বৈশ্বিক শান্তিসূচক-বাংলাদেশের সুপরিবর্তন কাম্য

সারা বিশ্বেই শান্তিসূচক কমেছে ৫ শতাংশ। গত এক বছরে বাংলাদেশ পিছিয়েছে ১৪ ধাপ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস
পরিচালিত জরিপে আটটি বিষয় বিবেচনায় এনে এই সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পিছিয়ে যাওয়ার সর্বাধিক কারণ হিসেবে নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা, অপরাধের প্রবণতা, সংঘবদ্ধ অপরাধের মতো বিষয়গুলোর প্রাধান্য স্পষ্ট। ফলে আগের বছর যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম, সেখানে এবার তা পিছিয়ে ১০৫তম স্থানে চলে গেছে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় ত্রুটি ও ব্যর্থতা, প্রশাসনিক দুর্নীতির সঙ্গে সঙ্গে এখানকার শান্তি বিঘি্নত হওয়ার জন্য সর্বাধিক দায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। যার পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক আচরণের ঘাটতি। প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বছর এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জননিরাপত্তার প্রতিকূলে চলে যায়। সরকারি দল-বিরোধী দল নির্বিশেষে গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী হলেও এক পক্ষ আরেক পক্ষকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার কৌশল হিসেবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সরকারি দল বিরোধীপক্ষকে দমন করার নীতি গ্রহণ করে। বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা বেড়ে যায়। আবার সরকারি দলের কর্মীরা অবৈধ আয়ের পথে যেতে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। বিরোধী দলের কর্মীরা আন্দোলনের নামে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে হরতালের মতো গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়ার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। পরিণতিতে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি মন্থর হয়ে যায়।
এখানে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থতা তার বড় উদাহরণ। একই সঙ্গে হত্যা, জখম, গুম, বিনা বিচারে হত্যার মতো অমানবিক কাজ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। নিকট অতীতেও বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শান্তিপূর্ণ একটি দেশ। এই সম্মানকে পুনরুদ্ধার করতে হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি অধিকতর মনোযোগী হতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সোমালিয়া, আফগানিস্তান, সুদান, সিরিয়া, পাকিস্তান কিংবা ইরাকের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির পথ পরিহার করতে হবে। সেই দেশগুলোর প্রতিটিই রাজনীতির বলি হয়েছে। সুস্থ রাজনৈতিক ধারা প্রবাহে রাজনৈতিক দলগুলোকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সে ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। তার প্রমাণও আছে আমাদের দেশে।

No comments

Powered by Blogger.