয়ার্টার থেকে ফলাফল দেরির জন্য কেন্দ্র থেকে কোনো তাগাদাও দিচ্ছে না। এ জন্য বিএনপি উদ্বিগ্ন। সমগ্র জাতি উদ্বিগ্ন। আমরা বিএনপির প্রতিনিধিদল জানতে এসেছি কেন ফলাফল দেরিতে প্রকাশ করা হচ্ছে।
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে বরিশাল সিটির ফলাফল ঘোষণা দেখানো হয়। তাতে দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশন সেখানকার বিএনপিদলীয় প্রার্থী আহসান হাবিব কামালকে মেয়র পদে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। সেখানে বিএনপির সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার কামালকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিএনপির আরো বেশ কয়েকজন নেতা কামালকে ধরে কান্নাকাটি করেন। এ সময় একটি আবেগঘন পরিবেশের তৈরি হয়।
এ সময় আলোচনায় যোগ দিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'আমি এখানে টক শোতে আসার আগে বেশ আগ্রহ নিয়ে নির্বাচনী সংবাদ দেখছিলাম।' তিনি বলেন, নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী স্থানীয় কোনো নির্বাচন দলীয় কোনো ব্যানারে হওয়ার কথা নয়। তবে এবার দেখলাম আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শুধু নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীই দেয়নি, তারা তাদের প্রার্থীদের জেতানোর জন্য রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে। তিনি বলেন, চার সিটির নির্বাচনে অনেক স্থানে টাকা ছড়াছড়ি হয়েছে। সেখানে নির্বাচন কমিশন মুখে কুলুপ দিয়ে বসে ছিল। তারা কেন এমন অভিযোগে প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল করেনি। তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। তা না হলে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা যাবে না।
সিপিবি সভাপতি আরো বলেন, নির্বাচনে কোথাও কোথাও ধর্মীয় সুরসুরি দেওয়া হয়েছে। ভোটরদের কাছে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা তুলে ধরা হয়েছে। এটা নির্বাচনী আচরণের পরিপন্থী। কোনোভাবেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের ধর্মীয় প্রচারণা নির্বাচনকে প্রভাবিত করে বলেও মন্তব্য করেন কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, চার সিটিতে কোনো নির্দলীয় নির্বাচন হয়নি। হয়েছে দলীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে যাঁরা পরাজিত হয়েছেন, তাঁরা ছিলেন সিটিং মেয়র। তাঁদের পরাজয় নিয়ে অনেক মতোপার্থক্য থাকবে তবে আমার মনে হয় ধর্মীয় বিষয়টি এবার বেশি করে সামনে চলে এসেছে।

No comments

Powered by Blogger.