নারীচিত্র-বাঙালি নারীর মোড় ফেরার পর্ব by আমেনা মহসীন

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার সময়ে আমাদের এ ভূখণ্ডে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ এখানেও আছড়ে পড়ে এবং অনেককে অনুপ্রাণিত করে গৃহকোণের বাইরের জগতে টেনে আনে।
আমাদের ভূখণ্ডের অনেক নারী সে সময় কারা নির্যাতন সহ্য করেন। বেগম রোকেয়ার প্রভাবও আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করি। তিনি নারীর শিক্ষালাভের অধিকারের জন্য সোচ্চার ছিলেন এবং তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সমাজে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনমত প্রবল হতে শুরু করে। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পঞ্চাশের দশকের শুরুতে প্রকম্পিত রাজপথে আমরা দেখতে পাই নানা বয়সের অগণিত নারীকে। বলা যায়, ভাষা আন্দোলন ছিল মুসলিম নারী সমাজের মুক্তির নবদিগন্তে শামিল হওয়ার কালপর্ব। তবে জাতীয়তাবাদী এ ধারায় মূল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীই ছিল বেশি সংখ্যায়। কিন্তু একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম বাঁধ ভেঙে দিল। শ্রেণীর গণ্ডির ভেদরেখা তুলে দিয়ে হাজার বা লাখ নয়, বরং কোটি কোটি নারীকে নিয়ে এলো সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে। স্বাধীনতার চার দশক অতিক্রান্ত হওয়ার সময়ে একাত্তরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নানাভাবে আলোচনা ও মূল্যায়ন চলছে। নারীর ভূমিকা রয়েছে বিশেষ ফোকাসে। অনেকের বিবেচনায় নারীর জন্য এটা ছিল মোড় ফেরার পর্ব। এটা অবশ্যই রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত পর্বে তা রূপ নেয় সশস্ত্র যুদ্ধে। বিস্ময়করভাবে তাতে যুক্ত হয়ে পড়েন শহর, বন্দর ও গ্রামের অগণিত নারী। অনেকে লড়েন অস্ত্র হাতে জীবনবাজি রেখে। উপনিবেশবাদবিরোধী ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময়ে যা দেখা যায়নি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাধীন বাংলাদেশের সেই অনন্য সময়কে আমরা পরবর্তীকালে ধরে রাখতে পেরেছি কি-না। দলে দলে নারী এগিয়ে এলেন কঠিন সময় উপেক্ষা করে, এখন সমাজের সর্বস্তরে তারা তো নেই। কেন এমন অবস্থা তৈরি হলো? এর কারণ হিসেবে আমি বলব, স্বাধীনতার পরও সমাজ প্রচলিত পথেই চলতে চেয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল নারী ও পুরুষের মিলিত সংগ্রাম। আকস্মিকভাবেই নারী অনেকগুলো বাড়তি পদক্ষেপ নিয়ে পুরুষের সঙ্গে তাল মেলাল। তাদের এভাবে এগিয়ে চলার ধারা ধরে রাখার জন্য দরকার ছিল নতুন নতুন পদক্ষেপ। সশস্ত্র যুদ্ধের মতো সাহসও দরকার ছিল। কিন্তু রাষ্ট্র ও সমাজ তাদের জন্য পর্যাপ্ত স্পেস তৈরি করে দিতে প্রস্তুত ছিল না। প্রথম সমস্যা দেখা দেয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি বিষয়ে। যুদ্ধে নারী ও পুরুষের ভূমিকা হুবহু এক হওয়ার কথা নয়। যে যার অংশ পালন করবেন। নারী তার স্বামী কিংবা সন্তানকে রণাঙ্গনে পাঠিয়েছেন চোখের পানি আড়াল করে। আর নিজে সামাল দিয়েছেন সংসার। