টিটি কলেজে সংঘর্ষ-এরাই তবে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক!

রাজধানীর টিচার্স ট্রেনিং (টিটি) কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা পিলে চমকানোর মতো খবর। কারণ এখানে যারা ছাত্র, তাদেরই আবার আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব পালন করার কথা।
অথচ মানুষ গড়ার কারিগররাই যখন সামান্য স্বার্থ-চিন্তা ও দলবাজির রাজনীতিতে জড়িত হয়ে দলাদলি এবং পরে লাঠালাঠিতে লিপ্ত হন, তখন যে কোনো সমাজসচেতন মানুষই জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে পারেন না। বড় রকমের কোনো আর্থিক লাভের কারণে বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একটি ইভেন্টে নাম লেখানো নিয়ে প্রথমে বচসা ও পরে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এখানে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার সার্বভৌমত্ব জাহির করার প্রচেষ্টাটাই প্রধান। কোন গ্রুপের পক্ষে এ ক্ষমতা এখন হেলে আছে, তা প্রমাণ করা ভবিষ্যৎ লাভকে নিশ্চিত করতে পারে বলেই উভয় গ্রুপ আহত হওয়ার মতো সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পেরেছে। অন্যদিক থেকে বলতে গেলে, এই সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র্র করে হুটহাট উত্তেজিত হয়ে লাঠালাঠি বাধিয়ে দেওয়ার মধ্যে আমাদের সমাজের অন্তর্মূলে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করার প্রমাণ মেলে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারুণ্য যে কোনো পন্থায় বিস্ফোরিত হতে পারে। কিন্তু তাই বলে যাদের ওপর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব, তাদের কাছ থেকে এ ধরনের দাঙ্গাবাজ মানসিকতা সমাজ আশা করে না। শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপে গত রোববার সংঘর্ষের কারণে কর্তৃপক্ষ সোমবার থেকে কলেজটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। এটি নিশ্চয়ই এখানে অধ্যয়নরতদের জন্য সম্মানের নয়। এর মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কী ধরনের শিক্ষা পেয়ে ও মানসিকতা নিয়ে আসছেন, সে সম্পর্কে মানুষের একটা গড়পড়তা নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক নয় কি! ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সেটা নিশ্চিত টিটি কলেজে অধ্যয়নরতদের ওপরই বর্তায়। কারণ তারা এখানে ছাত্র হলেও বস্তুত শিক্ষাদানের মতো মহৎ পেশাকে বেছে নিয়েছেন। একই সঙ্গে কলেজ প্রশাসনকেও এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটতে পারে, তার জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। শিক্ষকদের মধ্যেই যদি অপরকে সম্মান করা ও দায়িত্বশীল আচরণ করার মানসিকতার অভাব ঘটে, তাহলে তারা আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কী ধরনের শিক্ষা দেবেন, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.