রুহানিতে মুক্তি খুঁজেছেন ইরানিরা

বছরের পর বছর ধরে চলা অর্থনৈতিক অবরোধ ও কঠোর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে হাঁপিয়ে উঠেছে ইরানের সাধারণ মানুষ। গত শুক্রবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁরা ব্যালটের মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে মুক্তির দাবি ছুড়ে দিয়েছেন। নির্বাচিত করেছেন মধ্যপন্থী ধর্মীয় নেতা হাসান রুহানিকে।  ভোট শেষে শুক্রবার দিবাগত রাত ও শনিবারের বেশির ভাগ সময় দেশে ও বিদেশে থাকা ইরানিরা হাসান রুহানির জয়ে উল্লাস করেছেন। তাঁদের সেই উল্লাসের সঙ্গে একধরনের মুক্তির আনন্দ মিশ্রিত ছিল। রুহানির জয়ে তাঁদের মনে হয়েছে, এর মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত মাহমুদ আহমাদিনেজাদের আট বছরের ‘দুঃসহ শাসনের’ অবসান হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগত প্রার্থীকে রুহানি চরমভাবে পরাজিত করায় অনেক রক্ষণশীলই ধাক্কা খেয়েছেন। তবে আসল চমকের বিষয় হলো, ২০০৯ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর এবারের নির্বাচন হয়েছে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চার বছর আগে বিতর্কিত নির্বাচনের পর ইরানে যে বিক্ষোভ হয়েছিল এবং আহমাদিনেজাদ যেভাবে বিক্ষোভকারীদের দমন করেছিলেন, তা ইসলামি প্রজাতন্ত্রটিকে সমালোচনার মুখে ফেলে দিয়েছিল। রুহানির জয়ের মাধ্যমে সেই ক্ষতিগ্রস্ত ভাবমূর্তিকে ঠিক করা যাবে এবং সংস্কারপন্থী দলগুলো এখন ভালোভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ পাবে। ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের সভাপতি ত্রিতা পারসি এ বিষয়ে বলেন, ‘যদিও ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল চালিকাযন্ত্রগুলো এখনো কট্টরপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তবু এ নির্বাচনের মাধ্যমে সংস্কারপন্থীরা প্রমাণ করতে পেরেছেন, জনগণের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদেরও প্রতিবাদ করার ক্ষমতা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এর মাধ্যমে ভোটাররা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে তাঁদের বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছেন। রুহানি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি যে ধরনের নীতি অনুসরণ করছেন, তা ইরানকে চরম সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ কারণে তাঁর জয়ে তেহরানের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বন্দ্ব কমবে। কেউ কেউ মনে করেন, রুহানি পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিতে সক্ষম হবেন। তবে খামেনি ইরানের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক হিসেবে বহাল থাকায় এ বিষয়ে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে রুহানিকে অনেক সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করতে হতে পারে। রক্ষণশীল পার্লামেন্ট সদস্য আহমদ তাভাকোলি বার্তা সংস্থা ইসনাকে বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে রুহানি তাঁর অনুগত লোকজনকে বসাবেন এবং অবশ্যই তাঁর প্রভাব দৃশ্যমান হবে। তবে অন্যান্য সাধারণ নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে খামেনির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং রুহানিও খামেনিকে সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবেন। রুহানি ‘নাগরিক অধিকার সনদ’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে আসছেন অনেক আগে থেকেই। এসব প্রতিশ্রুতির কতটুকু তিনি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারবেন, সেটাই দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.