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছেন। এ সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহচররা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালিয়েছে। বাড়িঘর লুটপাট এমনকি জ্বালিয়ে দিয়েছে। নির্বিচারে হত্যার শিকার হয়েছেন অনেক নারী। ধর্ষিত হয়েছেন। কিন্তু এ অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নারীদের ওপর নির্যাতন ছিল বিশেষভাবে তীব্র। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, সেখানে অন্তত ৪৬০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানের জনগণের বেশিরভাগ ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। আমরা ধর্ষণের শিকারদের বীরাঙ্গনা হিসেবে অভিহিত করেছি। তারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, অন্যান্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের এভাবে চিহ্নিত করা ঠিক হয়েছে কি-না, সে প্রশ্ন বিভিন্ন সময়ে করা হয়েছে। সমাজ কি তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখেছে, না-কি কেবলই নিছক অত্যাচারের একজন শিকার হিসেবে গণ্য করেছে? প্রকৃতপক্ষে, নতুন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরুর সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করিনি, যা হবে পরিপূর্ণভাবে নারীর জন্য সহানুভূতিশীল। আমাদের দেশে ক্ষমতার বদল হয়েছে। কিন্তু নারীকে পরিপূর্ণভাবে ক্ষমতার অংশীদার করা না হলে তার দিন প্রকৃত অর্থে বদলায় না। আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজ কাঠামোতে নারী এখনও নিজের পূর্ণ অধিকারে শরিক নন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা ঘরের বাইরে অসম সাহসে চলে এসেছেন। কিন্তু তারপর তাদের ফেরত পাঠানো হলো গৃহকোণে। রাষ্ট্রীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যে বিভাজন ভেঙে গিয়েছিল, ক্রমে তা ফের মাথা তুলে দাঁড়াল। কোথাও কোথাও তা তো বেশ উঁচু।
তবে এর অর্থ কিন্তু চার দশকে নারীর অর্জনকে তুচ্ছ করা নয়। দল ও সরকার পরিচালনা করছেন নারী। কর্মক্ষেত্রে এখন লাখ লাখ নারীর দৃপ্ত পদচারণা। নারীর জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। মা ও শিশুমৃত্যু কমেছে। চাকরিতে নারীর জন্য কোটা নির্ধারণ করা রয়েছে এবং তা যাতে পালন করা হয় সেজন্য প্রশাসনে রয়েছে সচেতনতা। রাজনৈতিক দলের নানা স্তরে নারীর জন্য এক-তৃতীয়াংশ পদ নির্দিষ্ট রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জাতীয় সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন বেড়ে ৪৫ হয়েছে এবং তা আরও বাড়ানোর পক্ষেই রয়েছে প্রবল অঙ্গীকার। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ থেকে নারীদেরও পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে নারীর অধিকার রক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নানা ক্ষেত্রেও নারী অধিকারের ইস্যু গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে এবং উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত যে কোনো দেশের জন্য তা অনুসরণীয় হতে পারে। গত দুই দশকে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদে পর্যায়ক্রমে অধিষ্ঠিত রয়েছেন দু'জন নারী। তারা নিজ নিজ দলকেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন টানা প্রায় তিন দশক ধরে। আমাদের সমাজ দেশকে নেতৃত্ব প্রদানে তাদের এ অবস্থান মেনে