ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ

ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আজ শুক্রবার ভোট নেওয়া হবে। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের উত্তরসূরী হিসেবে ভোটাররা কাকে বেছে নেবেন, তা নির্ধারণের দিন আজ। তবে এবার শক্তিশালী কোনো প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনের ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইসলামপন্থী রক্ষণশীল শিবিরে বিভক্তি থাকায় সংস্কারপন্থীরা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। সংস্কারপন্থী প্রার্থী ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক সাবেক আলোচক হাসান রৌহানি সমমনাদের বড় অংশের সমর্থন পাচ্ছেন। তবে রক্ষণশীল প্রার্থীদের মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক প্রধান আলোচক সাইদ জলিলিও শক্ত অবস্থানে আছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আজকের ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের কম ভোট পেলে ২১ জুন দ্বিতীয় দফা ভোট হবে।
এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রায় ৭০০ ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। সংবিধানের রক্ষাকর্তা গার্ডিয়ান কাউন্সিল তাদের মধ্যে মাত্র আটজনকে ছাড়পত্র দেয়। পরে দুজন স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। আজ লড়াই হবে ছয়জনের মধ্যে। এরা হলেন- হাসান রৌহানি, সাইদ জলিলি, মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ, আলী আকবর বেলায়াতি, মোহসেন রেজাই ও মোহাম্মদ কারাজিও। এদের মধ্যে রৌহানি ও কারাজি সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত। ইরানের সংবিধান অনুযায়ী পরপর তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারবেন না কেউ। তাই এবার প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ প্রার্থী হতে পারেননি।
এবার ইরানে নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। গত বুধবার ছিল নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জনসংযোগের সুযোগ পেয়েছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনপূর্ব জরিপে কোনো প্রার্থীর অবস্থানই এককভাবে শক্তিশালী বলে মনে হচ্ছে না। ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থার মেহের নিউজ এজেন্সির এক জরিপে ১০ হাজার ভোটারের মধ্যে কালিবাফকে সমর্থন দিয়েছেন ১৭ দশমিক আট শতাংশ ভোটার। রৌহানির পক্ষে ছিল ১৪ দশমিক ছয় শতাংশ ভোটারের সমর্থন। জলিলির পক্ষে ছিল ৯ দশমিক আট শতাংশ সমর্থন। তবে ভোটারদের একটি বড় অংশ, ৩০ দশমিক পাঁচ শতাংশ ভোটার সিদ্ধান্তহীন ছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির আহবানে গত মঙ্গলবার সংস্কারপন্থী আরেক প্রার্থী মোহাম্মদ রেজা আরেফ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এরপর থেকেই রৌহানির সমর্থন বাড়ছে। খাতামি ভোটারদের প্রতি আহবান জানান, 'যারা দেশের মর্যাদা ও উন্নতি কামনা করেন' তাঁরা যেন রৌহানিকেই ভোট দেন। প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানিও রৌহানিকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে পরমাণু কর্মসূচির প্রশ্নে পশ্চিমাবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে সাইদ জলিলি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী অবস্থানে আছেন বলেও ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ হিসেবেও তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন। নির্বাচন উপলক্ষে আভ্যন্তরীণ ও বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোর ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইরান।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নজরদারিমূলক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জানায়, ইরান বিদেশি সাংবাদিকদের অধিকাংশের ভিসা আবেদন বাতিল করেছে। তবে এক হাজারের বেশি সাংবাদিক ভোটের দিন সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছে ইরানি টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভি।
ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুগল গত বুধবার জানায়, হাজার হাজার ইরানির গুগল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড চুরির চেষ্টা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে এ আক্রমণ চালানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গুগল। সূত্র : এএফপি, জিনিউজ।

No comments

Powered by Blogger.