সরকারের চার বছর-প্রতিশ্রুতি পূরণে চাই আন্তরিকতা

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের চার বছর পূর্তিতে দেখা যাচ্ছে, অনেক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই পূরণ হয়নি। সরকারের ঝুলিতে সাফল্যও কম নয়; কিন্তু ব্যর্থতার ভারে সেসব অর্জন অনেকটাই ম্লান।
দুর্নীতি, প্রশাসন দলীয়করণ, সংসদ যথার্থ কার্যকর করতে না পারা, সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে সরকার তেমন উন্নতি ঘটাতে পারেনি; বরং দুর্নীতির রাহুগ্রাস ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র বিস্তৃত হয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনিশ্চয়তার গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বিগত চার বছরে সাতবার জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। চাল ছাড়া অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। অন্যান্য খরচও বেড়েছে মাত্রাহীনভাবে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় বেড়েছে। দুর্গতি বেড়েছে সীমিত আয়ের মানুষের। হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি ইত্যাদি বড় বড় দুর্নীতির ঘটনা সরকারের আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটা সহনীয় হলেও এ ক্ষেত্রে সরকারের আরও কিছু করার রয়েছে। সাগর-রুনি হত্যা, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া, বিশ্বজিৎ দাস হত্যার মতো ঘটনা সারাদেশের মানুষকে আলোড়িত করেছে। সংসদকে কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করা সম্ভব হয়নি। কারণ, বিরোধী দল অতীতের সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসেনি। সরকার এ ব্যাপারে কতটুকু আন্তরিক ছিল, সেটাও প্রশ্ন। মহাজোট সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে সমকাল পরিচালিত জনমত জরিপেও উলি্লখিত বিষয়ের অনেকগুলোতেই একই ধরনের মত পাওয়া গেছে। তবে শিক্ষা বিস্তার ও উন্নয়ন এবং কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে সরকার প্রশ্নাতীত সাফল্য অর্জন করেছে। জঙ্গি দমন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ডিজিটাল ব্যবস্থাকে তৃণমূল পর্যায়ে সম্প্রসারণ, দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমুদ্রসীমায় অধিকার অর্জন তথা সমুদ্রজয়সহ আরও কতিপয় বিষয়ে সাফল্যকে জনগণ সাধুবাদ দিয়েছে। বিশেষ করে, দারিদ্র্য হ্রাস এবং দরিদ্রদের আয় বৃদ্ধি ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির গতিশীলতার পরিচায়ক। ভারতের সঙ্গে অব্যাহত সম্পর্কোন্নয়ন প্রচেষ্টা ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন উদ্যোগ সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে। মহাজোট সরকারের উচিত হবে_ তাদের মেয়াদের শেষ বছর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি না করা, বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি যুক্তিগ্রাহ্যভাবে বিহিত করা। স্পর্শকাতর খুন ও নিখোঁজের ঘটনাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের মুখোমুখি করা, দলীয় লোকজনের টেন্ডারবাজির লাগাম টেনে ধরা এবং বিরোধী দলকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আস্থায় নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। সংসদকে সচল করার উদ্যোগের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা গড়ে তোলা। জনমত জরিপেও এর পক্ষেই অধিকাংশ মানুষ মত দিয়েছেন। আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যাপারে নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে যুক্তিগ্রাহ্য সময়ের মধ্যে স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করা যায়, সেটাও সরকারের আগামী দিনের বড় কর্তব্যকর্ম। সময় কম। সরকারকে এ সময়ের মধ্যে প্রাণপণে অপূর্ণ নির্বাচনী ওয়াদাগুলো পূরণের চেষ্টা করতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.