নিয়েছে। ধর্মান্ধ শক্তি এজন্য যে নেতিবাচক মনোভাব নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সমাজ তা গ্রহণ করেনি। এসব নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। তৈরি পোশাক শিল্পে লাখ লাখ নারী কাজ করছেন। স্পষ্টতই কোনো করুণার বশবর্তী হয়ে নয়, নারী তার নিজ শক্তিবলেই ঘরের বাইরে আসছেন এবং সমাজের নানা ক্ষেত্রে অবদান বাড়িয়ে চলেছেন। আবার একই সঙ্গে এটাও বলতে হবে, আমাদের সমাজে উদার আচরণের উপাদান রয়েছে এবং তা শক্তি সঞ্চয় করছে।
কিন্তু তারপরও কিন্তু নারীর প্রতি বৈষম্য বাড়ছে। রাজনীতি-অর্থনীতিসহ সমাজের নানা অঙ্গনে যে নারীর ব্যাপক পদচারণা সেটা এখনও নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমিত। একাত্তরে মুক্ত হাওয়ায় চলে এসেছিলেন কোটি কোটি নারী। সমাজে নতুন গতি ও মাত্রা এনে দিতে পেরেছিলেন তারা। এখন তা নেই। সামাজিক শক্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে নয়, বরং ব্যক্তিগত চেষ্টাই এখনও সাফল্যের চাবিকাঠি। আবার যারা বেরিয়ে এসেছেন মুক্তির আলোয় তাদের জন্যও রয়েছে সমস্যা। একদল মেয়ে চাকরি করছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তাকে ঘর সামলাতে হচ্ছে। তারা যদি চাকরি না করেন তাহলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকে না, ঘরে মর্যাদাও থাকে না। এ অবস্থায় তাকে এক ধরনের নির্যাতন-নিগ্রহ মেনে নিতে হয়। আবার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মতো উদয়াস্ত চাকরি করেও তার ঘরের রান্না ও অন্যান্য দায়িত্ব পালন থেকে রেহাই মেলে না। তাদের আয় সংসারের কাজে ব্যয় করা হচ্ছে। পরিবারে বাড়ছে সচ্ছলতা। কিন্তু ঘরের কাজে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা তাদের পাশে দাঁড়ান না। এক কথায় শেয়ারিং ঘটে না। বাইরের জগতে গিয়ে নারী বুঝতে পারে, সে কতটা অবহেলিত ও বঞ্চিত। সমাজ তাকে এতদিন সোনার খাঁচায় বন্দি করে রেখেছে। যাবতীয় অত্যাচার-উপেক্ষা তাকে মুখ বুজে সহ্য করে যেতে হবে। প্রতিবাদী হলেই রক্ষা নেই। শুধু মুক্তির জন্য নয়, অর্থনৈতিক কারণেও পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী দু'জনের উপার্জন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। একজনের আয়ে এখন আর নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের সংসার চলে না। কিন্তু তারপরও বলব, পুরুষদের মানসিকতায় পরিবর্তন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নেই। অর্থাৎ মেয়েরা কর্মজগতে যতটা এগিয়েছেন সমাজ ততটা আগাতে পারছে না। মেয়েরা বাইরের জগতে এসেছে এবং অনেক সময় দিচ্ছে, কিন্তু তাতে তার ঘরের কাজের চাপ বিন্দুমাত্র কমেনি। একই সঙ্গে ঘরে-বাইরে সামলে চলতে হয় নারীকে। তৈরি পোশাক শিল্পে শান্তি বজায় রাখার জন্য শিল্প পুলিশ গঠনে আমাদের উদ্বেগের যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। এখানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠই নারী শ্রমিক এবং তাদের ক্ষোভ-উদ্বেগের কারণ হচ্ছে ন্যায্য বেতন-ভাতা না দেওয়া এবং অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা। এ সমস্যার সমাধান না করে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে ওঠা লাখ লাখ নারীর প্রতি এ কেমন আচরণ?
