জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ

সংকট মোকাবিলায় অবিলম্বে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত দেন।গতকাল সোমবার রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে সেন্টার ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (সিএসডিএস) এই সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সিএসডিএসের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আমছা আমিন।


সাবেক সেনাপ্রধান নূরউদ্দীন খান, হারুন-অর-রশিদ, সেনাবাহিনীর বর্তমান চিফ অব জেনারেল স্টাফ লে. জেনারেল মইনুল ইসলাম বক্তব্য দেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম আবদুল হাফিজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লে. জেনারেল (অব.) এ টি এম জহিরুল আমল। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলা এসব তথ্য জানিয়েছে। অনুষ্ঠানে এটিএন বাংলা ছাড়া অন্য কোনো গণমাধ্যমের কর্মী আমন্ত্রিত ছিলেন না।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন পুরোপুরিই একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। একটি সঠিক ও কার্যকর কৌশল প্রণয়নের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকার, কৌশলগত ও নিরাপত্তা সংস্থা, সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে।
বর্তমানে নিরাপত্তা হুমকি শুধু পরিচিত শত্রুরাই নয়। বরং দেশের ভেতরের ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয় নিরাপত্তা হুমকি হতে পারে। যেমন: বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, মানব পাচার, জলবায়ুজনিত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী, ধ্বংসাত্মক অস্ত্র ছড়িয়ে পড়া, অর্থনৈতিক অপরাধ, সাইবার আক্রমণ ইত্যাদি।
এতে বলা হয়, যদিও বেশির ভাগ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক হুমকির উপকরণই বেসামরিক, তবে সেগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে সামরিক হস্তক্ষেপ বা সাহায্য প্রয়োজন।
আলোচনায় লে. জেনারেল মইনুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে ধর্মীয় গোঁড়ামি, ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ীদের জায়গা হওয়া ঠিক নয়। ধর্মব্যবসায়ীরা এমন চালাক হয়ে গেছে যে এরা ধর্মান্ধদের খুঁজে খুঁজে বের করে। এই ব্যক্তিরা আসলে বুঝতে পারে না তাদের ব্যবহার করা হয়েছিল বিদ্রোহ পরিকল্পনা করার সময়। তাদের অনেকেই জানে না তারা কী করছে। এই কথাগুলো বলার সময় আসছে।’
নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যরা সেনাবাহিনীর ভেতরেও সক্রিয়। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকেই। এসব কুচক্রী ধর্মব্যবসায়ী পরিকল্পিতভাবেই ধর্মভীরু সেনা কর্মকর্তাদের বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে। তবে এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না।
নূরউদ্দীন খান বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল যেন দল-মতের ঊর্ধ্বে হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে এটা কোনো কাজে আসবে না।
হারুন-অর-রশিদ জাতীয় সংকট মোকাবিলায় জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বড় সংকট মোকাবিলায় কোনো সমন্বয় থাকে না। এ জন্য একটা নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। এটা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, পানি নিরাপত্তা—সব সংকটেই কাজ করবে।

No comments

Powered by Blogger.