রানা প্লাজা ধসক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হোক

সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর দেড় মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এ ঘটনায় মারা গেছেন এক হাজার ১২৭ জন। আহত হয়েছিলেন আরো বেশি। শ্রম আইন অনুযায়ী নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা।
আর আহতদের চিকিৎসা খরচসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এ লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহ করে যাচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, তারা নিজেদের পকেট বাঁচিয়ে বাইরের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে ক্ষতিপূরণের দায় সারতে চাইছে। সম্ভবত এই গড়িমসির কারণেই এখন পর্যন্ত নিহত কোনো শ্রমিকের পরিবারই ক্ষতিপূরণের অর্থ পায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তার অভাব, নিম্ন মজুরিসহ বিভিন্ন বিষয় আজ সারা দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। শ্রম আইন সংশোধনসহ কাজের মানোন্নয়নের জন্য বাইরে থেকে ব্যাপক চাপ আসছে। শ্রম আইনের সংশোধনী মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেও তা এখনো সংসদে উপস্থাপিত হয়নি। অথচ এ আইন সংশোধন না হওয়ায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশে 'বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম' নামক কর্মসূচি চালু করতে পারছে না বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশের পাশে থাকার ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার ও শিল্প মালিকদের উদ্যোগের ধীরগতি দেখে তারাও ক্রমে হতাশ হয়ে পড়ছে এবং দফায় দফায় উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বাংলাদেশের শ্রম ইস্যুতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স বা জিএসপি সুবিধা সাময়িকভাবে বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে আমাদের বোধগম্য নয়, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের স্বার্থেই অতি দ্রুত যে উদ্যোগগুলো নেওয়া প্রয়োজন ছিল, সেগুলো নেওয়া হচ্ছে না কেন?
কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হলেও গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের শিল্পায়ন অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। শুধু পোশাকশিল্প নয়, অন্য অনেক শিল্পেই বাংলাদেশের অগ্রগতি যথেষ্ট ভালো। আর পোশাকশিল্পে এ দেশের অগ্রগতি তো সমপর্যায়ের অনেক দেশ রীতিমতো ঈর্ষার চোখেই দেখে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের শিল্প মালিকদের অধিকাংশের মধ্যেই এখনো মালিকানাসুলভ পেশাদারিত্ব গড়ে ওঠেনি। শ্রমিক স্বার্থ, কারখানার পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে তাঁদের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। বারবার তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে আমাদের সরকারগুলোও দীর্ঘদিন ধরে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে আসছে। সংগত কারণেই আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের শিল্প-কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ এসব কারখানার সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে তারা নিজেরাও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। তাই শিল্পায়নের স্বার্থে দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাংলাদেশের শিল্প-কারখানায় শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সরকার, শিল্প মালিক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা চাই, ন্যূনতম শর্তগুলো পূরণ করেই বাংলাদেশের শিল্পায়ন দ্রুত এগিয়ে যাক।

No comments

Powered by Blogger.