এর বাইরেও অনেক সামাজিক সমস্যা রয়েছে নারীর জন্য। আইন করেও ফতোয়া ও যৌন হয়রানি দমন করা যায় না। সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন নারী। অনেক ক্ষেত্রে সমাজের মানসিকতাই এমন যে, তা নারী ও পুরুষকে সমানভাবে মূল্যায়ন করে না। নারীর দোষ যেন একটু বেশিই। নারীর ক্ষমতায়নের কথা আমরা বলছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধান বলছে, নারী ও পুরুষের সমানাধিকার থাকবে। এটা করতে হলে পুরুষ বহু ক্ষেত্রে একচেটিয়াভাবে যেসব সুবিধা ভোগ করছে তা থেকে কিছু ছেঁটে ফেলতে হবে এবং দিতে হবে নারীকে। এভাবেই আসতে পারে সামাজিক মুক্তি। কেবল প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রী-সংসদ সদস্য হওয়া নয়, নারীর জন্য সমাজের নানা স্তরে আরও অনেক স্থান তৈরি করতে হবে। আমাদের মানবাধিকার ও ব্যক্তিগত আইন ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় সবগুলোই নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক। বিয়ে, সন্তানের ওপর অধিকার, সম্পত্তি সবকিছুতে মেয়েদের পেছনে রাখার চেষ্টা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফরমে মায়ের নাম লেখা হচ্ছে বাবার নামের পাশাপাশি। পাসপোর্টে থাকছে মায়ের নাম। এসব হচ্ছে নারী আন্দোলনের সুফল। কয়েক দশক ধরে অনেক সংগঠন এজন্য কাজ করে চলেছে। অনেক পুরুষের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। তারপরও বলব, পরিবর্তন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে ঘটছে না। অনেক মেয়েকে দেখছি কেবল একটু বাড়তি নিরাপত্তার জন্য পর্দা করছেন। ধর্মীয় কারণে পর্দা করলে তার যুক্তি থাকে। কিন্তু কেন তাকে সমাজ নিরাপত্তা দিতে পারবে না? সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরও কেন ফতোয়া চলছে? স্পষ্টতই কেবল আইনের পরিবর্তন দ্বারা নারীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশের একটি মানবিক সমাজ তৈরি করা যাবে না। এজন্য পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতাতেও পরিবর্তন আনা চাই। আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে পুরুষ ও নারী পাশাপাশি থাকবে পূর্ণ সমান অধিকার নিয়ে। রাজনীতিতে অনেক নারী সক্রিয়। মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন কয়েকজন নারী। কিন্তু আমাদের চাই রাষ্ট্রক্ষমতার সংজ্ঞা বদল। আমাদের অনেক কিছু বদল হয়েছে। কিন্তু একাত্তরের যে গৌরব অর্জনে নারীর ছিল অসামান্য অবদান, তাকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ আমরা অনেকাংশে হারিয়েছি। এখন বিপুলসংখ্যক নারীর হাতে অর্থ আসছে। তারা সংসারে অবদান রাখছেন। তার চলাচল আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। কিন্তু সমাজের কাঠামোগত কারণেই তার জন্য থেকে যাচ্ছে অনেক সমস্যা। তাকে বহুমুখী নির্যাতন সহ্য করে পথ চলতে হয়। সমাজ এখনও নারীবান্ধব হয়ে উঠতে পারছে না। যতটা সহনশীল হওয়া দরকার, ততটা হচ্ছে না। তবে আশাবাদের স্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এখন নারীর জন্য যে স্পেস তৈরি হচ্ছে, পরবর্তী প্রজন্ম তা আরও বাড়িয়ে নিতে পারবে। আমরা যদি গত চার দশকে অব্যাহত গণতান্ত্রিক পরিবেশ পেতাম, তাহলে হয়তো পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। আমরা পঁচাত্তরে বৈরী পরিবেশের মুখোমুখি হই। এরপর বারবার দেশে এসেছে সামরিক শাসন। স্বৈরশাসনও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চা হলে নারীর জন্যও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারত। তার এগিয়ে চলা হতো আরও মসৃণ।
আমরা চাই নারীর প্রকৃত অর্থে ক্ষমতায়ন। বৈষম্য থেকে মুক্তি। স্বাধীনতা আমাদের বড় অর্জন। নারী ও পুরুষের মিলিত সংগ্রামে আমাদের বিজয় এসেছে। স্বাধীনতার স্বপ্ন পরিপূর্ণভাবে এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এ স্বপ্নের একটি হচ্ছে নারীর মুক্তি এবং এজন্য সমাজের মনস্তত্ত্বে ও কাঠামোতে চাই পরিবর্তন।

আমেনা মহসীন : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক
সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.