সা ক্ষা ৎ কা র- চাইলে দেশের স্বার্থে এ জরিপ কাজে লাগানো যাবে: মঞ্জুরুল হক by ইফতেখার মাহমুদ

এই জরিপটি করা হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগ করে। গবেষণার ভাষায় এটিকে বলা হয় স্ট্র্যাটিফাইড সিস্টেমেটিক র্যা ন্ডম স্যাম্পলিং। আমাদের দেশের বিভিন্ন জরিপেও এটি সর্বজনস্বীকৃত ও ব্যবহূত এক গবেষণা পদ্ধতি।
সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নিয়মিতভাবে জরিপ করছে। ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কাসহ উন্নয়নশীল দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের দরকারে ও বিভিন্ন সংস্থা প্রয়োজনে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে জরিপ চালিয়ে থাকে। প্রথম আলো জনমত জরিপ ২০১২-র গ্রহণযোগ্যতাকে এভাবেই তুলে ধরেন দেশের বিশিষ্ট গবেষণা পরিচালনাকারী সংস্থা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক।
জরিপসংক্রান্ত গবেষণাকাজে দীর্ঘ ৩০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, এই জরিপ এমন একটি সময়ে করা হয়েছে, যখন এটি থেকে দেশ ও জনগণ সামগ্রিকভাবে উপকৃত হতে পারে। যেমন এই জরিপ থেকে সরকার উপলব্ধি করতে পারবে তাদের দুর্বলতাগুলো কোথায় এবং কোথায় তারা ভালো করেছে? তখন দুর্বলতা কাটানোর জন্য তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। আর যেখানে তারা সফল, সেই ক্ষেত্রগুলোয় আরও জোর দিয়ে কাজ করতে পারে।
মঞ্জুরুল হক বলেন, বিরোধী দলও তাদের সফলতা-ব্যর্থতা, জনপ্রিয়তা ও কার্যক্রম সম্পর্কে মানুষের মতামত বিবেচনায় নিয়ে এই জরিপকে কাজে লাগাতে পারে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা বুঝে তারা তাদের বিদ্যমান সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারে কিংবা চলমান কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোই জাতির হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। তাই নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দেওয়ার এবং ত্রুটি-বিচ্যূতি সংশোধন করার উদ্যোগ নিলে তা সার্বিকভাবে দেশ ও মানুষের মঙ্গল বয়ে আনবে।
এ ধরনের জরিপ থেকে নাগরিকদের লাভ হচ্ছে, তারা দেশ ও সমাজ নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত চিন্তাকে সমষ্টির সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নাগরিকদের মতামত জেনে নিজেদের মনস্থির করতে পারে। অর্থাৎ এই জরিপ থেকে সবাই লাভবান হতে পারে।
এ জরিপের পদ্ধতি কতটা বিজ্ঞানসম্মত এবং উন্নত দেশের জরিপের সঙ্গে এখানকার জরিপের কোনো পার্থক্য আছে কি না, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মঞ্জুরুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ অন্য উন্নত দেশগুলোয় নাগরিকদের ঠিকানা ও ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশাল ডিজিটাল তথ্যভান্ডার থাকে। জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেখান থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে উত্তরদাতা বাছাই করে সাক্ষাৎকার নিতে পারে। বাংলাদেশে সে সুবিধা নেই। তাই এখানে তথ্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে সরাসরি সাক্ষাৎকার নিতে হয়। মঞ্জুরুল হক বলেন, ১৫ থেকে ৩০ বছরের অভিজ্ঞ একটি বিশেষজ্ঞদল এ জরিপ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ৭০ জনের একটি দক্ষ কর্মিবাহিনী এ জরিপের তথ্য সংগ্রহ করেছে।
ওআরজি-কোয়েষ্টের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই জরিপটি প্রতিনিধিত্বশীল করতে আমরা সারা দেশকে সাতটি বিভাগে ভাগ করে শহর ও গ্রামাঞ্চল থেকে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নারী ও পুরুষ উত্তরদাতা দৈবচয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে বাছাই করেছি, যা পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে করা হয়েছে। কাজেই আমরা মনে করি, এই জরিপের ফলাফল পুরোপুরি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে।
বাস্তব ক্ষেত্রে এ ধরনের গবেষণার কোন প্রয়োগ কতটুকু হয় জানতে চাইলে মঞ্জুরুল হক বলেন, উন্নত বিশ্বে যথা যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সরকার এবং বিরোধী দল এই ধরনের জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে থাকে। জনমতের চাহিদা অনুযায়ী তারা নতুন কার্যক্রমও গ্রহণ করে থাকে। আমরা এটাও জানি, আমাদের দেশেও ইদানীং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজেদের কার্যক্রম সাজানোর জন্য এ ধরনের জরিপ করিয়ে থাকে।
মঞ্জুরুল হক বলেন, এই জরিপে যেহেতু সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও মতামতের প্রতিফলন উঠে এসেছে, সেহেতু সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো এই জরিপকে কাজে লাগিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারে।
 মঞ্জুরুল হক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড (অরকোয়েস্ট)

No comments

Powered by Blogger.